Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঘর বাঁধতে ঘর ছাড়লেন দুই যুবতী

‘পাত্রী’র পরিবারের বাধা থাকলেও শনিবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘর ছাড়লেন দু’জন। ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে। সাক্ষী রইল পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বেরেলা গ্রাম।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

‘প্রেমিকা’র বাড়ি গিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে চাইলেন যুবতী। ‘পাত্রী’র পরিবারের বাধা থাকলেও শনিবার দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘর ছাড়লেন দু’জন। ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে। সাক্ষী রইল পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বেরেলা গ্রাম।

বেরেলার বাসিন্দা বছর তেইশের কলেজছাত্রীর সঙ্গে হুগলির সিঙ্গুরের বারুইপাড়ার বছর চব্বিশের যুবতীর পরিচয় বছর চারেক আগে। ব্যান্ডেলে ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (এনসিসি) শিবিরে। আলাপ ঘনিষ্ঠতায় বদলায়। দু’জনেই বাড়িতে জানান সম্পর্কের কথা। পছন্দের কথা। হুগলির যুবতী জানান, তাঁর মা এই সম্পর্কের কথা জেনে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন। তিনি বারুইপাড়ায় ভাড়া থাকেন। মেয়ে ‘মেয়েকে বিয়ে করতে চায়’ জেনে বাধা আসে জামুড়িয়ার পরিবারটি থেকেও। কিন্তু এক সঙ্গে থাকার ভাবনা বদলাননি দুই কন্যা।

শুক্রবার দুপুরে জামুড়িয়ায় আসেন সিঙ্গুরের মেয়েটি। প্রস্তাব দেন ‘বিয়ে’র। বাধা হয়ে দাঁড়ান জামুড়িয়ার যুবতীর বাবা, মা। তবে কলেজছাত্রী বলে দেন, ‘‘আমরা দু’জন দু’জনকে ছাড়া বাঁচব না।’’ হুগলির যুবতীও বলেন, ‘‘আমি কলকাতার এক হাসপাতালে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করি। দু’জনের সংসার ঠিক চালিয়ে নিতে পারব। আমাদের বাধা দেওয়া হলে দরকারে পুলিশ, মানবাধিকার কমিশন—সর্বত্র যাব।’’ রাতভর চলে কথা কাটাকাটি। যুক্তি, পাল্টা যুক্তি। পরে, শনিবার কলেজছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘তোরা বেরিয়ে যা। আর কোনও দিন এ বাড়িমুখো হবি না। আইন, সমাজ এ সম্পর্ক মানবে না।’’

আরও পড়ুন: ‘আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না-হয়’

একবস্ত্রে বাড়ি ছাড়তে রাজি হয়ে যান কলেজছাত্রী। ঘটনা জানাজানি হতে জমে ওঠে পাড়াপড়শিদের ভিড়। খবর যায় পুলিশেও। তবে শ্রীপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানিয়ে দেয়, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক এক সঙ্গে থাকতে চাইলে, বাধা দেওয়া যায় না। দুই যুবতীকে বাসে তুলে দেয় তারা। ঘরছাড়ার আগে মেয়েরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা বারুইপাড়ার ভাড়াবাড়িতে থাকবেন। তবে পরে হুগলির মেয়েটি ফোনে জানান, আপাতত বর্ধমানের কোনও জায়গায় উঠবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: গরুর ‘ধাক্কায়’ হোঁচট খেল বন্দে ভারত

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ‘হিন্দু বিবাহ আইন’ অনুযায়ী, দু’জন মেয়ের বিয়ে সম্ভব নয়। তবে তাঁদের এক সঙ্গে থাকাতে বাধা নেই। ঘটনা শুনে সাহিত্যিক জয়া মিত্র বলেন, ‘‘দু’টি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে বিয়ে করতে চেয়ে পালিয়ে গেলে তো আমরা এমন ভাবে মাথা ঘামাই না। তা হলে এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন কেন? পরিণত বয়সের দু’জন প্রেম করে নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বেশ করেছেন।’’

সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের মত, ‘‘উচ্চবিত্তেরা নিজেদের যৌন পছন্দকে প্রকাশ্যে আনছেন, এমনটা দেখা যায়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত পরিবারের দু’টি মেয়ে এ ভাবে সমাজ-সংস্কারের বাধা ডিঙিয়ে নিজেদের ভাবনাচিন্তাকে যে ভাবে সামনে আনলেন, তাকে কুর্নিশ।’’ জামুড়িয়ার ছাত্রীটি যে কলেজে পড়তেন, সে কলেজের অধ্যক্ষ ছবি দে বলেন, ‘‘চাইব, ওঁরা নিরাপদে থাকুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Love Marriage LGBTQ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE