Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সব পাখি ঘরে ফিরে এলেও ভোটে আসছেন না ওঁরা

ছেলে বাড়িতে ছেলে ঘরের ফেরার আনন্দে হাঁড়িতে দু’মুঠো চাল বেশি পড়ত। পুকুরে পড়ত মাছের জাল। আর কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখা হত ছেলেটা এল কি না। ইদে, পুজোয় বা ভোটে সীমান্তে এ ছবি চিরকালের। এ বারের ভোটে সেই ছবিটা ঈষৎ হলেও ফিকে। 

চার মূর্তি, কৃষ্ণনগর।

চার মূর্তি, কৃষ্ণনগর।

কল্লোল প্রামাণিক 
করিমপুর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

নিয়ম নেই। তবু বাসের ছাদে বোচকাবুচকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যেত ওঁদের। হাওয়া উড়ছে উসকোখুশকো চুল। মুখে বাড়ি ফেরার খুশি তখন চুঁইয়ে পড়ছে।

এ দিকে, ছেলে বাড়িতে ছেলে ঘরের ফেরার আনন্দে হাঁড়িতে দু’মুঠো চাল বেশি পড়ত। পুকুরে পড়ত মাছের জাল। আর কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখা হত ছেলেটা এল কি না। ইদে, পুজোয় বা ভোটে সীমান্তে এ ছবি চিরকালের। এ বারের ভোটে সেই ছবিটা ঈষৎ হলেও ফিকে।

তেহট্ট মহকুমার তিনটি বিধানসভা এলাকার তেহট্ট ও পলাশিপাড়া কৃষ্ণনগর লোকসভা এবং করিমপুর বিধানসভা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। মহকুমার কয়েক হাজার মানুষ কর্মসূত্রে ভিন্ জেলা বা ভিন্ রাজ্যে থাকেন। ২৩ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ ও ২৯ এপ্রিল কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের ভোটের দিন। ওই বিধানসভা এলাকাগুলি ঘুরে জানা গেল, ভোটের দিনক্ষণ আগেই ঘোষণা হলেও বাড়ির ফেরার তাদিগ অনেকে অনুভব করছেন না। তার জন্য গত পঞ্চায়েত ভোটের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাই অনেকে তুলে ধরছেন। তাঁদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে ভোটে বাড়ি ফিরলেও ভোট দেওয়া হয়নি অনেকের। বুথে ভোট দিতে গিয়েও খালি ফিরতে হয়েছে। সে কারণে এ বারের ভোটে বাড়ি ফেরার উৎসাহ হারিয়েছেন।

গত পঞ্চায়েত ভোটে বাড়ি এলেও এ বারের ভোটে বাড়ি আসতে নারাজ এক স্কুল শিক্ষক। বর্তমানে বর্ধমানে কর্মরত ওই শিক্ষকের কথায়, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার পর আর ভোট দিতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে বুথে গিয়ে অনেকেই সে বার খালি হাতে ফিরেছেন। তাই এ বার তাই বাড়ি ফেরার ইচ্ছা নেই।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হোগলবেড়িয়ার রামনগর, কুচাইডাঙা বা যমশেরপুর এলাকার কয়েকশো জন মানুষ কাজের জন্য কেউ কেরলে, কেউ দিল্লিতে থাকেন। তাঁদের অনেকেই এ বার ঘরে ফিরছেন না বলে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। রামনগরের দুখু মণ্ডল বলেন, “আমার দুই ছেলে গত পাঁচ বছর ধরে কেরলে কাজ করে। বিধানসভা ও গত পঞ্চায়েত ভোটে সকলেই বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু এ বার তারা আসবে না বলে ফোনে জানিয়েছে।”

সিপিএমের তেহট্ট এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুবোধ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেকেই নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি। সেই অভিজ্ঞতার কারণে দূরের কাজ ছেড়ে অনেকে বাড়ি ফিরতে চাইছেন না।’’

যদিও করিমপুর ২ ব্লক তৃণমূলের যুব সভাপতি কার্তিক মণ্ডলের মতে, বাড়ি না ফেরার কারণটি অন্য। তিনি বলেন, “মুরুটিয়ার দিঘলকান্দিতে প্রায় শ’দুয়েক মানুষ বাইরে কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সাতটি বিধানসভা নিয়ে এত বড় লোকসভা কেন্দ্রে কোনও প্রার্থীর পক্ষেও তাঁদের অর্থ সাহায্য করে বাড়ি ফেরানো সম্ভব নয়। তাই দলের কয়েক জন একনিষ্ঠ কর্মীরা ভোটে বাড়ি আসলেও এ বার বেশির ভাগ আসছেন না।”

বাড়ি না ফেরার আরও একটি কারণ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা রিপন মণ্ডল। তাজের সূত্রে তিনি কেরলে থাকেন। রিপন বলেন, “মাস দেড়েক পরে ইদ। সে সময় বাড়ি ফিরতেই হবে। তাই ভোটে বাড়ি গেলে ইদে যাওয়া হবে না। উপরন্তু দশ দিন কাজ বন্ধ থাকবে। তাই ইদেই বাড়ি ফিরব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Migrating Voters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE