প্রতীকী ছবি।
লোকসভা ভোটের মুখে বেআইনি অস্ত্রের বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক মহল। কড়া নজরদারি, দফায় দফায় পুলিশকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের পরেও এ যাবৎ নির্বাচনের আগে শিল্পাঞ্চলে অস্ত্রভাণ্ডারের খতিয়ান এবং সাম্প্রতিক কালে উদ্ধার হওয়া বেআইনি অস্ত্র ভাবাচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের। তার মধ্যেই এ বার নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য, ‘নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ ভোট’।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ও ২০১৪-র লোকসভা ভোট—ওই দু’বছরে পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী খুনের সংখ্যা ছিল ১৪১। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছিল ওয়ান শটার। মুঙ্গের থেকে আসা দেশি রিভলভার বা নকল নাইন এমএম পিস্তলের পাশাপাশি এই শিল্পাঞ্চলে ওয়ান শটারের বাজার চিরকালই তুঙ্গে। পুলিশই বলছে, অস্ত্র কারবারিদের বিহার-বাংলা ‘লিঙ্কম্যানেরা’ কলকাতার আশপাশে ওয়ান শটার তৈরির কারখানা বানাচ্ছে।
প্রশাসনের কর্তাদের কথায়, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ‘ফ্রিঞ্জ’ জোন। ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা। ব্যারাকপুর ও দমদম, দু’টি লোকসভা কেন্দ্র মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা ২৭ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৩৬। টিটাগড়, কামারহাটি, জগদ্দলের মতো অসংখ্য ঘিঞ্জি এলাকা এবং তাতে ভুলভুলাইয়ার মতো রাস্তা দুষ্কৃতীদের মরূদ্যান। তাদের লুকিয়ে থাকার জন্য এলাকাটি যেমন আদর্শ, তেমনই এক বার গঙ্গা পেরিয়ে গেলে আর দুষ্কৃতীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। শিল্পাঞ্চলের সীমানা এলাকা এবং কামারহাটি-জগদ্দলে ওয়ান শটারের বাজার ও কারখানার হদিস অনেক বারই পুলিশ পেয়েছে। ২০১১ সালের জুন মাসে কামারহাটিতে একটি বড় অস্ত্র কারখানার খোঁজ মিলেছিল।
পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গত কয়েক মাসে কামারহাটি, আগরপাড়া ও জগদ্দলে বাড়ির পিছনে লেদ কারখানায় বা বন্ধ রং কারখানার আড়ালে অস্ত্র তৈরির সন্ধান মিলেছে। নির্বাচনের আগে বাড়তি কারিগর দিয়ে ‘কাজ তোলার’ চমকপ্রদ তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। এই লেদ কারখানায় তৈরি ওয়ান শটার বা পাইপগানের গুলিও সহজলভ্য। পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের থ্রি-নট-থ্রি রাইফেলে যে গুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও এতে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ৭.৮৬ ক্যালিবারের পিস্তলের গুলিও ব্যবহার করে অনেকে। ব্যবহৃত গুলির খোলে বারুদ ঠেসে রিফিল করা হয় একেবারে দেশীয় প্রক্রিয়ায়। গুলির মুখের সরু অংশটা সিল করে দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে এক-আধটা গুলি পাইপগানের মধ্যেই যে ফাটবে না, সেই গ্যারান্টি না থাকলেও সস্তার এই আগ্নেয়াস্ত্র পথে বসিয়েছে মুঙ্গেরের ঝাঁ-চকচকে নাইন এমএম-কে।’’
অস্ত্র পাচারের অভিযোগে এক সময়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিল শিল্পাঞ্চলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী ইমতিয়াজ। তার দাবি, ‘‘গত এক দশকে শিল্পাঞ্চলের অস্ত্র কারখানাগুলির জন্য মুঙ্গেরের অস্ত্র ব্যবসা মার খেয়েছে। তবে পুলিশি তল্লাশির জেরে অনেকেই কারখানা গুটিয়ে ফেলেছে।’’ দুষ্কৃতীদের পছন্দের এই ওয়ান শটারের চলতি নাম ‘কাট্টা’। ভোটের বাজারে তা জনপ্রিয়।
এমনিতেও এ বার ব্যারাকপুরে ভোট নিয়ে উত্তেজনা চরমে। তৃণমূলের অর্জুন সিংহ বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনিক মহলেও। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত ৬০টি বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছি। গ্রেফতার হয়েছে কয়েক জন। লাগাতার তল্লাশি চলছে। এ বারের ভোট শান্তিপূর্ণ করার প্রয়াস নিয়েছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy