Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
NPR

রাজ্যে অনিশ্চিত জনগণনা, ধাক্কা চলবে ১০ বছর!

রাজ্য তথা দেশের সব ধরনের আর্থিক সমীক্ষার অন্যতম মূল ভিত্তি জনগণনার তথ্যভান্ডার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

এপ্রিলের প্রথম দিনে শুরু হয়ে ছ’মাস ধরে জনগণনার কাজ চলবে দেশে। কিন্তু তার মধ্যে এ রাজ্যে সেই কাজ হবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। কাজটা না-হলে কী কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধছে বিভিন্ন মহলে। জনগণনা নিয়ে রাজ্যে চলতে থাকা সাম্প্রতিক ‘অস্পষ্টতা’ ঘিরে আমলা-আধিকারিক এবং সংশ্লিষ্ট অনেক বিশেষজ্ঞেরই আশঙ্কা, ঠিক সময়ে এবং যথাযথ পদ্ধতিতে আদমশুমারির কাজ না-হলে তা সব ধরনের আর্থিক সমীক্ষার উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এবং তার ধাক্কা সামলাতে হবে আগামী অন্তত ১০টি বছর।

রাজ্য তথা দেশের সব ধরনের আর্থিক সমীক্ষার অন্যতম মূল ভিত্তি জনগণনার তথ্যভান্ডার। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেই তথ্যভান্ডার ঠিক ভাবে তৈরি না-হলে এই সব সমীক্ষা ধাক্কা খাবে। সাধারণ মানুষের সহায়ক প্রকল্প বা কর্মসূচি সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তও নেওয়া যাবে না। আমলা-আধিকারিক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণনা প্রক্রিয়ায় কোনও কারণে গোলমাল হলে নির্দিষ্ট কোনও রাজ্য নয়, ফল ভুগতে হবে গোটা দেশকেই।

মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান বা বেকারত্বের হার, সাধারণের ক্রয়ক্ষমতা, পারিবারিক আর্থিক পরিস্থিতি, ব্যয় করার ক্ষমতা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের অবস্থা, কৃষি এবং অকৃষি ক্ষেত্রের পরিস্থিতি— গোটা দেশে এমন নানা বিষয়ে সমীক্ষা চলে। ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক সমীক্ষা থেকে দেশ বা রাজ্যের আর্থিক অগ্রগতি-উন্নয়নের ছবিটা যেমন বোঝা যায়, তেমনই সাধারণ মানুষের জন্য সহায়ক প্রকল্প রূপায়ণ বা তার পরিমার্জনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। জনগণনার চূড়ান্ত রিপোর্টকেই এই সব সমীক্ষার ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। তাই কোনও কারণে জনগণনার রিপোর্টে ত্রুটি থাকলে তা সার্বিক ভাবে সব সমীক্ষার উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রাক্তন মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ এবং নিখুঁত আর্থিক পরিসংখ্যান তৈরির পদ্ধতি খুঁজতে কেন্দ্রের গঠিত কমিটির প্রধান প্রণব সেন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অফিসারেরাই এই তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই কাজ ঠিকমতো না-হলে জনগণনার রিপোর্ট ঠিক হবে না। তার ভিত্তিতে তৈরি সব ধরনের আর্থিক সমীক্ষাও যথাযথ হবে না। এর ফল ভুগতে হবে পরবর্তী ১০ বছর।’’

আরও পড়ুন: বৈঠকে মমতা, আলোচনায় খুশি ধনখড়

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর, এই ছ’মাসের মধ্যে যে-কোনও ৪৫ দিন বেছে নিয়ে নিজেদের এলাকায় জনগণনার কাজ করার কথা রাজ্যগুলির। জেলা প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোন সময়ের ৪৫ দিন এ রাজ্যে জনগণনা হবে, তার নির্দিষ্ট কোনও তথ্য বা নির্দেশ তাদের কাছে নেই। ফলে গোটা রাজ্যে প্রশিক্ষণ, সমীক্ষক নিয়োগ-সহ জনগণনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম কার্যত বন্ধ।

আরও পড়ুন: দেশে মন্দা, তবু রাজ্য চাঙ্গা, দাবি অমিতের

এই পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আধিকারিক ও বিশেষজ্ঞ শিবিরের অনেকের বক্তব্য, এই সমীক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি চালাতে হয়। গণক নিয়োগ, এলাকা ভাগ করে তাঁদের করণীয় বুঝিয়ে দেওয়া এবং গণকদের স্তর বিন্যাস করে কয়েক দফা প্রশিক্ষণ-সহ নানান কাজ রয়েছে। তার পরে থাকে গণনার মূল কাজ। নির্ধারিত ছ’মাসের মধ্যে কোন ৪৫ দিন এ রাজ্যে আদমশুমারি হবে, তা নির্দিষ্ট না-হলে সমীক্ষায় সমস্যা তৈরি হতে পারে। ‘‘সমস্যা যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেরই হবে তা তো নয়। সমস্যায় পড়বে গোটা দেশই। জাতীয় স্তরে নীতি তৈরি করতে মুশকিল হবে,’’ বলছেন প্রণববাবু।

রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কেউ এই বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে রাজি নয়। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বলেন, ‘‘জনগণনার দিনক্ষণ না-জানানোর বিষয়টি ঘিরে পরিস্থিতি এখনও তেমন গুরুতর হয়নি। কিন্তু এটা ঠিক যে, এই সময়টা সমীক্ষার কাজ চালানোর পক্ষে অনুকূল নয়। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE