বর্ধমান স্টেশনে ঢোকার মুখে অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনের ভেঙে পড়া অংশ। নিজস্ব চিত্র
ছাদ মেরামতির কাজ হচ্ছে। স্টেশন জুড়ে চলছে সৌন্দর্যায়নও। তার মধ্যেই ভেঙে পড়ল বর্ধমান স্টেশনে ঢোকার মুখের একটি ঝুল-বারান্দা। শনিবার রাত ৮টার পর থেকে কয়েক দফায় ওই বারান্দা ও তার স্তম্ভগুলি ভেঙে পড়ে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, ঘটনায় দু’জন আহত হন। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বর্ধমান স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখে পুরনো দোতলা ভবনে ছিল ওই বারান্দাটি। সাধারণত সেখানে হকার ও ভবঘুরেদের ভিড় থাকে। রেল সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্টেশন পরিদর্শন করেন হাওড়া ডিভিশনের কর্তারা। সেই কারণে জনতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ঘটনার সময়ে ওই জায়গায় বিশেষ ভিড় ছিল না। ঘটনাস্থলে হাজির থাকা কয়েক জনের দাবি, রাত ৮টা ৮ মিনিটে আচমকাই একটি স্তম্ভ কেঁপে ওঠে। ইট-সুরকি খসতে শুরু করে সেটি থেকে। মুহূর্তে ধসে পড়ে ইট-কংক্রিট-লোহার অনেকটা কাঠামো। স্টেশনের নাম লেখা সাইনবোর্ডের একাংশ খসে যায়। ধোঁয়া-ধুলোয় ঢেকে যায় এলাকা।
দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে তিন সদস্যের কমিটি গড়া হচ্ছে বলে জানান পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী। পরে ডিআরএম (হাওড়া) ইশাক খান বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটিকে দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। গত নভেম্বরেই পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মে দু’টি ট্রেন দাঁড়ানোয় যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে এক শিশু-সহ জনা এগারো জখম হন।
প্ল্যাটফর্মের ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বারান্দা লাগোয়া থামগুলি যে নড়বড় করছে, শুক্রবারেই তা তাঁদের নজরে পড়েছিল। সে কথা তাঁরা মিস্ত্রিদের জানিয়েওছিলেন। মূল গেটের মুখের একটি বইয়ের দোকানের কর্মী সন্তোষ মণ্ডল বলেন, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে পর পর তিন বার ভেঙে পড়ল বারান্দা ও থামগুলো। প্রথম বার ভাঙার পরেই এক জন চাপা পড়েছেন দেখে ছুটে গিয়ে তাঁকে টেনে বার করি। তার পরেই আবার এক দফা ভেঙে পড়ে। তখন ভয়ে সরে যাই।’’
স্টেশন ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ার বিভিন্ন মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
আর এক প্রত্যক্ষদর্শী রেখা কর্মকার বলেন, ‘‘যে জায়গাটা ভেঙে পড়েছে, সেখানে আমরা দশ-পনেরো জন রাতে থাকি। আজ আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যিস সরিয়ে দিয়েছিল! না-হলে কী হত ভাবতেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ও দমকল ঘটনাস্থলে যায়। রেল পুলিশ এবং আরপিএফের সঙ্গে উদ্ধারকাজে নামে তারা। ধ্বংসস্তূপ সরানো শুরু হয় রাত ১০টা থেকে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘রেলের কর্তারা রাতেই আসছেন। তাঁরা দেখবেন, ওই ভবনের আর কোন কোন অংশ বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে এবং কেন এই ঘটনা ঘটল।’’
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের দেবু টুডুর অভিযোগ, ‘‘আগেই রেলকে জানিয়েছিলাম, ওই ভবনটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রেল তাতে গুরুত্ব দিলে এই বিপদ ঘটত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy