শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
নেই তাই খাচ্ছ, থাকলে কোথায় পেতে...।
স্কুলের শিক্ষকপদের ‘কনভার্সন’ বা রূপান্তর নিয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে এই লোকপ্রচলিত ধাঁধার সুর শুনে শিক্ষা শিবির থেকে স্কুলশিক্ষা দফতর সকলেই হতভম্ব! শিক্ষামন্ত্রী সোমবার জানান, শিক্ষকপদের রূপান্তর নিয়ে ১৯৯৪ সালের বিধির এখন আর কোনও অস্তিত্বই নেই। তৃণমূল সরকার আসার পরে পরেই এই বিধি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর দাবি, যা আদৌ নেই, সেই বাতিল বিধি মেনেই পদ রূপান্তর করা হয়েছিল ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলে। তাই সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই বিধি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া হল বলে সাফ জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
১৯৯৪ সালে বাম সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকপদের অনুমোদন থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেই পদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষক নেওয়া যেতে পারে। তবে স্কুলের শিক্ষকপদের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকা চাই। এটাই ‘টিচার পোস্ট কনভার্সন’ বা শিক্ষকপদ রূপান্তর। এই ক্ষমতা দেওয়া হয় জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-দের। এ ক্ষেত্রে স্কুলশিক্ষা দফতরের অনুমতি লাগে না। তবে বাড়তি টাকা খরচে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন।
এ দিন বিকাশ ভবনে জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই) এবং দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র প্রতিনিধিও ছিলেন। পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘কনভার্সনের ক্ষমতা অনেক দিন আগে চলে গিয়েছে। আর কনভার্সন করতে পারবেন না। নেই তো করবে কী? এই সরকার আসার পরে ২০১২-তেই এটা বাতিল হয়েছে।’’ মন্ত্রী জানান, ডিআই-রা এখনও যদি এই বিধি মেনে চলেন, তা হলে বেআইনি কাজ করছেন। তাঁর নির্দেশ, এ বার থেকে স্কুলের পরিচালন সমিতি শূন্য পদে নিয়োগের প্রস্তাব ডিআই-এর কাছে পাঠালে তা জেলাশাসক ও স্কুলশিক্ষা কমিশনারেটকে জানাতেই হবে।
শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশ বিস্মিত। ২০১২-’১৩ সালে স্কুলশিক্ষা দফতরে কর্মরত ছিলেন, এমন এক পদস্থ আধিকারিক জানান, লিখিত বা মৌখিক ভাবে এই ধরনের কোনও নির্দেশই দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: শূন্য পদে গন্ডগোল, সতর্কতা-চিঠি পরিদর্শকের
বৈঠকের নির্যাস
• শিক্ষক পদ রূপান্তর (কনভার্সন) বাতিল।
• স্কুল থেকে পাওয়া শূন্য পদের তালিকা পৌঁছবে ডিআই-এর কাছে। তা দেখাতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও স্কুলশিক্ষা কমিশনারেটে।
• স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ডিআই-দের নিয়মিত বৈঠক।
• সমস্যার শুরুতেই মেটানোর চেষ্টা চালাতে হবে ডিআই-দের। প্রয়োজনে মিলবে প্রশাসন ও স্কুলশিক্ষা দফতরের সহায়তা।
• ৫ অক্টোবরের মধ্যে স্কুলের পরিকাঠামো, পড়ুয়া ও শিক্ষকের সংখ্যা, শূন্য পদের রিপোর্ট দিতে হবে দফতরে।
শিক্ষা কমিশনারেটের বক্তব্য, ২০১১ সালের পরেও এই নিয়ম মেনে বহু স্কুলে শিক্ষকপদ রূপান্তরিত করা হয়েছে। এমনকি এই সরকারের আমলে শিক্ষক নিয়োগ না-করে প্রচুর স্কুলকে যে-ভাবে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে, সেখানে শিক্ষক-ঘাটতি সামাল দিতে এই রূপান্তরই ছিল প্রধান হাতিয়ার।
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দু’মাস আগেও কনভার্সন হয়েছে। এখনও তা বহাল আছে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের অভিযোগ, এসএসসি-তে শূন্য পদের কথা জানানোর পরে রূপান্তর করা যায় না। কিন্তু এই আমলে সেটা হয়েছে। এবং বেআইনি ভাবে অনেককে যুক্ত করা হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে জানানো হয়, সব জেলাতেই শূন্য পদে কমবেশি গোলমাল আছে। ডিআই-রা শূন্য পদের যে-‘প্রায়র পারমিশন’ (পিপি) পাঠিয়েছেন, গলদ তাতেই। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই ডিআই-রা তথ্য খতিয়ে না-দেখে সই করে দেন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ডিআই-দের যোগাযোগ বাড়ানোর এবং ডিএম, এসডিও, বিডিও-দের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে-সব স্কুলে দাড়িভিট স্কুলের মতো পদ-সমস্যা আছে, ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানকার ডিআই-দের রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্কুল কমিশনারেটে। কোন স্কুলে ক’জন শিক্ষক, শূন্য পদ কত, স্কুলের পরিকাঠামো কেমন— তা জানাতে হবে ৫ অক্টোবরের মধ্যে।
বৈঠকে ইসলামপুরের ঘটনায় ফের আরএসএস চক্রের কথা তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য ডিআই-দের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy