Advertisement
১০ মে ২০২৪

মা-বাবার সম্পর্কের জেরে দু’বছরের শিশুর ময়না-তদন্ত

পুলিশ জানিয়েছে, গত বুধবার রাত আটটা নাগাদ পার্ক স্ট্রিটে ফুটপাথে এক কিশোরকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখা যায়। সন্দেহ হওয়ায় বহুক্ষণ ধরে তাকে নজরে রাখেন পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কর্তব্যরত কলকাতা পুলিশের সাউথ ট্র্যাফিক গার্ডের দুই কনস্টেবল ভাস্কর রুইদাস এবং অরূপ মুখোপাধ্যায়।

অরুন্ধতী

অরুন্ধতী

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৭
Share: Save:

মৃত্যুতেও শেষ হল না টানাপড়েন!

বাবা-মায়ের সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে দড়ি টানাটানি হয়েছিল একরত্তিতে মেয়েটাকে নিয়েও। সেই টানাটানি চলল মৃত্যুর পরে ময়না-তদন্ত পর্বেও।

বুধবার রাত দু’টো নাগাদ বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় দু’বছরের অরুন্ধতী ভদ্র। চিকিৎসা চলাকালীন তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে বাবা রামচন্দ্র ভদ্র এবং মা দেবযানী গোস্বামীর দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। মৃত্যুর পরেও জারি থাকল লড়াই। বৃহস্পতিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে পূর্ব বর্ধমান থেকে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়। ময়না-তদন্ত কোথায় হবে, শুক্রবার দিনভর তা নিয়েও চলে জটিলতা।

বৃহস্পতিবার দেবযানী অরুন্ধতীর দেহ পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে নিয়ে যান। তাঁর দাবি, রামচন্দ্রকে এসএমএস করে মৃত্যু সংবাদ জানানোর পরেও তিনি জবাব দেননি। যদিও শুক্রবার রামচন্দ্র জানান, রাতে এসএমএস দেখেননি। কিন্তু পরদিন এসএমএস দেখেই তিনি দেবযানীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ততক্ষণে মৃতদেহ নিয়ে তিনি মেমারি চলে গিয়েছেন।

অরুন্ধতীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে রামচন্দ্র বৃহস্পতিবার পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এনআরএসের রেডিওলজি বিভাগের ওই চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থেকে মৃতদেহ কলকাতায় নিয়ে আসে। শুক্রবার কাটাপুকুরে ময়না-তদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানেও তৈরি হয় জটিলতা। রামচন্দ্র দাবি করেন, পুলিশের কাছে প্যাথোলজিক্যাল ময়না-তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কাটাপুকুরে সেই পরিকাঠামো নেই। এ দিন বিকেলে পুলিশ মৃতদেহ মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেয়। অরুন্ধতীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল জানিয়েছে শনিবার ময়না-তদন্ত হবে।

দেবযানী ও রামচন্দ্র

এ দিন দেবযানী বলেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক মেনে নিয়েছিলাম। ওর বাবার জন্যই কাটাছেঁড়া করতে হবে। জানি না, এই টানাপড়েন কবে শেষ হবে!’’ রামচন্দ্রের পাল্টা দাবি, ‘‘বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই ঠিক ভাবে ময়না-তদন্ত হওয়া জরুরি। সর্বোচ্চ মানের ময়না-তদন্ত হলেই অরুন্ধতীর মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত সব উত্তর মিলবে। অরুন্ধতীর মায়ের জন্যই টানাপড়েন বাড়ছে। ওঁর জন্যই এ দিনও ময়না-তদন্ত আটকে গেল।’’

ঘটনার সূত্রপাত গত বছর অগস্টে। গত বছরের মার্চ মাসে চার বছরের বিবাহিত জীবনে দাড়ি টানেন চিকিৎসক দম্পতি রামচন্দ্র ও দেবযানী। দেবযানীর কাছে থাকত তাঁদের দু’বছরের মেয়ে অরুন্ধতী। গত বছর দুধ খাওয়ার সময়ে ছোট্ট অরুন্ধতীর গলায় আটকে যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, শ্বাসনালীতে খাবার আটকে কিছুক্ষণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন যেতে পারেনি। যার জেরে মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কোমায় চলে গিয়েছিল ছোট্ট অরুন্ধতী। তাকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছিল। তখন রামচন্দ্র স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল, অরুন্ধতীর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে। টাকার জন্য দেবযানী ভেন্টিলেশনে রাখার অভিনয় করছেন।

মাস কয়েক আগে আদালতের নির্দেশে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের নয় চিকিৎসকের দল শিশুটিকে দেখতে যান। তাঁরা জানান, অরুন্ধতীর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়নি। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাবা-মায়ের দড়ি টানাটানি চললেও অরুন্ধতীকে আর ভেন্টিলেশনে থাকতে হল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Autopsy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE