প্রতীকী ছবি।
ছোট থেকে একসঙ্গে বাস। একসঙ্গে বড় হওয়া। উৎসবে তাঁরা একসঙ্গে মাততেন। হাওড়ার উলুবেড়িয়া ফতেপুরের বাসিন্দা রঘুনাথ কুমারের মৃত্যুতে তাই তাঁর পরিবারের পাশে থাকতে এক মুহূর্ত ভাবেননি পড়শি শেখ আব্দুর রহমান, শেখ জাহিরুদ্দিন, শেখ পিয়ার আলিরা। বৃহস্পতিবার সকালে শ্মশানযাত্রা থেকে দাহকাজের ব্যবস্থা— এগিয়ে এলেন সবেতেই।
বছর একষট্টির রঘুনাথ আদপে ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। বছর চল্লিশ আগে মায়ের সঙ্গে কাজের খোঁজে চলে আসেন ফতেপুরে। পিয়ার আলির বাড়িতে তাঁদের ঠাঁই হয়। সেই থেকে রয়ে গিয়েছিলেন। বছর আটেক আগে রঘুনাথের মা মারা যান। স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে থাকতেন রঘুনাথ। দিনমজুরের কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির শৌচাগারে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। শৌচাগারে তাঁর পড়ে যাওয়ার কথা শুনে চলে আসেন আব্দুর। পড়শিদের ডাকেন। চিকিৎসক ডাকেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি।
এলাকাটির বেশির ভাগ বাসিন্দা মুসলিম সম্প্রদায়ের। কাছাকাছি রঘুনাথদের কোনও আত্মীয়স্বজনও নেই। দেহ সৎকারে কাকে ডাকবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না রঘুনাথের ভাই রামেশ্বর এবং স্ত্রী বাসন্তী কুমারী। আব্দুররাই ভরসা দেন। তাঁরা একজোট হন। কেউ কিনে আনেন খাট, কেউ গীতা, কেউ মালা, কেউ নামাবলি। নিজেরাই কাঁধে করে দেহ নিয়ে যান উলুবেড়িয়ার শতমুখী শ্মশানে। সেখানে নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ কেটে দাহ কাজে সহযোগিতা করেন।
আব্দুরের কথায়, ‘‘হিন্দু মতে সৎকার করার জন্য পাশের গ্রাম থেকে একজনকে ডাকা হয়। তাঁর কথামতোই সব কিছু জোগাড় করে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করলাম। প্রথমটা সঙ্কোচ হচ্ছিল। ভাবছিলাম, যদি কেউ কিছু বলেন। পরে ভাবলাম, বিপদে মানুষের পাশে থাকাই তো বড় ধর্ম।’’
রামেশ্বর বলেন, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে বড় হয়েছি। পুজোয় যেমন ওঁরা আনন্দ করেন, আমরাও ইদে আনন্দ করি। দাদার মৃত্যুর পর আব্দুর ভাই, জাহিরুদ্দিন ভাইরাই সব কাজ করেছেন। এই বিপদে ওঁরা পাশে না থাকলে সমস্যায় পড়তাম।’’ একই কথা বলেন মৃতের স্ত্রীও, ‘‘এই ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে কাছে পাব ভাবতে পারিনি। আজ মনে হচ্ছে জাতপাত কিছুই না। মানুষের পাশে থাকাই বড় ধর্ম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy