Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
kenduli

নদীর জীবন ফেরাতে কেন্দুলিতে অজয়ের তীরে সরব পরিবেশকর্মীরা

নদীর জন্য নয়, মানুষ নাকি বানভাসি হয় নিজের দোষেই। দাবি পরিবেশকর্মী কল্লোলের। কারণ, মানুষ নদীকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। তার দেওয়া কংক্রিটের বাঁধই নদীকে নষ্ট করেছে। ফলে সুন্দরবনের ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নদীকেন্দ্রিক পেশা হারিয়ে যাওয়া, সবকিছুর মূলেই খলনায়ক কৃত্রিম বাঁধ।

গঙ্গা-সহ দেশের সব নদীকে আবার স্রোতস্বিনী করে তোলার বার্তা প্রসারে নদীর পাড়কেই বেছে নিলেন একদল পরিবেশকর্মী। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গা-সহ দেশের সব নদীকে আবার স্রোতস্বিনী করে তোলার বার্তা প্রসারে নদীর পাড়কেই বেছে নিলেন একদল পরিবেশকর্মী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কেন্দুলি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:২০
Share: Save:

নিঃশব্দে নীরবেই বয়ে যায় গঙ্গা। তার বিস্তীর্ণ দু’পারের হাহাকার এখন নদীর নিজেরও। মাত্রাহীন দূষণের জেরে তার এখন পথ চলাই দায়। অবশ্য শুধু গঙ্গাই নয়। পরিবেশকর্মীদের দাবি, ভারতের সব নদীরই দুরবস্থা কমবেশি সমান। মানুষের অবিবেচক কাজে নদীরা কার্যত আজ মৃত। গঙ্গা-সহ দেশের সব নদীকে আবার স্রোতস্বিনী করে তোলার বার্তা প্রসারে নদীর পাড়কেই বেছে নিলেন একদল পরিবেশকর্মী। বীরভূমে অজয় নদের পাশে সমবেত হয়েছেন তাঁরা। পাশে আছেন স্থানীয় ‘শ্যামসখা আশ্রম’। প্রকৃতির সাধক বাউল, বৈষ্ণবদের পীঠস্থান কেন্দুলির জয়দেব মেলায় তাঁরা গলা মেলালেন প্রকৃতির জন্য। প্রতিবাদের প্রতীক স্বরূপ তাঁরা ‘গঙ্গার শ্রাদ্ধ’-ও সম্পন্ন করেন। কারণ তাঁদের কাছে দেশের বৃহত্তম নদী এখন নিষ্প্রাণ।

কথিত, কবি জয়দেব প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে মকরস্নান করতে যেতেন কাটোয়ার গঙ্গায়। এক বার তিনি এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন তাঁর জন্য মা গঙ্গা উজান বেয়ে অজয় নদে এসে মিলিত হবেন। তাই অজয় নদে স্নান করলেই গঙ্গাস্নানের ফল পাবেন জয়দেব। এই কাহিনির বিস্তারেই কেঁদুলির মেলাকে বাঙালি উৎসর্গ করেছে কবি জয়দেবের স্মৃতি তর্পণে। তার জেরেই রাজ্যে ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে পুণ্যস্নানের জন্য মেলায় আসেন বহু মানুষ।

সেই পুণ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে কল্লোল রায়ের প্রশ্ন, নদী যদি নিজেই দূষণের ভারে প্রাণহীন হয়, তবে সে কীভাবে সবুজকে লালনপালন করবে? নদী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও আন্দোলনের এই শরিকের কথায়, বন্যাকে আমরা নিজেরাই ‘আশীর্বাদ’ থেকে নিজেদের ‘অভিশাপ’-এ রূপান্তর করেছি। বন্যার পলিমাটিতে আরও সজীব হত জীবন। সেই বন্যা এখন মানুষের দুঃস্বপ্নের কারণ।

নদীর জন্য নয়, মানুষ নাকি বানভাসি হয় নিজের দোষেই। দাবি পরিবেশকর্মী কল্লোলের। কারণ, মানুষ নদীকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। তার দেওয়া কংক্রিটের বাঁধই নদীকে নষ্ট করেছে। ফলে সুন্দরবনের ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে নদীকেন্দ্রিক পেশা হারিয়ে যাওয়া, সবকিছুর মূলেই খলনায়ক কৃত্রিম বাঁধ।

প্রকৃতির সাধক বাউল, বৈষ্ণবদের পীঠস্থান কেন্দুলির জয়দেব মেলায় তাঁরা গলা মেলালেন প্রকৃতির জন্য-নিজস্ব চিত্র।

তাই পরিবেশ কর্মী কল্লোল রায়ের মতো বাঁধ ভেঙে দেওয়ার আওয়াজ তুলেছেন শ্যামসখা আশ্রমের সদস্যরাও। কিন্তু শুধু খাঁচা ভাঙলেই তো কাজ সম্পূর্ণ হবে না। যে সব নদীতে বাঁধ নেই, তারাও তো আজ বিপন্ন। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, আমরা নদীকে যেভাবে ব্যবহার করি এবং নদীর সঙ্গে যে ব্যবহার দুটোই অমানবিক। কিন্তু নদীর সঙ্গে ব্যবহার বলতে কী বোঝায়?

কেন? তার উদাহরণ তো পাশের অজয় নদ নিজেই। বলছেন, উপস্থিত পরিবেশকর্মীরা। ক্রমাগত বালি তোলার ফলে রাঢ়বঙ্গের এই নদী এখন ধুঁকছে। জল যেখানে সোহাগ করে স্থলকে ঘিরে রাখে, যেখানে কবির কবিতায় ছবির মতো গ্রামের বাড়ি থাকার কথা, সেখানে এখন দাঁড়িয়ে থাকে বালিভর্তি লরি। মকরসংক্রান্তি তিথির আগে ডিভিসি থেকে ছাড়তে হয়েছে বাড়তি জল।নইলে ক্ষীণ অজয়ে স্নান করবেন কী করে পুণ্যার্থীরা? এতটাই যান্ত্রিকতা জীবনে, যে কৃত্রিম উপায়ে পাওয়া জলেই সারতে হচ্ছে পুণ্যস্নান। আক্ষেপ পরিবেশকর্মীদের।

আরও পড়ুন: এনআরসি-র পক্ষে, বিপক্ষে স্টল মেলায়

তাঁদের কথায়, বালি, পাথর হল নদীর ফুসফুস। সেখানেই যদি মানুষ ছোবল দেয়, তবে নদীর জল শোধন হবে কী করে? পরিস্রুত জলের জন্য সবার আগে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ হওয়া দরকার। তার সঙ্গে দরকার রাসায়নিকবিহীন কৃষিকাজ। বহুমূল্য সরকারি ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্পের থেকে তাঁদের ভরসা স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রসারেই। সেই সচেতনতাই গঙ্গার দু’পাশের লক্ষজনের নৈতিকতার স্খলন আর মানবতার পতন রুখে তাঁদের সবল সংগ্রামী আর অগ্রগামী করে তুলবে। সহস্র বর্ষার উন্মাদনাতেই আশাবাদী উদ্যোগী পরিবেশকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE