বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল।
যে কাজ করার কথা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর, সেই কাজই করানো হচ্ছিল মানসিক হাসপাতালের সুস্থ রোগীদের দিয়ে। বিনিময়ে সেই রোগীদের দেওয়া হত পাঁচ, দশ, বিশ টাকা। এ ভাবেই কারও কারও কাছে বেশ কয়েক হাজার টাকা জমে গিয়েছিল। সেই টাকাও ধার নিয়ে আর শোধ দিচ্ছেন না চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশ।
বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল ছাড়াও এমন অভিযোগ উঠেছে কলকাতার পাভলভ হাসপাতাল ও লুম্বিনী পার্কের কর্মীদের বিরুদ্ধেও। অক্টোবরের মাঝামাঝি বর্ধমানের গুসকরার এক বাসিন্দা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সময় এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার প্রশান্ত চৌধুরী বলছেন, ‘‘ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ আর মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরার বাসিন্দা প্রদীপ মিত্র বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে আক্রান্ত হয়ে ছ’বছর বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ছিলেন। ভর্তির তিন বছরের মধ্যে তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ি যেতে রাজি হননি। মাসখানেক আগে পরিবারের লোকজন ফের তাঁকে নিতে আসেন। সেই সময়ে প্রদীপ জানতে চান, যে টাকা তিনি ধার হিসেবে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের দিয়েছিলেন, সেই টাকার কী হবে?
এর পরে প্রদীপ হাসপাতালের সুপারকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানান। অভিযোগ পেয়ে ওই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে এবং এই ধরনের কাজ থেকে সমস্ত কর্মীদের দূরে থাকার নির্দেশ জারি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রদীপ ৫-৭ জন কর্মীকে সব মিলিয়ে ধার দিয়েছিলেন ১৪ হাজার ৫৪০ টাকা। সূত্রের খবর, বিষয়টি জানাজানি হতেই দু’জন কর্মী টাকা ফেরতও দিয়েছেন।
মানসিক হাসপাতালে সুস্থ হওয়া আবাসিকদের নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার রত্নাবলী রায়। তিনি বলছেন, ‘‘নিজেদের কাজ না-করে আবাসিকদের দিয়ে কেন কাজ করিয়ে নেওয়া হবে? এমনটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে, এটা শুধু বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ঘটছে এমনটা ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। কলকাতার হাসপাতালেও এমন ঘটনা ঘটছে।’’
পাভলভ হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদের দাবি, ‘‘আমাদের হাসপাতালে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ একই দাবি লুম্বিনী পার্ক কর্তৃপক্ষেরও। আর প্রদীপ বলছেন, ‘‘সামান্য টাকার বিনিময়ে আমাদের অনেককে দিয়েই বাসন মাজা, কাপড় কাচা-সহ নানা কাজ করিয়ে নেওয়া হত। তদন্ত করে দেখলেই সব সত্যি বেরিয়ে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy