অগ্নিগর্ভ: জয়গাঁয় তাণ্ডব মোর্চা সমর্থকদের। ছবি: নারায়ণ দে।
পাহাড়ের আন্দোলন সমতলে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় নকশালবাড়িতে এসে থমকে দাঁড়াতে হল মোর্চাকে।
মোর্চা সমর্থকদের খুকুরি, বাঁশ হাতে মিছিলের পথ আটকে দাঁড়াল স্থানীয় মানুষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, ‘খুকুরি নিয়ে শহরে মিছিল করা যাবে না। চলবে না বাংলা ভাগের স্লোগানও।’ পথ আটকে তত ক্ষণে জ্বলতে শুরু করেছে টায়ার। মিছিল রুখতে মোড়ে মোড়ে শুরু হয়েছে জটলাও। বাধ্য হয়েই পিছু হটলেন মোর্চা নেতৃত্ব। পরে অভিযোগের আঙুল তুললেন শাসক তৃণমূল এবং পুলিশ-প্রশাসনের দিকে।
কিন্তু একান্তে পাহাড়ের কেউ কেউ মেনে নিলেন, তাঁদের মতো করে টায়ার জ্বালিয়ে নকশালবাড়ির বাসিন্দারা যে এ ভাবে পথ আটকাবেন, সেটা ভাবতেও পারেনি মোর্চা। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে সমতলে নামিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে বিমল গুরুঙ্গের দল। শনিবার তাদের মিছিল ঘিরে রণক্ষেত্র হয় সুকনা। রবিবার জয়গাঁয় মোর্চা সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে কয়েক দফায় গোলমাল চলেছে। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ঢিলে ডিআইজি-পুলিশ সুপার জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। ভাঙচুর হয়েছে পুলিশের ভ্যান, যাত্রীবাহী গাড়িও। একই দিনে নয়াদিল্লিতেও একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয় গোর্খাল্যান্ড সমর্থকদের পক্ষ থেকে।
মোর্চার এই সমতলে আন্দোলন বিস্তারকে কী ভাবে আটকাল নকশালবাড়ি? রবিবার সকালে নকশালবাড়ির মহিষমাটি এলাকা থেকে মিছিল শুরু করার কথা ছিল মোর্চার। সেই মতো স্থানীয় সমর্থকরা তো বটেই, বহিরাগতদেরও গাড়ি করে নিয়ে আসা হয়। খুকুরি, বাঁশ হাতে নিয়ে শুরু হয় স্লোগান। ততক্ষণে নকশালবাড়ি শহর জুড়ে মিছিলের কথা চাউর হয়ে গিয়েছে। বাজার, রথখোলা মোড়, দুর্গামন্দির, বাবুপাড়া, ঘাটানি মোড়, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একের পর এক দোকান বন্ধ হতে থাকে। বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনের সদস্যরা রাস্তায় নেমে পড়েন। এলাকার বাসিন্দারাও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। সকলের দাবি একটাই, রাজ্য ভাগের দাবিতে অস্ত্র-মিছিল করতে দেওয়া হবে না।
সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখে ঘাবড়ে যান মোর্চা নেতারা। শেষে আর মিছিলের ঝুঁকি নেননি তাঁরা। পরে তরাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দুর্গা প্রধান বলেন, ‘‘পুলিশ তৃণমূলের সাহায্যে মিছিল আটকেছে। এ ভাবে আমাদের দাবিকে চাপা দেওয়া যাবে না।’’ এই অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘দল নয়, সাধারণ বাসিন্দারাই পথে নেমেছিল। খুকুরি নিয়ে সমতলে লোক এনে গুন্ডামি করবে, পুলিশকে মারবে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবে— এ সব আর মানুষ মেনে নেবে না।’’
তরাইয়ের বাসিন্দারা যে ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, ডুয়ার্সে অবশ্য তা দেখা যায়নি। ভুটান লাগোয়া জয়গাঁতে এ দিন সকাল থেকেই গোলমাল শুরু হয়। গোপীমোহন ময়দান এলাকায় মোর্চার মিছিল এলে পুলিশ তা আটকে দেয়। তখন পুলিশের উপর ইট-পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। তাদের একটি ভ্যান ভাঙচুর করে চালককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগও ওঠে। ৬ জন পুলিশ আহত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
২৪ ঘণ্টা আগে যে সুকনা রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল, তা এ দিন ছিল থমথমে। সর্বত্র দোকানপাট বন্ধ ছিল। আন্দোলনকারীদের একাংশ এ দিন সকালে সুকনা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখান। স্থানীয় মোর্চা কর্মীরা ছোট একটি মিছিলও করেন। একই দিনে মালবাজারেও মিছিল করতে গিয়েছিল মোর্চা। কিন্তু প্রায় সর্বত্র পুলিশ তাদের আটকে দিয়েছে। অনেক জায়গাতেই ১৪৪ ধারা জারি ছিল। এর প্রতিবাদ করেও পরে মোর্চা মিছিল নিয়ে বিশেষ এগোয়নি। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি জেলার পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত রয়েছে৷’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy