আগুনে পুড়ে গিয়েছে আবাসনের একটি ঘরের আসবাবপত্র। নিজস্ব চিত্র
তাঁদের কাঁধে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব। অথচ, গত কয়েক দিন ধরে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই ঘুম ছুটেছে সেই পুলিশকর্মীদের। ঘটনাস্থল ব্যারাকপুরের লাটবাগানের পুলিশ আবাসন। কখনও মোটরবাইক, কখনও স্কুটার, কখনও বা চার চাকার গাড়ি— গত প্রায় এক মাস ধরে আগুন-আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল সেখানে। আতঙ্ক চরমে তুলে শুক্রবার আগুন লাগল আবাসনের একটি কোয়ার্টার্সে।
আগুনে ছাই হয়ে গিয়েছে একটি ঘরের আসবাব থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র। বাড়ির লোকেরা সময় মতো দেখে ফেলায় বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচেছে কোয়ার্টার্সটি। তবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে আশপাশের কোয়ার্টার্সে। পুলিস-প্রশাসনের উচ্চ স্তরে বিষয়টি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। নিরাপত্তা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা।
২০০৪ সালের জানুয়ারিতে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে ছড়িয়েছিল এমন আতঙ্ক। কেউ বা কারা বাড়ির ভিতরে সকলের অগোচরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। একটি এলাকা থেকে ক্রমশ আশপাশের এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়ে। এক সময়ে রটে যায়, অদৃশ্য ‘ফায়ারম্যান’ রয়েছে ঘটনার পিছনে।
রহস্যের সমাধান করতে না পারে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘোষণা করে, যার বাড়িতে আগুন লাগবে, গ্রেফতার করা হবে তাঁকেই। তার পরেই পাকাপাকি থেমে যায় আগুন-কাণ্ড। লাটবাগানের এই রহস্যের পিছনে কী রয়েছে, তার তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
ব্যারাকপুরের লাটবাগান রাজ্যের পুরনো পুলিশ আবাসনগুলির মধ্যে একটি। ব্রিটিশ আমলের এই আবাসনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকশো কোয়ার্টার্স। এখানকার বিভিন্ন থানা তো বটেই, বিভিন্ন ব্যাটেলিয়নে কর্মরত পুলিশকর্মীরাও লাটবাগানের কোয়ার্টার্সে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে কোয়ার্টার্সগুলির বেহাল দশা ছিল। সম্প্রতি হাল ফিরেছে আবাসনে। তার কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয়েছে আগুন-আতঙ্ক।
আবাসনের ৩৫ নম্বর বিল্ডিংয়ের এক নম্বর কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা অর্চনা দাস বলেন, ‘‘শুক্রবার কেউ কাপড় বা অন্য কিছুতে আগুন লাগিয়ে জানলা দিয়ে ঘরের মধ্যে ছুড়ে দেয়। সে সময়ে ঘরে কেউ ছিলেন না। তাঁরা যতক্ষণে জানতে পারেন, ততক্ষণে ওই ঘরের সব কিছু ছাই হয়ে গিয়েছে।’’
অন্য একটি কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা শতাব্দী আচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ আবাসনেরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি এমন হয়, তা হলে কী ভাবে বাচ্চাদের নিয়ে থাকব ভেবেই ভয় করছে। আমরা প্রশাসনের সব জায়গায় জানিয়েছি।’’ শতাব্দী জানান, এক বাসিন্দার রান্নাঘরেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আবাসনের এক বাসিন্দা আলেয়া সরকার বলেন, ‘‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে আবাসনের নীচে রাখা আমাদের গাড়িতে কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়িটির কভার পুড়ে যায়। এক বাসিন্দা ছুটে এসে সকলকে ডেকে জল ঢেলে আগুন নেভান। এর আগেও ৮-১০টি গাড়িতে একই ভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ আর এক বাসিন্দা সীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে দুষ্কৃতীদের একটি দল আমাদের আতঙ্কিত করতে চাইছে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য কী, বুঝতে পারছি না। পুলিশকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।’’
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, কোয়ার্টার্সের যে দিকে টিটাগড়, সে দিকের পাঁচিল যথেষ্ট নিচু। তাঁদের ধারণা, সেই দিক দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢুকছে। তবে এর পিছনে বাইরের লোক রয়েছে না অন্য কেউ, তা জানেন না কেউই। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন শুধু বলেছেন, ‘‘কী ঘটছে, কারা করছে, আমরা সব কিছুই তদন্ত করে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy