প্রতীকী ছবি।
ফি-বছরের অতিথি তারা। কিন্তু সেই পরিযায়ী পাখিরা এ বার একই সঙ্গে বিপন্ন এবং বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। কেননা পরিবেশগত বাধায় তাদের ঘাঁটি গাড়ার জায়গাটা আর নির্দিষ্ট থাকছে না। চেনা ঠাঁই বদলে ফেলছে তারা। সমস্যাটা এখানেই।
এই ঠাঁইবদলের প্রভাব ওই পাখিদের শরীরে তো পড়তেই পারে। সেই সঙ্গে বিপদ বাড়তে পারে রাজ্যের পাখি এবং মানুষেরও! প্রাণিবিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই পরিযায়ী পাখিদের থেকেই বার্ড ফ্লু-র মতো সংক্রামক রোগ আসে। আগে তাদের থেকে এ রাজ্যে সেই রোগ ছড়িয়ে প্রচুর পাখি মারা গিয়েছে। সেই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মানুষও।
রাজ্য ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ অধিকর্তা জহরলাল চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, পরিযায়ী পাখিরা শীতের শুরু থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আসতে শুরু করে। অনেক সময়েই তারা শরীরে বার্ড ফ্লু-র মতো বিভিন্ন সংক্রমণ নিয়ে আসে। এখানে এলে সেই সব সংক্রমণ এলাকার বিভিন্ন পাখি এবং পোলট্রির পাখিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সর্বোপরি সেই ভাইরাস মানুষের শরীরেও ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তাঁর মতে, পরিযায়ী পাখিরা তাদের দীর্ঘদিনের চিহ্নিত জায়গা থেকে ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে প়়ড়ছে। তার ফলে নজরদারিতে সমস্যা হতে পারে।
তবে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের খবর, কোথাও নতুন পরিযায়ী পাখি দেখা গেলেই ব্লক প্রাণিসম্পদ আধিকারিক এবং অন্যান্য অফিসার নজরদারি চালান। ওই সব জায়গা থেকে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় বেলগাছিয়ার ‘ইনস্টিটিউট অব অ্যানিম্যাল হেল্থ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিক্যালস’-এ। ‘‘বার্ড ফ্লু-র মতো রোগের প্রতিরোধে আমাদের অ্যাকশন প্ল্যান রয়েছে। গোটা দেশে আমরাই এই কাজে সব থেকে এগিয়ে। পরিযায়ী পাখিরা আবাস বদলালেও আমরা নজর রাখছি,’’ বলেন প্রাণিসম্পদ অধিকর্তা, ক্যাপ্টেন আনন্দগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিযায়ী পাখিদের ঠাঁই বদলানোর অন্যতম নজির সাঁতরাগাছির ঝিল। গত বছরেও সেখানে দু’হাজার পরিযায়ী পাখি ভি়ড় করেছিল। কিন্তু এ বার এক হাজারেরও কম পাখি রয়েছে বলে পক্ষিপ্রেমীরা জানান। পক্ষিবিশারদেরা বলছেন, তারকেশ্বর-পুরশু়ড়া-খানাকুলের কিছু জায়গায় এ বছর পরিযায়ী পাখি দেখা যাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়াতেও পরিযায়ী পাখির নতুন ঠাঁই নেওয়ার খবর মিলেছে। জহরলালবাবু বলেন, ‘‘বার্ড ফ্লু-র ভাইরাস নিয়মিত চরিত্র বদলাচ্ছে। তাই পোলট্রির পাখিদের প্রতিষেধক দিয়েও লাভ হবে না। কারণ, আগের বছর ভাইরাস ঠেকাতে যে-প্রতিষেধক হয়তো কাজ করল, এ বছর তা না-ও করতে পারে।’’
এই সংক্রমণ আসে কী ভাবে?
ইনস্টিটিউট অব অ্যানিম্যাল হেল্থ অ্যান্ড ভেটেরিনারি বায়োলজিক্যালসের সূত্র জানাচ্ছে, অনেক সময়েই এত দূর পাড়ি দিয়ে আসার পথে ওই সব পাখির শরীরে ভাইরাস ঢুকে পড়ে। কখনও কনও শীতের দেশে ওদের শরীরে থাকা ভাইরাস পরিবেশ বদলের ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাণিসম্পদ দফতরের একাংশ বলছে, নতুন কোনও জায়গায় যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, সামাল দেওয়া কঠিন হবে। শুধু তা-ই নয়, কোনও ছোট জলাশয়ে অতিরিক্ত পাখি এসে আশ্রয় নিলে তাতেও সংক্রমণ ছড়ানো এবং প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy