আশালতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
সোদপুর স্টেশন থেকে সবেমাত্র ছেড়ে বেরোচ্ছে ডাউন গেদে-মাঝেরহাট লোকাল। আচমকাই মহিলা কামরার সিটে বসা এক যাত্রী অনুভব করলেন তাঁর পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি লাগছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরায় ভাল করে তা ঠাহর করতে পারছিলেন না তিনি। শেষে ভিড়ের মাঝে কোনও মতে দেখেন পায়ের পাতার উপরে নড়াচড়া করছে আস্ত একটা সাপ!
ভয়ে আর্তনাদ করে পা ঝাড়া দিতেই ওই মহিলার ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে কামড়ে দিয়ে সাপ ছিটকে পড়ে কামরার অন্য প্রান্তে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ততক্ষণে গোটা কামরার যাত্রীরা আতঙ্কে লাফালাফি শুরু করেন। কিন্তু নামার উপায় ছিল না কারও, কারণ ট্রেন তখন চলতে শুরু করেছে। শেষে পরের স্টেশনে ট্রেন থামতে সাপে কাটা মহিলাকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ভয়ে কামরা ফাঁকা করে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন অন্য মহিলা যাত্রীরাও।
শুক্রবার সকালের এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে। অধিকাংশ যাত্রীরই বক্তব্য: মাঝে মধ্যে ট্রেনের কামরায় আরশোলা, ছারপোকা এমনকী ইঁদুরের উপদ্রবে যাত্রীদের নাজেহাল হওয়ার ঘটনা ঘটে। কিন্তু আস্ত সাপ ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা বিরল! অবশ্য রেল সূত্রে খবর, বহু বছর আগে ট্রেনে কামরায় এক সাপুড়ের ঝোলা থেকে একটি সাপ বেরিয়ে পড়েছিল। পরে সেই সাপটি ধরে ঝোলায় ভরে নেন ওই সাপুড়ে নিজেই।
নদিয়ার ভায়না পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আশালতা মণ্ডল ও তাঁর স্বামী রবীন মণ্ডল নিমতায় রঙের কাজ করেন। প্রতিদিনের মতোই তাঁরা ভোর ৬টা ২০মিনিটের গেদে-মাঝেরহাট লোকাল ধরে বেলঘরিয়া আসছিলেন। তখনই ঘটনাটি ঘটে।
এ দিন কামারহাটি সাগরদত্ত হাসপাতালে আশালতাদেবী বলেন, ‘‘সোদপুর ছাড়তেই পায়ে সুড়সুড়ি লাগলো। দেখলাম একটা কালো সাপ নড়ছে।’’ যাত্রীদের অভিযোগ, সিটের নিচেই ফুল ভর্তি ঝুড়ি রাখা ছিল। সম্ভবত তার মধ্যেই সাপটি ছিল। সাপ কামড়ানোয় আশালতাদেবীর আঙুল দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে তাতে চুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাসন্তী হালদার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘উনি পা ঝাড়া দিতেই সাপটা একটু দূরে গিয়ে পড়ে। তা দেখে ভয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দেন অন্য যাত্রীরা। কেউ কেউ ভয়ে সিটের উপরে উঠে পড়েন।’’ এ সবের মধ্যেই ট্রেন বেলঘরিয়া স্টেশনে পৌঁছয়।
যাত্রীদের চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন ট্রেনের গার্ড ও চালক। আসেন স্টেশনকর্মী ও জিআরপি। গার্ড পুরো ঘটনাটি শিয়ালদহ কন্ট্রোল রুমে জানান। এর পরে কামরায় উঠে এক দফা তল্লাশিও চালানো হয়। কিন্তু সাপের খোঁজ মেলেনি। রেলকর্তারা জানান, ট্রেনটি দমদমে পৌঁছলে ফের ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে আরও একবার তল্লাশি করা হয়। সেখানেও মেলেনি সাপের খোঁজ।
এ দিন রেল পুলিশের সহায়তায় অচৈতন্য আশালতাদেবীকে তাঁর পরিজনেরা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে আসেন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য ) বিমল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলার স্বামীকে বলেছি চিকিৎসায় কোনও সাহায্যের দরকার হলে জানাতে।’’ হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল তথা সুপার গৌতম জোয়ারদার বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। উনি এখন অনেকটা সুস্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy