বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যোগীর হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি। —ফাইল চিত্র।
আসবেন, তিনি আসবেন। দিনভর চলল নাটক। কিন্তু তিনি এলেন না। দৃশ্যত হতাশ দর্শক মাঠ ছাড়লেন বেলা শেষে। এক কথায় এই ছিল রবিবাসরীয় দুই দিনাজপুরের চিত্র।
এ দিন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে দু’টি সভা করার কথা ছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য প্রশাসন প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যোগীর হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, বিজেপির তরফে রাজ্যে যোগীর সফরের কথা জানানো হলেও উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছু জানায়নি। বালুরঘাটে তাঁর জন্য যে হেলিপ্যাড চিহ্নিত করেছিল বিজেপি, তা যোগীর মতো ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়। আগেই বিজেপি নেতৃত্বকে সে কথা জানানো হয়েছিল। উত্তর দিনাজপুরের প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, রায়গঞ্জে বিএসএফের যে হেলিপ্যাড ঠিক করে ছিল বিজেপি, তা-ও যোগীর নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত নয়। অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দেয়নি বিজেপি।
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র অবশ্য বক্তব্য, ‘‘দলীয় কর্মসূচির অনুমতি দল চায়। নিয়ম মেনেই তা চাওয়া হয়েছিল। দলীয় কর্মসূচির জন্য সরকার কেন অনুমতি চাইবে?’’
এ দিন সকালেই যোগীকে আনতে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বেলা সোয়া ১১টা নাগাদ বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল যোগীর। সেখান থেকে বালুরঘাট ঘুরে আসার কথা ছিল রায়গঞ্জে। বালুরঘাটে বিজেপি কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, নেতারা যখন আগেই জানতেন যে, হেলিপ্যাডের অনুমতি নেই, তখন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা জানানো হল না কেন? পরে একটি সভারও আয়োজন হয়। যেখানে ফোনে মিনিট দশেক বক্তৃতা করেন যোগী।
বালুরঘাটে যখন এই দৃশ্য, রায়গঞ্জে তখন দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকারের নেতৃত্বে সভার প্রস্তুতি তুঙ্গে। যোগীকে আনতে দেবজিৎ রওনাও হয়ে যান হেলিপ্যাডের উদ্দেশ্যে। পরে জানা যায়, সে সময় সেখানে পর্যালোচনা করতে এসেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকেরা। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাগডোগরায় দিলীপবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের জন্য বাংলায় আসতে পারলেন না যোগী।’’ প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ নাটকীয় ভাবে সভায় জানানো হয়, যোগী আসতে পারছেন না। ফোনে ভাষণ দেবেন।
বালুরঘাটে যা বলেছিলেন, রায়গঞ্জেও কার্যত সে কথাই বলেন যোগী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বাঁচাও সভায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসেছিলাম। কিন্তু ওখানকার প্রশাসন তৃণমূলের কর্মীদের মতো আচরণ করছে। বাংলায় গণতন্ত্রকে হত্যা করছেন মমতা।’’
তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্যের কটাক্ষ, ‘‘যোগী যে আসবেন না, তা আগেই জানত বিজেপি। আর প্রশাসন হেলিপ্যাডের অনুমতি দেয়নি। এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ দিন জানান, লোকসভা ভোটে দলের ইস্তাহার কেমন হবে, তা জনতার কাছ থেকে জানতে দেশে ৩০০টির মতো ‘হাইটেক এলইডি’ রথ ঘোরাবে বিজেপি। বিজেপিরই একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এক বার রথযাত্রা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ঘুরপথে সেই চেষ্টা করছেন নেতৃত্ব। শাহ অবশ্য বলেন, ‘‘এটি ইস্তাহার নিয়ে মতামত নেওয়ার রথ। তবে দিদি এটাও বন্ধ করে দিতে পারেন!’’
(সহ প্রতিবেদন— সৌমিত্র কুণ্ডু, গৌর আচার্য, অনুপরতন মোহান্ত, দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy