Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী

ওঁদের লড়াইটা ছিল আর পাঁচ জনের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু ওঁরা জিতেছেন। দারিদ্র, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, শোকতাপ ওঁদের দৌড় থামাতে পারেনি।ওঁদের লড়াইটা ছিল আর পাঁচ জনের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু ওঁরা জিতেছেন। দারিদ্র, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, শোকতাপ ওঁদের দৌড় থামাতে পারেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

বিনে পয়সার শিক্ষক
সংযুক্তার বাবা সংসার ফেলে চলে গিয়েছিলেন। প্রতিবন্ধী মা-কে নিয়ে সংযুক্তা দাদু-দিদার কাছেই মানুষ। টানাটানির সংসার। দাদু ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক। অবসরের পরে সামান্য টাকার পেনশন। স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন তিনিও শয্যাশায়ী। মা ঝুমুর সাধ্যমতো সেলাইয়ের কাজ করেন। বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সংযুক্তা ঘোষকে সব সময় আগলে রেখেছেন তাঁর দিদা অঞ্জলি সমাজদার। স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, বাজারহাট সবই করতেন তিনি। এ দিনও নাতনিকে সঙ্গে করে মার্কশিট নিতে এসেছিলেন। ৪৮৪ পেয়ে নবম স্থান অধিকার করেছে সংযুক্তা। অঞ্জলিদেবী কৃতজ্ঞ নাতনির চার গৃহশিক্ষকের কাছে, যাঁরা বিনে পয়সায় পড়িয়েছেন। ইংরেজি নিয়ে পড়ে ডব্লিউবিসিএসে বসতে চান সংযুক্তা। দিদার গলায় দুশ্চিন্তা, ‘‘এ বার সরকারি সহায়তা না পেলে মেয়েটার পড়াশোনা বোধ হয় আর হবে না।’’


লম্ফের আলো
বছর দুয়েক আগে বাবা মারা যান। তার পর থেকে তাঁত বন্ধ। সুতো কেটেই সংসার চালান মা। দিনে রোজগার মেরেকেটে ৩০-৪০ টাকা। পয়সা বাঁচাতে স্কুলের মিড-ডে মিলেই দুপুরের খাওয়া সারতেন সার্থক লাহা। সন্ধ্যায় পড়তে বসতেন লম্ফ জ্বালিয়ে। স্নাতকোত্তরের ছাত্র দাদা পড়ার ফাঁকে সার্থককেও পড়া দেখিয়ে দিতেন। ইংরাজি ও দর্শনের দুই গৃহশিক্ষক বিনা পারিশ্রমিকে সাহায্য করেছেন তাঁকে। বর্ধমানের কাটোয়ার ঘোড়ানাশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্থক লাহা প্রায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন কলা বিভাগে। মা ধানুদেবী চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘সার্থক আমার মুখ রেখেছে। ওর বাবার স্বপ্ন সত্যি করেছে।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘ইংরাজি নিয়ে পড়ার জন্য কেউ যদি ছেলেটাকে সাহায্য করেন, খুব উপকার হয়।’’

নিজের সঙ্গে যুদ্ধ

বাবা ভাদু দাস খাল-বিলে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। পরীক্ষার দু’মাস আগে মা মারা গেলেন। পরীক্ষা চলাকালীন বাবাও আক্রান্ত হলেন পক্ষাঘাতে। কিন্তু জলপাইগুড়ির খারিজা বেরুবাড়ি হাইস্কুলের ছাত্র তাপস দাস তাতে দমে যাননি। যাবতীয় প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে কলা বিভাগে ৯২ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছেন তিনি। স্কুলের এক শিক্ষক বলছিলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি হাসপাতালে মাকে নিয়ে পড়ে থাকত তাপস। মাকে বাড়ি নিয়ে আসার আগের দিন হাসপাতাল থেকে খবর আসে, খাট থেকে পড়ে গিয়ে মা মারা গিয়েছেন।’’ তার পর বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পুরো ভবিষ্যতটাই। এ দিন কিন্তু আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, স্কুলের শিক্ষকরা একবাক্যে বলছেন, ‘‘তাপস আমাদের মাথা উঁচু করে দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

physical disability poverty brilliant results HS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE