Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Puja

ভেবে দেখুন, পুজোর পরে হাসপাতালে শয্যা থাকবে না

পুজোয় জনসমাগম যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় এবং তার মধ্যে অল্প সংখ্যক মানুষেরও যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, তা হলে সেই শয্যা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ছে ডাক্তারদের। 

ঠাসাঠাসি: পুজোর কেনাকাটার ভিড়ে শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। শনিবার সন্ধ্যায়, হাতিবাগানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঠাসাঠাসি: পুজোর কেনাকাটার ভিড়ে শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। শনিবার সন্ধ্যায়, হাতিবাগানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অর্জুন দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৩
Share: Save:

সেপ্টেম্বরে এ রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি একটা স্থিতিশীল জায়গায় এসে গিয়েছিল। গড় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের আশপাশে ঘুরছিল। প্রতিদিন প্রায় ৪৫০০০ কোভিড পরীক্ষা হচ্ছিল। হঠাৎ করেই ফের বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। আমরা ডাক্তারেরা মনে করছি, বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে ক্রমবর্ধমান জনসমাগমই এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

অতিমারির পরিস্থিতিতে জনসমাগম ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দেখা গিয়েছে সেই যোগাযোগ। কারণ, এত দিনে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন, এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে করোনাভাইরাস কী ভাবে ছড়ায়। এর পিছনে অন্যতম কারণ ভিড়ের আকার, কত কাছাকাছি মানুষ আসছেন এবং জায়গাটি বাতাস চলাচলের পক্ষে কতটা খোলা অথবা বদ্ধ। এক জন মানুষকে ‘সুপার স্প্রেডার’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে এই সব কারণের অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে বলেই মত।

সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে বস্টনের একটি ওষুধ সংস্থার সম্মেলন ও ওয়াশিংটনের একটি গির্জার জনসমাগম নিয়ে গবেষণা আমাদের আগামী পুজোর দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে, তার কিছুটা আভাস দিয়েইছিল। এ ছাড়াও মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ধর্মীয় সমাগম, পুণের গণেশ পুজো, ভুবনেশ্বরে এবং পুরীতে রথযাত্রা-পরবর্তী করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের আশঙ্কায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।

এরই মধ্যে রয়েছে ছ’মাস ধরে বাড়িতে আটকে থাকার ফলে মানসিক ও আর্থিক বিপর্যয়। সেই বিপর্যয় কাটাতে বহু মানুষ ভিড় উপেক্ষা করেই বেরিয়ে পড়ছেন রুজির টানে। এ বার সঙ্গে যোগ হচ্ছে প্রচারের অভাব, নির্লিপ্ততা। যে কারণে মানুষের মনে ‘হচ্ছে হবে দেখা যাবে’ ভাব ক্রমেই বাড়ছে।

অন্য বছরের মতো এত না হলেও এ বার যদি ষষ্ঠী থেকে দশমী পথে জনসমুদ্র নামে, তবে পরিস্থিতি কী হবে, তা আন্দাজ করেই ডাক্তারেরা ভীত হয়ে পড়ছি। এই আতঙ্কের দোসর, সমাজে কোভিড রোগকে সম্পূর্ণ কলঙ্ক হিসেবে দেগে রাখা। যে কারণে পাড়ার লোকের কাছে বার বার হেনস্থার শিকার হয়েছেন কোভিড রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার উপরে রয়েছে কোভিড চিকিৎসার বিপুল খরচের বোঝা। এ সব মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই অল্প জ্বর কিংবা কাশি হলেও বহু মানুষ কোভিড পরীক্ষা না করিয়ে রাস্তায় ঘুরে সংক্রমণ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।

গত এক সপ্তাহ ধরেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যার অভাব দেখা দিয়েছে। পুজোয় জনসমাগম যদি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় এবং তার মধ্যে অল্প সংখ্যক মানুষেরও যদি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, তা হলে সেই শয্যা কোথা থেকে আসবে, সেই চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ছে ডাক্তারদের।

তবে এই সমস্যার সমাধানের পথ প্রশাসনকেই খুঁজতে হবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, উৎসবের মরসুমে দূরত্ব-বিধি মানা, হাত ধোয়া এবং সর্বোপরি মাস্ক পরা যেন সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। যেন জনসমক্ষে এই কথাগুলো নিয়ে বার বার আলোচনা হয়। যাতে সাধারণ মানুষ এবং পুজোর উদ্যোক্তাদের কাছে তা পৌঁছয়। এর ফলে আয়োজকরাই প্রশাসনের পাশে থেকে ভিড় আটকাতে কিছু হলেও সচেতন থাকবেন।

অনেক পুজো উদ্যোক্তা নিজেরাই পুজোর আয়তন কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বহু মানুষ অসচেতনতা থেকেই মাস্ক না পরে কাছাকাছি আসতে শুরু করেছেন। এই ভাবে চললে দুর্গাপুজোর পরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। ভেবে দেখবেন, হাসপাতালে শয্যা থাকবে না, সংক্রমিতের পরিজনদের আক্রোশ ডাক্তারদের উপরে পড়বে। এই পরিস্থিতি আগাম দেখতে পাচ্ছি আমরা। তাই আশঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

লেখক: ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE