Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাহিনীর হাতে পাহাড়ি শিশুর জন্য চকলেট

শুধু শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বই নয়, কোথাও আবার টানা বন্‌ধে বিপর্যস্ত পরিবারের কোনও জরুরি চাহিদা কিংবা কোথাও যাতায়াতের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। কারও ভর্তির জন্য শিলিগুড়িতে নিয়ে গিয়ে ট্রেন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে মোবাইলের রি-চার্জ কুপন ভরে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০৯
Share: Save:

পাহাড়ি গ্রামের রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। পথের পাশে জড়োসড়ো শিশু মুখ লুকিয়েছে মায়ের পিছনে। হঠাৎই বাহিনীর কেউ এগিয়ে এল তার দিকে। ডেকে কাছে নিয়ে মুঠো খুলে দিল তার সামনে। মুঠো ভরা চকলেট। ইতস্তত করে সেই দিকে এগিয়ে গেল ছোট্ট হাত।

শুধু শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বই নয়, কোথাও আবার টানা বন্‌ধে বিপর্যস্ত পরিবারের কোনও জরুরি চাহিদা কিংবা কোথাও যাতায়াতের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। কারও ভর্তির জন্য শিলিগুড়িতে নিয়ে গিয়ে ট্রেন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে মোবাইলের রি-চার্জ কুপন ভরে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

প্রায় ৬০ দিন আগে শুরুটা হয়েছিল আগুন, গুলি আর অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের ডাকের মধ্যে দিয়ে। সেই বন্‌ধের মধ্যে এখন এমন ছবিও দেখছে পাহাড়।

একই সঙ্গে টহলদার বাহিনীর সঙ্গে পুরনো জিপসি কারের মাথায় বসানো স্বয়ংক্রিয় কার্বাইনও দেখা যাচ্ছে। তবে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা একান্তে জানান, পুলিশ যে পাহাড়ে শান্তি, স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতেই উৎসাহী, প্রশাসনের তরফ সেই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে জনসংযোগ বাড়িয়ে। পুলিশ বোঝানোর চেষ্টা করছে, নিরপরাধদের সাহায্য করতেই প্রস্তুত তারা।

সেই পুলিশকর্তার দাবি, ধীরে ধীরে তা গ্রহণও করছেন পাহাড়বাসী। কী ভাবে? তাঁর বক্তব্য, গত সাত দিনে লাগাতার তল্লাশি চালিয়ে পাহাড়ে হামলা, হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে কোথাও বাধা পায়নি বাহিনী। চকবাজার থেকে নারী মোর্চার নেত্রীকেও বিনা বাধায় গ্রেফতার করা হয়েছে। চার দিন ধরে বিনা বাধায় পাতলেবাসে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। ইতিমধ্যেই প্রচুর জলপাইরঙের পোশাক, সেনাদের মতো বুটজুতো, শতাধিক খুকুরি পাতলেবাসের নানা এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে তারা।

তবে কাজটা অত সহজে হয়নি বলে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা। গত ২২ জুন শিলিগুড়িতে সর্বদল বৈঠক হওয়ার পরে একঝাঁক নতুন অফিসারকে পাহাড়ে পাঠানো হয়। তার পরে পরিস্থিতি দেখতে পাহাড়ে যান খোদ ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। সূত্রের খবর, পাহাড়ে সন্ধ্যা হলেই পুলিশের কাজে ঢিলে দেওয়ার মনোভাব বন্ধ করার নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গে গ্রামে-গঞ্জে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরামর্শও দেন।

রবিবার রাজ্য পুলিশের এক আইজিকে দেখা গেল শিলিগুড়ি থেকে কয়েক বাক্স চকলেট কিনছেন। তিনি জানান, কত দিন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। ওদের মন খারাপ। তাই ওদের জন্য চকলেট ।

আদৌ কি কাজ হচ্ছে এ ভাবে? পাহাড়ের লোকজন এই নিয়ে বিশেষ কথা বলতে চাইছেন না। তবে তাঁরা যে আগের মতো পুলিশ দেখলেই প্রতিরোধের পথে যাচ্ছেন না, সেই ছবিটাও দেখা যাচ্ছে। মোর্চার একাধিক নেতাও মানছেন, গত দু’তিন সপ্তাহে পাহাড়ের পুলিশ-বিদ্বেষ অনেকটাই কমেছে। আর সে জন্যই তাঁরা দ্রুত আলোচনায় বসে সব মিটিয়ে নিতে চাইছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE