Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Singer

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, অনটনে স্বপ্ন ভাঙলেও সুরে অটুট বাবলু

রায়গঞ্জেরই বারোদুয়ারির একটি চালকলের কর্মী বাবলুর গাওয়া মান্না দে-র ‘এ নদী কেমন নদী...জল চাই একটু যদি’ এখন ‘ভাইরাল’।

শিল্পী: আনাজের দোকানের বসে গান শুনিয়েছেন বাবলু। নিজস্ব চিত্র

শিল্পী: আনাজের দোকানের বসে গান শুনিয়েছেন বাবলু। নিজস্ব চিত্র

গৌর আচার্য 
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:০৩
Share: Save:

‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ বাড়িতে। একচিলতে ঘরে স্ত্রী, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সংসার। ছোটবেলা থেকেই অনটন সঙ্গী। তার জেরে হারিয়েছেন পছন্দের অনেক কিছুই।

কিন্তু প্রবল জীবন-যুদ্ধেও সুর যে তাঁকে কখনও ছেড়ে যায়নি, তারই প্রমাণ দিলেন বছর আটান্নের বাবলু দাস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যাওয়া রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লির সেই বাসিন্দার বাংলা গানের কয়েক কলিতে মেতেছে গোটা বাংলা।

রায়গঞ্জেরই বারোদুয়ারির একটি চালকলের কর্মী বাবলুর গাওয়া মান্না দে-র ‘এ নদী কেমন নদী...জল চাই একটু যদি’ এখন ‘ভাইরাল’। ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ মানুষ শুনেছেন সেই গান। তা শেয়ার-ও হচ্ছে অনেক।

প্রথাগত সঙ্গীতের তালিম ছাড়াই বাবলুর গাওয়া ওই গান শুনে অবাক শহরবাসীদের অনেকেই।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বাবলুর স্ত্রী মিলি গৃহবধূ। তাঁদের ছেলে রতন বছর দুয়েক আগে স্নাতক পাশ করে এখন প্রাইভেট টিউশন পড়ান। শহরের রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় দেড়কাঠা জমির এক পাশে ছোট্ট ঘরে তিন জেনর সংসার। বাবলু জানান, ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত যাত্রাপালা দেখতে ও বিভিন্ন শিল্পীর বাংলা গান শুনতে ভালবাসেন। ছোটবেলা থেকেই মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোর কুমার, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের বিভিন্ন গানের ভক্ত তিনি। সময় পেলে মাঝেমধ্যে এখনও তিনি সেই সব শিল্পীদের গান শোনেন। বাবলু জানান, অনেক যাত্রাশিল্পীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। তাঁদের মাধ্যমেই সত্তরের দশকে একাধিক যাত্রাপালায় তিনি কয়েক বার গানও গেয়েছেন।

বাবলু জানান, তাঁর বাবার পরামর্শে নারায়ণ কুণ্ডুর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। কয়েক মাস তালিম নেওয়ার পরে অনটনের জেরে তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এর পরে সংসারের হাল ধরতে কখনও দিনমজুরি, কখনও বিভিন্ন দোকানে কাজ করতে শুরু করেন। তবে তারই ফাঁকে সময় পেলে বন্ধু ও পরিচিতদের বাংলার প্রথিতযশা শিল্পীদের গান শোনাতেন। তিনি জানান, সবাই-ই তাঁর গানের প্রশংসাও করতেন।

বাবলু বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই গানের তালিম নিয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতাম। সে জন্যই ভর্তি হয়েছিলাম সঙ্গীত শিক্ষকের কাছেও। কিন্তু সংসারের প্রবল অনটনের চাপে সেই স্বপ্ন এখন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। এখনও রাতে হারমোনিয়াম কেনার স্বপ্ন দেখি।’’

সপ্তাহখানেক আগে রায়গঞ্জের অশোকপল্লি এলাকার বাসিন্দা বাপ্পা মুখোপাধ্যায় তাঁর মোবাইলে বাবলুর গানের ভিডিয়ো রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ওই ভিডিয়োই ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। বাপ্পার কথায়, ‘‘মোহনবাটী বাজারে আনাজ কিনছিলাম। ওঁকে একটি দোকানের সামনে বসে গান করতে দেখি। তাঁর একটি গানের ভিডিয়ো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিলাম।’’ বাবলুর একটি গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন তিনি।

রায়গঞ্জের মধ্যমোহনবাটী এলাকার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবীণ শিক্ষিকা রুমালি কর্মকারের বক্তব্য, ‘‘উনি সুযোগ পেলে একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতেন, এখনও পারেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE