Advertisement
০৯ মে ২০২৪

মমতাকে আশ্বাস শ্যাননের, লগ্নি টানতে পাশে আমেরিকা

পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ টানার উদ্যোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিল আমেরিকা। বিশেষত গভীর সমুদ্রবন্দর গড়তে রাজ্যকে মার্কিন সংস্থার লগ্নি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য পাইয়ে দিতে ওয়াশিংটন সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। তারা এ-ও জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে মার্কিন প্রশাসনের কাছে নির্দেশ গিয়েছে।

ভারতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখছেন টমাস শ্যানন। সঙ্গে কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র।

ভারতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখছেন টমাস শ্যানন। সঙ্গে কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত। — নিজস্ব চিত্র।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ও পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ টানার উদ্যোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিল আমেরিকা। বিশেষত গভীর সমুদ্রবন্দর গড়তে রাজ্যকে মার্কিন সংস্থার লগ্নি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য পাইয়ে দিতে ওয়াশিংটন সহায়ক ভূমিকা নেবে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। তারা এ-ও জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে মার্কিন প্রশাসনের কাছে নির্দেশ গিয়েছে।

মার্কিন বিদেশ দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন বৃহস্পতিবার নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানতে মুখ্যমন্ত্রী আগ্রহী। উনি চাইছেন কলকাতা ও তার আশপাশ ব্যস্ত একটা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠুক।’’ এ ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের উৎসাহের কথা জানিয়ে শ্যাননের মন্তব্য, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রবেশদ্বার হল কলকাতা। তাই এখানকার উন্নয়নযজ্ঞে আমেরিকাও অংশীদার হতে চায়।’’

এখন প্রশ্ন— মার্কিন বিদেশ দফতরের চতুর্থ পদাধিকারী এই কূটনীতিক প্রথম বার ভারতে এসে সফরের জন্য কলকাতাকেই কেন বেছে নিলেন? দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার মূল উদ্দেশ্য হলে তো গুজরাত-মহারাষ্ট্র ছিল?

ভারতীয় কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলকাতার অবস্থান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, বেজিংয়ের প্রভাব প্রশমনের মতো ক্ষেত্রে তো বটেই, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য প্রসারের মানচিত্রেও। উপরন্তু দ্বিতীয় বার বিপুল সাফল্য নিয়ে ক্ষমতায় ফেরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র। তাই ওয়াশিংটনের তরফে এ হেন তাগিদ স্বাভাবিক বলে কূটনীতিক মহলের অভিমত।

বস্তুত আস্থার বার্তা দিতে শ্যাননও মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ‘‘ওঁর সঙ্গে বৈঠক করে আমি মুগ্ধ। ওঁর দূরদৃষ্টি রয়েছে। মানসিক ভাবে বলিষ্ঠ। উন্নয়ন করে দেখানোর ইচ্ছেও প্রচুর। তা ছাড়া যেমন বিপুল জনাদেশ নিয়ে দ্বিতীয় বার তিনি ক্ষমতায় ফিরেছেন, তাতে ওঁর রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতেই হয়।’’— বলেন শ্যানন। কোন কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ চাইছেন দিদি? আমেরিকাই বা কতটা সাড়া দিতে পারে?

শ্যানন জানিয়েছেন, মার্কিন সরকার এখানে সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারে না। তবে আমেরিকার শিল্প-বাণিজ্য সংস্থাগুলির কাছে বাংলার আহ্বান অবশ্যই পৌঁছে দিতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি চাইছেন। বড় বন্দর গড়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাত-আটটা বড় সংস্থা মার্কিন মুলুকে আছে, যারা বিদেশেও কাজ করতে চায়। দু’পক্ষকে আমরা আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করতে পারি।’’ বাম জমানায় সাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। তবে বিশ্ব-মন্দার বাতাবরণে প্রকল্পটিতে টাকা ঢালতে দেশি-বিদেশি সংস্থার মধ্যে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়নি। এমতাবস্থায় পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে একটি সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতার সরকার।

সহযোগিতাকে মজবুত করতে মমতাকে ওয়াশিংটন যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শ্যানন। তিনি বলেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্র, হাইটেক শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও উৎপাদন শিল্পেও মুখ্যমন্ত্রী আমেরিকার লগ্নিপ্রার্থী। কলকাতা ও লাগোয়া শহরাঞ্চলে সবুজ শিল্পও গড়ে তুলতে চান। এ বিষয়ে মার্কিন সংস্থাগুলির অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। ‘‘উনি ওয়াশিংটন গেলে সবিস্তার কথা হতে পারে। কোন কোন সংস্থাকে সেই আলোচনায় ডাকা যায়, মার্কিন প্রশাসনকে তা ভাবতে বলা হয়েছে।’’— বলেন শ্যানন।

সব মিলিয়ে পাশে থাকার জোরালো বার্তাই মিলেছে মার্কিন কূটনীতিকের মুখে।

ঢাকা নিয়ে মনোভাবে সন্তোষ

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনে জাতীয় নীতিকে তিনি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন বলে মার্কিন প্রশাসনকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন বিদেশ দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি টমাস শ্যানন। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্যানন জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ওনার আগ্রহের কথা শুনে তিনি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। প্রশ্ন হল, শ্যাননকে কী জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী? আন্ডার সেক্রেটারি জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন দু’দেশের সীমান্ত দিয়ে সড়ক ও রেল পরিবহণ এবং তার মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়াতে ইতিমধ্যেই তিনি উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছেন। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে তাঁর সুষ্ঠু সমন্বয় রয়েছে। সীমান্তে নিরাপত্তা ও জঙ্গি দমনেও উভয়পক্ষ সমন্বয় করে চলেছে। এর সুফলও পাচ্ছে দুই দেশ। এ সবের পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে এ-ও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পদাধিকার বলে তিনি জাতীয় নীতিকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। গত সপ্তাহেই ওয়াশিংটনে গিয়ে শ্যাননের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশ সচিব শহিদুল হক। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ওই বৈঠকে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গও তুলেছিল ঢাকা। যদিও শ্যানন এ দিন বলেন, ভারত-বাংলাদেশ জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও আলোচনা হয়নি ঠিকই। তবে এটা ঠিক যে আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সুষ্ঠু সম্পর্ক রেখে চলুক সেটাই ওয়াশিংটনও চায়। তিনি বলেন, উপমহাদেশে উন্নয়ন ও শান্তির স্বার্থেই এটা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata banerjee US Shannon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE