Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লিফট চলল না, প্রসব র‌্যাম্পেই

দু’কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে শনিবার রাতে টোটো এসে থামল সাগরদিঘি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সামনে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে বেশির ভাগ এলাকায় ডুবে রয়েছে অন্ধকারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তরুণী। মা বলছেন, ‘‘এই তো চলে এসেছি। কাছেই হাসপাতাল।’’ দিদির সান্ত্বনা, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে। আর একটু সহ্য কর।’’ চালককে স্বামীর অনুরোধ, ‘‘ভাই আর একটু জোরে চালাবেন?’’

দু’কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে শনিবার রাতে টোটো এসে থামল সাগরদিঘি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সামনে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালে বেশির ভাগ এলাকায় ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। মোবাইলের আলো জ্বেলে প্রসূতিকে কোলে করে নামিয়ে পরিজনদের শুনতে হল, ‘‘জরুরি বিভাগ চার তলায়, প্রসূতি বিভাগ তিন তলায়।’’

লোডশেডিংয়ে লিফটও চলছে না। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির টুম্পা বিবিকে র‌্যাম্প দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তিন তলায়। কিন্তু প্রসূতি বিভাগে পৌঁছনোর আগে র‌্যাম্পেই প্রসব করেন ওই তরুণী।

টুম্পার স্বামী জাকির হোসেনের অভিযোগ, ডাকাডাকি করেও হাসপাতাল কর্মীদের দেখা মেলেনি। নিরুপায় হয়ে তাঁরাই পাঁজাকোলা করে টুম্পাকে নিয়ে যান তিন তলায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, টুম্পা ও সদ্যোজাত এখন বিপন্মুক্ত।

তবে ওই ঘটনার পরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতির সঙ্গে আসা লোকজন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের সুপার দীপালি মণ্ডল বলছেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভোগান্তি রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ দফতর-সহ সর্বত্র জানিয়েও সুরাহা হয়নি।’’

বিষয়টি কবুল করে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে এসেছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁদের সব জানানো হয়েছে। কথা হয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গেও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামীণ হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে ঘটা করে সব নিয়ে আসা হল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। গালভরা নাম হল। কিন্তু পরিষেবা মিলছে কই!

টুম্পার মা মুরেশা বিবি বলছেন, “অন্ধকার হাসপাতাল একটা স্ট্রেচার পর্যন্ত মেলে না গো! মেয়ের সঙ্গে লোকজন ছিল বলে ওই অবস্থায় তিন তলায় নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। কিছু একটা ঘটে গেলে তার দায় কে নিত?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE