Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Suvendu Adhikari

শুভেন্দুর তৃণমূল-ত্যাগ সময়ের অপেক্ষা: কৈলাস

বিজেপির দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অর্জুন সিংহও আলাদা ভাবে বলেছেন, বিজেপিতে শুভেন্দু স্বাগত। তাঁর আর তৃণমূলে থাকা উচিত নয়

রামনগরে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। —নিজস্ব চিত্র।

রামনগরে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। —নিজস্ব চিত্র।

কেশব মান্না
রামনগর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৩
Share: Save:

যে রামনগরে দাঁড়িয়ে দু’দিন আগে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, তিনি তৃণমূলেই আছেন, শনিবার সেই রামনগরে দলীয় সভায় দাঁড়িয়েই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করলেন— শুভেন্দুর দল ছাড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা!

এদিন বিজেপির দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অর্জুন সিংহও আলাদা ভাবে বলেছেন, বিজেপিতে শুভেন্দু স্বাগত। তাঁর আর তৃণমূলে থাকা উচিত নয়।

মন্ত্রী শুভেন্দুর রাজনৈাতিক অবস্থান নিয়ে কিছুদিন ধরেই হেঁয়ালি ও ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় তৃণমূল নেতৃত্বও এবার বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে চাইছেন। দলের শীর্ষ স্তর থেকে ইতিমধ্যে এই আভাস দেওয়া হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের শীর্ষস্তরের নেতাদের নিয়ে তাঁর বাড়িতে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, সেখানে অন্যান্য সাংগঠনিক বিষয়ের সঙ্গে শুভেন্দু- প্রসঙ্গ ওঠে। দল মনে করে, শুভেন্দু যদি তৃণমূলে থেকেও তাঁর ‘দলবিরোধী অবস্থান’ বজায় রাখেন তাহলেও তাঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া পদক্ষেপ করা উচিত হবে না। বরং সেক্ষেত্রে দলের মধ্যেই তাঁকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে ফেলতে হবে। যদি তা হয় তাহলে মন্ত্রী হিসেবে শুভেন্দুর হাতে যে সব দফতর আছে, তিনি আরও যে সব পর্ষদ বা নিগমের দায়িত্বে রয়েছেন সেগুলির পুনর্বিন্যাসের কথা ভাবতে পারে তৃণমূল। দলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দু নিজেই ক্রমশ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মতো জায়গা তৈরি করে দিচ্ছেন, এটা ঠিক। কিন্তু দল যদি আগে ব্যবস্থা নেয় তাহলে তিনি ‘সহানুভূতি’ আদায়ের পরিসর পেয়ে যেতে পারেন। সেই জন্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের দল সতর্ক।’’

আরও পড়ুন: কাজের ‘স্বাধীনতা’ চান ক্ষুব্ধ শুভেন্দু, আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় সৌগত

আরও পড়ুন: ‘বহিরাগত’ তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ দিলীপের

রামনগর রেলস্টেশন সংলগ্ন মাঠে দলীয় সভায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কৈলাস এদিন বলেন, ‘‘দিদি এখন আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। দল পরিচালনার দায়িত্ব বহিরাগত ভুয়ো সংস্থাকে দিয়েছেন। তৃণমূল এখন দিদির পার্টি নয়। তৃণমূল মুকুলদার নয়। তৃণমূল শুভেন্দু অধিকারীর নয়। শুভেন্দু এখন দলকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত।’’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য এদিন বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী কী করবেন তা আমার জানা নেই।’’ রামনগরে বিজেপি সভায় যোগ দিতে এসে অর্থবহ একটি মন্তব্য করেছেন তৃণমূল থেকে আসা সব্যসাচী দত্তও। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলন হয়েছিল বলে আমরা বিধায়ক হয়েছিলাম।’’ পর্যবেক্ষকদের মতে,তাঁর এই মন্তব্য কার্যত মমতার নেতৃত্বে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন।

জনসভায় বিজেপি নেতৃত্বের এই দাবি নিয়ে ‘বিদ্রোহী’ শুভেন্দুর কোর্টেই বল ঠেলেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘‘বিজেপির নেতারা যাঁর সম্পর্কে এ কথা বলছেন, তাঁরই তো প্রতিবাদ করা উচিত। তিনি তো কিছু বলছেন না।’’ তবে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে শুক্রবার তিনি ‘অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগে’র যে অভিযোগ তিনি করেছিলেন এদিন ফের তা সামনে এনে কল্যাণ বলেন, ‘‘তাঁর ( শুভেন্দু অধিকারীর) এই নীরবতার অর্থ, আমরা ঠিকই বলছি। দলের সদস্যপদ, মন্ত্রিত্ব রেখেই অন্য দলে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’

শুভেন্দু কি বিজেপিতে যাবেন? বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘‘শুভেন্দুর জন্য বিজেপির দরজা খোলা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে ওঁকে স্বাগত।’’ ব্যারাকপুরে একই দাবি করেছেন অর্জুনও। এ প্রসঙ্গে কল্যাণের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির উৎসাহই বলে দিচ্ছে কার, কোথায় যোগাযোগ।’’ শুভেন্দুর পিতা, তথা তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী স্পষ্টই বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দুর নাম ভাঙিয়ে কেল্লাফতে করতে চাইছে ওরা (বিজেপি)। শুভেন্দু নিজের মুখে নিজের অবস্থান জনসমক্ষে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না।’’

এ দিকে, রামনগরে বিজেপি-র এই ‘যোগদান মেলা’ কর্মসূচিতে রামচন্দ্র দাস নামে এক ব্যবসায়ী যোগদান করেছেন। তবে কলকাতায় দলের রাজ্য দফতরে পূর্ব মেদিনীপুরের ২২ জন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এঁদের বেশিরভাগই বাম নেতা-নেত্রী বলে পরিচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari BJP TMC Kailash Vijayvargiya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE