চাপে পড়লে কী না হয়!
মাত্র তিন বছর আগে ২০১৩-১৪ সালে যে সংখ্যাটা মেরেকেটে ছিল ৩ কোটি, সেটাই প্রায় ১৮ গুণ বেড়ে হয়েছে ৫৫ কোটি!
বছর তিনেক আগে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’ (আরএসবিওয়াই) প্রথম পুরোদমে চালু হওয়ার পরে রাজ্যে এই প্রকল্পের আওতায় সরকারি হাসপাতালে হাতেগোনা রোগীর চিকিৎসা হতো। ফলে রাজ্য সরকার বিমা সংস্থাগুলিকে বছরে যা প্রিমিয়াম দিত, তার তুলনায় খুবই সামান্য টাকা বিমা সংস্থার থেকে ‘ক্লেম’ বাবদ আদায় করতে পারতো। লাভ হতো বিমা সংস্থাগুলির।
২০১৬-১৭ সালে পরিস্থিতিটা বেমালুম পাল্টে গিয়েছে!
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই বছর রাজ্য সরকার বিমা সংস্থাগুলিকে যা প্রিমিয়াম দিয়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি টাকা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা-বাবদ ‘ক্লেম’ করতে পেরেছে। তাতে সরকারি হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতিতে (আরকেএস) গত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ টাকা সংগৃহীত হয়েছে। এবং এই টাকায় আরকেএস থেকে রোগীদের ওষুধ বা চিকিৎসা সামগ্রী কেনা যাবে এবং হাসপাতালের পরিকাঠামোগত বিভিন্ন কাজও করা যাবে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৬-১৭ সালে আরএসবিওয়াই-তে রাজ্য সরকার বিমা সংস্থাগুলিকে প্রিমিয়াম দিয়েছে ৪০ কোটি টাকা এবং সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিমা সংস্থার থেকে ‘ক্লেম’ বাবদ আদায় করেছে ৫৫ কোটি টাকা। ফলে ১৫ কোটি টাকা সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিগুলিতে সংগৃহীত হয়েছে, যা রোগীর কল্যাণে খরচ করা যাবে।
স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করেছেন, রাজ্যে আরএসবিওয়াই চালু হওয়ার পর এর আগে কোনও দিন সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিগুলির জন্য এত টাকা সংগ্রহ করা যায়নি। ২০১৫-১৬ সালে রাজ্য সরকার প্রিমিয়াম দিয়েছিল ৪০ কোটি টাকা, আর সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা-বাবদ বিমা সংস্থা থেকে ‘ক্লেম’ করেছিল ৩৮ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। ফলে রোগী কল্যাণ সমিতিগুলির কাছে খরচ করার জন্য সাকূল্যে মাত্র ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার মতো ছিল।
আরও পড়ুন: তপনের পাশে তৃণমূলের স্কুল সমিতি, বিতর্ক
কোন জাদুতে এমন ভোলবদল সম্ভব হল? স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঠেলার নাম বাবাজি! সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পুরোপুরি ‘ফ্রি’ হয়ে যাওয়ার পর
সরকারি হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ সংগ্রহের পথ অনেকাংশে রুদ্ধ হয়েছিল। কারণ, পেয়িং বেড ও কেবিনের ভাড়া এবং সেখানে ভর্তি থাকা রোগীদের ওষুধপত্র এবং বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা থেকে আর টাকা নেওয়া যায় না। এ দিকে অনেক দামি ওষুধ বা চিকিৎসা সামগ্রী স্বাস্থ্য দফতর সময় মতো সরবরাহ না-করলে হাসপাতালকেই আরকেএস থেকে কিনে দিতে হয়। সব ফ্রি হয়ে যাওয়ার পর সেই চাপ ক্রমশ বাড়ছিল।
আরএসবিওয়াই প্রকল্পে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের ৪ জন এক বছরে মোট ৩০ হাজার টাকার চিকিৎসা নিখরচায় পান। এর প্রিমিয়ামের ৭৫ শতাংশ কেন্দ্র ও ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকার দেয়। বেসরকারি-সরকারি সব হাসপাতালেই এই প্রকল্পে পরিষেবা দেওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলি থেকে বিমা সংস্থার কাছে ভাল পরিমাণ ‘ক্লেম’ করতে পারায় রাজ্য সরকার অবশেষে ‘মাছের তেলে মাছ ভাজা’ অর্থাৎ সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত অর্থ ফের সরকারি হাসপাতালে কাজেই খরচ করতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy