Advertisement
১০ মে ২০২৪

দানের দেহ নিতে অনীহা, মৃতকে নিয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরল পরিবার

অঙ্গীকারপত্রে সই থাকা সত্ত্বেও দেহদান করতে গিয়ে এ বার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হল হাওড়ার ভোলানাথ কোলের পরিবারকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫১
Share: Save:

সঙ্কটাপন্ন রোগীকে নিয়ে হন্যে হয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘোরার ঘটনা আকছার ঘটে কলকাতায়। অঙ্গীকারপত্রে সই থাকা সত্ত্বেও দেহদান করতে গিয়ে এ বার এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হল হাওড়ার ভোলানাথ কোলের পরিবারকে।

দেহদানের আন্দোলনে যুক্ত সংস্থার কর্মীরা সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও হয়রানির শিকার হওয়ায় এক সময় দেহদানের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে চেয়েছিল মৃতের পরিবার। শেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তারা দেহটি দান করে আরজি কর হাসপাতালে।

বাউড়িয়ার সন্তোষপুরের বাসিন্দা ভোলানাথবাবু গত জুনে দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেন। শনিবার ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তাঁর ছোট জামাই পীযূষবাবু সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই সংস্থা দু’ঘণ্টার মধ্যে ভোলানাথবাবুর দু’টি চোখ বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। সংস্থার তরফে দেবাশিস মাহাতো জানান, এত দূর থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হবে। তাই আগে থেকে ফোন করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেহ নিয়ে যাওয়ার পরে অ্যানাটমি বিভাগের ওয়ার্ডমাস্টার জানান, তিনি সেটি নেবেন না। কারণ, দেহদানের জন্য ওই হাসপাতালের ফর্ম পূরণ করতে হবে। বাইরের কোনও সংস্থার ফর্ম পূরণ করলে হবে না। তার পরে যোগাযোগ করা হয় সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু তারা জানায়, তাদের মেশিন খারাপ, তাই দেহ নেওয়া যাবে না। রাতে দেহটি নেয় আরজি কর।

দেহ নিয়ে এমন হয়রানি নতুন কিছু নয় বলে জানান ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভিযোগ, ফর্ম পূরণের বিষয়টি আসলে অজুহাত। দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই থাকলে হাসপাতালের ফর্ম পূরণ তৎক্ষণাৎ করে নেওয়া যায়। আসলে এর পিছনেও রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কাজের প্রতি অনীহা। দেহ নিয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে সেটি সংরক্ষণ করতে হয়। বিকেলের পরে চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মী সেই কাজ করতে চান না বলে অভিযোগ। দেহদান আন্দোলনে যুক্ত ওই সংস্থার কর্ণধার ব্রজ রায় জানান, সম্প্রতি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করা থাকলে বা কেউ দেহদান করতে চাইলে সরকারি হাসপাতালগুলিকে সারা দিনই দেহ নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যে তা হচ্ছে না, ভোলানাথবাবুর পরিবারের হয়রানিই তার সাম্প্রতিক প্রমাণ।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র অবশ্য বলেন, ‘‘আগে থেকে অঙ্গীকারপত্র সই থাকলে দেহ ফেরত দেওয়ার কথা নয়। তবে অ্যানাটমি বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে মৃতদেহ রাখা হয় পুলিশ মর্গে। পরের দিন ওই বিভাগ দেহ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে দেয়।’’

ভোলানাথবাবুর ক্ষেত্রে কলকাতা মেডিক্যাল বা সাগর দত্ত মেডিক্যালে সেটা করা হল না কেন?

উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dead Body Hospital Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE