Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শব্দ ব্রহ্ম, ডিজে’র বাজি মাত হবে কি

শব্দবাজি আটকানোর পাহাড়প্রমাণ আস্কিং রেট নিয়ে নেমেছিল পুলিশ। কারণ তত ক্ষণে শব্দবাজির ৮০ শতাংশ বাজারে ঢুকে গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৬
Share: Save:

শব্দবাজি আটকানোর পাহাড়প্রমাণ আস্কিং রেট নিয়ে নেমেছিল পুলিশ। কারণ তত ক্ষণে শব্দবাজির ৮০ শতাংশ বাজারে ঢুকে গিয়েছিল। সে দিক দিয়ে মুখ ও মান রক্ষা হয়েছে অনেকটা। যদিও কালীপুজোর রাতের তুলনায় রবিবার, দিওয়ালির রাতে শব্দদৈত্য বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে।

লালবাজার কন্ট্রোল রুমে শনিবার রাতে শব্দবাজি সংক্রান্ত এসেছিল ৯৬টি, রবিবার সেই অভিযোগের সংখ্যা ছিল ২২১। আবার শনিবার রাতে কলকাতা পুলিশ ৮২৯২.৪ কেজি শব্দবাজি আটক করেছিল। রবিবার মাত্র ৩৭০ কেজি! লালবাজারের এক অফিসার যখন সোমবার ভোরে বাড়ি ফিরছেন, তখনও বাজির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। পুলিশ স্বীকার করে নিচ্ছে, শনিবারের তুলনায় পরিস্থিতি রবিবার খারাপ ছিল। সল্টলেকের এক শ্রেণির বাসিন্দা পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি করে শব্দবাজি ফাটিয়েছেন। রবিবার একটা সময়ে এফই ব্লকে শব্দ দানবের দৌরাত্ম্যে কান পাতা যাচ্ছিল না। কিন্তু পুলিশ গিয়ে দেখল, শুধু আলোর রোশনাই। পুলিশ ফিরে যেতে আবার কান ফাটানো আওয়াজ! দত্তাবাদ, পূর্বাচল আবাসন কিংবা বিসি ব্লক, সর্বত্র লুকোচুরি। পুলিশ এলে শান্ত, সরে গেলে যে কে সে-ই।

তবু অনেকেই স্বীকার করছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় শব্দাসুরের তেজ এ বার কম ছিল। এখন প্রশ্ন, বিসর্জনের মিছিলে এই চাপটাই পুলিশ রাখতে পারবে তো? সেখানে তো শুধু বাজি নয়, কান ঝালাপালা করে দেবে ডিজে (ডিস্ক জকি) মিউজিক সেট-ও!

রবিবার রাত তখন ১০টা। বাগবাজার থেকে শ্যামবাজার মোড় হয়ে হাতিবাগানের দিকে যাচ্ছিল ওই তল্লাটের এক বারোয়ারি বিসর্জনের মিছিল। ছোট ট্রাকের উপর বসানো ডিজে সেটের আওয়াজখানা হানা দিয়েছে ফড়িয়াপুকুর অবধি। কয়েক জন বাসিন্দা শ্যামপুকুর থানায় ফোন করে বলেন, টেকা যাচ্ছে না।

কোনও লাভ হয়নি। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ডিজে-সহ মিছিল যায় অবাধে। সোমবার শ্যামপুকুর থানার অফিসারদের দাবি, এমন কিছু তাঁদের জানা নেই। যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার শুনে বললেন, ‘‘থানার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।’’ ডিসি নর্থ শুভঙ্কর সিংহ সরকারও বললেন, ‘‘রবিবার রাতে শ্যামবাজার মোড়ে কী ঘটেছিল, খোঁজ করছি।’’

বিসর্জনের মিছিল-সহ খোলা জায়গায় ডিজে সেট বাজানো কিন্তু গত সাত-আট বছর ধরেই এই রাজ্যে নিষিদ্ধ। ফর্ম পূরণের সময়েই পুজো কমিটিকে পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জানাতে হয়, বিসর্জনের মিছিলে ডিজে সেট বাজবে না। অথচ অতীতে দেখা গিয়েছে, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে রানিকুঠি মোড় পর্যন্ত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের দু’দিক আটকে একের পর এক মিছিলে তারস্বরে ডিজে বাজছে। রাস্তায় পুলিশ নীরব দর্শক। একই ছবি শহরের অন্যান্য এলাকাতেও। তার কারণ, ডিজে সেট নিয়ে তেমন নজর এত দিন দেওয়া হতো না। যেটা এ বার কলকাতা পুলিশ দিয়েছে।

যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার নিজে পুজো সংগঠকদের সঙ্গে বৈঠকে বারবার বিষয়টি মনে করিয়েছেন। একই কথা বলেছেন থানার ওসি-দের। সেই মতো ওসি-রাও এলাকার পুজো কমিটিগুলোকে ডিজে নিয়ে সতর্ক করেছেন। এমনকী, যাঁরা ডিজে ভাড়া দেন, তাঁদেরও পুলিশ কড়া বার্তা দিয়েছে। বলেছে, ডিজে সেট বাজেয়াপ্ত করা হলে, যিনি সেটি ভাড়া দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালবাজারের এক কর্তা সোমবার বললেন, ‘‘এ বার মিছিলে ডিজে বাজলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে বলব। প্রয়োজনে ঘটনাস্থল থেকে সেই জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হবে।’’ কিন্তু মিছিলে প্রচুর লোক থাকলে কি সেটা সম্ভব? ওই অফিসারের কথায়, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে মনে হলে সতর্ক ভাবে পদক্ষেপ করা হবে। সংগঠকদের বিরুদ্ধে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। পরের বছর তাঁদের পুজোর অনুমতিও দেওয়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound Crackers Kolkata loud speakers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE