Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ির ছেলে মনে করতাম, বলছেন ডাক্তার

সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই গাড়িচালক তপন দাসকে। মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজত হয় তার। বাবুরবাগে ধৃতের পড়শিদের একাংশের দাবি, নানা ধরনের নেশায় আসক্তি ছিল ধৃতের। সেই কারণেই বেড়েছিল টাকার চাহিদা।

ধৃত গাড়িচালক। নিজস্ব চিত্র

ধৃত গাড়িচালক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০০
Share: Save:

হাসপাতাল থেকে সবে বাড়ি ফিরে এসেছেন অ্যানাস্থেটিস্ট সুব্রত নাগ। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা। বাঁ হাতেও চোট রয়েছে। ‘বিশ্বস্ত’ গাড়ি চালকের ২৪ ঘণ্টা আগের নৃশংস রূপ ভুলতে পারেননি তিনি। সোমবার ওই চালকের ‘হামলা’য় মারা গিয়েছেন সুব্রতবাবুর স্ত্রী মৌসুমীদেবীও। মঙ্গলবার খোসবাগানের একটি গালির ভিতর বাড়ির দোতলায় খাটে বসে কাঁপতে কাঁপতে বছ আটষট্টির বৃদ্ধ বললেন, “আমার কাছে ২০ বছর ধরে কাজ করছে। গাড়ির চালক নয়, বাড়ির ছেলের মতো হয়ে গিয়েছিল। সবসময় আবদার মেটানোর চেষ্টা করতাম। আর সে কি না মত্ত অবস্থায় ঢুকে খুন করল, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!”

সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই গাড়িচালক তপন দাসকে। মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজত হয় তার। বাবুরবাগে ধৃতের পড়শিদের একাংশের দাবি, নানা ধরনের নেশায় আসক্তি ছিল ধৃতের। সেই কারণেই বেড়েছিল টাকার চাহিদা। তাঁরা জানান, তপন বেশির ভাগ সময় মত্ত অবস্থায় থাকতেন, জুয়ার নেশাও ছিল। এ দিন বাবুরবাগে মার্বেল বসানো তিন তলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ধৃতের দিদি বীণা দাস ও দাদা স্বপন দাসও বলেন, ‘‘সবসময় নেশা করত, এটা ঠিক। এ নিয়ে বাড়িতে রোজই অশান্তি হত। ওই দম্পতির তপনকে ছাড়া চলত না। কী করে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না।’’ পুলিশের দাবি, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ বেতন চাওয়া নিয়ে তপনের সঙ্গে গোলমাল বাধে মৌসুমীদেবীর। অভিযোগ, ‘মাস পড়লে বেতন’ মিলবে শুনে ঘরে রাখা মোটা লাঠি নিয়ে সুব্রতবাবুর মাথায় আঘাত করে বছর তেতাল্লিশের তপন। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে ‘হামলা’র মুখে পড়েন মৌসুমীদেবী। দু’জনকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে মারা যান মৌসুমীদেবী। রাতের দিকে গাংপুরের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন সুব্রতবাবু। এ দিন দুপুরে ছাড়া পেয়ে বাড়ি আসেন তিনি।

বৃদ্ধের দাবি, “আবদারটা লোভে পরিণত হয়েছিল। গত ৫ বছর ধরে প্রায় সময় মদ খেয়ে হুজ্জুতি করত। সপ্তাহ তিনেক আগে টাকা চেয়ে গলায় ছুরি পর্যন্ত ধরেছিল। বারবার কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই হাত-পা ধরে ক্ষমা চাইত।’’ ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এক আশ্রমের সন্ন্যাসী স্বামী সেবানন্দ। তিনিও বলেন, ‘‘বারবার গাড়ি চালককে ছাড়ানোর জন্য বলেছি। প্রতি বারই ম্যাডাম বলতেন, ‘কারও পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে না’। যার জন্য ভাবতেন, সেই প্রাণ কেড়ে নিল!”

ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকেন। দুই পরিচারিকা, আয়া আর তপনের ভরসাতেই দিন কাটত দম্পতির। সিঁড়ির সামনের ঘরের চারিদিকে এ দিন দুপুরেও দেখা যায় রক্তের শুকনো দাগ। আয়া ফিরোজা বিবি বলেন, “স্যারের ডান দিক অসাড়। ব্যায়াম করাতে প্রতি দিন এক জন আসেন। তিনি চলে যাওয়ার পরেই তপনদা উপরে উঠে এসে হামলা চালায়। স্যার ও দিদিমণি খুব ভাল। আমাদের কারও বেতন বা বোনাস বাকি নেই।’’

মৌসুমীদেবী বাড়ির নীচেই একটি কোচিং-সেন্টার চালান। সেখানকার ছাত্র ও অভিভাবকেরাও বলেন, “গাড়ির চালকই বাড়ির সব ছিল। সে ম্যাডামকে খুন করল, ভাবতেই পারছি না।’’ মৌসুমীদেবীর মা কুমকুম গুহর দাবি, “পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। দু’জনেই তপনকে খুব বিশ্বাস করত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Nag Driver Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE