Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Mamata Suvendu Conflicts

বিধায়ক পদ ছেড়ে প্রথম সভায় শুভেন্দু, কলকাতার বাড়ির সামনে দিদির পোস্টার

শুভেন্দু যাচ্ছেন তমলুকের নিমতৌড়িতে একটি ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে। সেখানে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৫৯
Share: Save:

প্রত্যাশামতোই দিল্লি গেলেন না শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার রাতেই আনন্দবাজার ডিজিটাল জানিয়েছিল, শুভেন্দুর দিল্লি যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। বৃহস্পতিবার দেখা যাচ্ছে, তার কোনও অন্যথা ঘটেনি। শুভেন্দু যাচ্ছেন তমলুকের নিমতৌড়িতে একটি ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচিতে। সেখানে তিনি কী বলেন, তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল পর্যন্ত তিনি শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দফতর উত্তরকন্যায় ছিলেন। সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে তাঁর বৈঠক করার কথা। এখন দেখার, কলকাতায় ফিরে এসে মমতা সামগ্রিক ভাবে দলের বিষয়ে কিছু বলেন কি না। দেখার এ-ও যে, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে তাঁর শুক্রবারের প্রস্তাবিত বৈঠকের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয় কি না।

শুভেন্দুর ওই সভার আগেই তাঁর কলকাতার বাড়ির সামনে মমতার ছবি-সংবলিত পোস্টার পড়েছে। যেখানে লেখা আছে, ‘আমরা দিদির অনুগামী’, ‘আমরা তৃণমূলের অনুগামী’। অর্থাৎ, শুভেন্দু-অনুরাগীরা ‘দাদার অনুগামী’ বলে গোটা রাজ্যে যে পোস্টার সাঁটছেন, তার পাল্টাও তৃণমূলের তরফে দেওয়া শুরু হয়ে গেল। এই পোস্টার-যুদ্ধ যে আরও গড়াবে, তা নিয়ে উভয় শিবিরেরই সন্দেহ নেই।

বুধবার বিধায়কপদে ইস্তফা দেওয়ার পর জল্পনা শুরু হয়েছিল শুভেন্দুর দিল্লিযাত্রা নিয়ে। অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন, শুভেন্দু দিল্লি গিয়ে অমিত শাহের বঙ্গসফরের সঙ্গে হয়ে আসবেন। তার পর মেদিনীপুরে অমিতের জনসভায় বিজেপি-তে আনুষ্ঠানিক বাবে যোগ দেবেন। কিন্তু বুধবার রাতেই জানা যায়, শুভেন্দুর আপাতত দিল্লি যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি যে বিজেপি-তে যোগ দেবেন, তা নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে কোনও সন্দেহ না থাকলেও কবে তাঁর যোগদান, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। জল্পনা এ-ও যে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের অন্য কেউ বিজেপি-তে যোগদান করবেন কি না। বিজেপি ইতিমধ্যেই অমিতের মেদিনীপুরের সভায় ‘চমক’ থাকবে বলে বার্তা দিতে শুরু করেছে। তার আগে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর বক্তব্য কী হতে পারে, তা নিয়েও জল্পনা এবং আগ্রহ বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, শুভেন্দু বিধায়কপদে ইস্তফা দেওয়ার পর কারও নাম না করেই মমতা কোচবিহারের সভা থেকে বলেছিলেন, ‘‘আদর্শ জামা-কাপড় নয়। জামা-কাপড় রোজ বদল করা যায়। আদর্শ বদল করা যায় না।’’ তৃণমূল নেত্রী কারও নাম না করলেও দলের অন্দরে একাংশের জল্পনা ছিল, তিনি শুভেন্দু এবং অন্যান্য ‘সন্দেহভাজন’দের লক্ষ্য করেই ওই কথা বলেছিলেন। পাশাপাশিই মমতা বলেছিলেন, তৃণমূলের সুব্রত বক্সি-সহ অনেক নেতাকে বিজেপি-র লোকেরা নিয়মিত ফোন করছেন। যা থেকে স্পষ্ট যে, দলবদলের এই আবহে পাল্টা ‘আক্রমণাত্মক’ হতে চাইছেন মমতা। এখন দেখার, এই ঠোকাঠুকি কতদূর যায়!

সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গিয়েছে এই ধরনের পোস্টে।

শুভেন্দুর বিধায়কপদ ছাড়ার পর থেকে ঘটনা দ্রুত গড়াতে শুরু করেছে। বুধবার বিকেলে ইস্তফা দেওয়ার পর রাতেই শুভেন্দু যান তৃণমূলের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে। ঘটনাচক্রে, সুনীলও দলের কাজকর্ম নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে পৌঁছে যান জিতেন্দ্রও। প্রায় দেড়ঘন্টা সকলে সেখানে ছিলেন। যদিও ওই মিলনকে ‘সামাজিকতা’ বলেই অভিহিত করছেন। কারণ, সম্প্রতি সুনীলের মাতৃবিয়োগ হয়েছে। সেই কারণেই শুভেন্দু-সহ অন্যদের সেখানে যাওয়া বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত। যদিও দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘রাজনীতির লোকেরা সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও রাজনীতির কথাই বলে। লোক লৌকিকতা বা সামাজিকতার কথা তো আর দেড়ঘন্টা ধরে বলা যায় না!’’

আরও পড়ুন: ইস্তফায় নারাজ ‘দাদার’ ঘনিষ্ঠেরা

শুভেন্দুর বিধায়কপদে ইস্তফার পর বিজেপি-র এই দাবি আরও জোরাল হয়েছে যে, তৃণমূলে বড়সড় ভাঙন ধরতে পারে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠরা তাঁদের প্রশাসনিক পদে ইস্তফা দিতে শুরু করেছেন। এর পর সেই ইস্তফার হিড়িক আরও বাড়ে কি না, তার দিকে আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে গোটা রাজ্য। তার মধ্যেই ইন্ধন দিয়েছে শুভেন্দুর রাজ্যপালকে লেখা একটি চিঠি। যেখানে তিনি রাজ্যের সাংবাধিনিক প্রধানের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে লিখেছেন, তাঁর অবস্থান বদলের পর থেকেই ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র বশে পুলিশ-প্রশানকে দিয়ে তাঁর এবং তাঁর অনুগামীদের ফৌজদারি মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। যে চিঠিকে মমতার ঘনিষ্ঠরা ব্যাখ্যা করছেন এই বলে যে, ‘‘লড়াই শুরুর আগেই শুভেন্দু ভয় পেয়ে গিয়েছেন। নইলে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে ওই চিঠি লিখতেন না।’’ আবার শুভেন্দু-অনুগামীদের দাবি, ‘‘রাষ্ট্রশক্তির রোষ থেকে বাঁচতে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের হস্তক্ষেপ চাওয়াটা ভয় নয়, নাগরিকের অধিকারের মধ্যে পড়ে।’’

আরও পড়ুন: দিদি-ফোনের পরেও সুনীলের বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর বৈঠক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE