সংসদে বেশ কয়েক বছর আগে পাশ হওয়া একটা আইন। সেই আইনই এখন দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতির শাসক ও বিরোধী শিবিরকে। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে— যে যায় লঙ্কায়, সে-ই কি হয় রাবণ?
ভাঙড়ে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন প্রকল্পের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ নিরোধক আইন বা ইউএপিএ ধারায় অভিযোগ এনেছে রাজ্য পুলিশ। সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত গ্রামবাসীর সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২২! আন্দোলনকারী নকশাল সংগঠনের নেতা-নেত্রী তো বটেই, গ্রামের মহিলা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও আছেন ওই তালিকায়। হাইকোর্টও পুলিশ-প্রশাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, গ্রামের প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমনের জন্য তৈরি আইন প্রয়োগ হচ্ছে কেন? অবিলম্বে ইউএপিএ প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ৮ মে কলকাতায় রাজভবন অভিযান করতে আসছেন ভাঙড়ের আন্দোলনকারীরা। যাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য বামপন্থী সংগঠন।
ইতিহাস বলছে, কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার ওই আইন পাশ করার পরে এ রাজ্যে প্রথম বার তা প্রয়োগ করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। মাওবাদীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মাওবাদী দলের মুখপাত্র গৌর চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে দেওয়া হয়েছিল ইউএপিএ-র ধারা। বামফ্রন্টের ভিতরে ও বাইরে প্রশ্ন উঠেছিল, যতই হিংসা করুক, একটা বামপন্থী দলের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-র আশ্রয় কেন নেবে কমিউনিস্ট একটা সরকার? সেই সময়ে ওই আইনের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে সরব ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এখন স্বভাবতই প্রতিবাদীদের প্রশ্ন, সরকারে এসে অতীত ভুলে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে সেই আইন কী ভাবে প্রয়োগ করছে মমতার সরকার?
শাসক তৃণমূলের নেতৃত্ব এমন প্রশ্নের মুখে ঈষৎ অস্বস্তিতে। কিন্তু তাঁরা আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, যে বামফ্রন্ট নিজেরাই ইউএপিএ কাজে লাগিয়েছিল, তাদের মুখে প্রতিবাদ কীসের? তার জবাবে বাম পরিষদীয় নেতা এবং ভাঙ়়ড় আন্দোলনের অন্যতম মুখ সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের অভিযোগ আছে, এমন কেউ ছা়ড়া ইউএপিএ প্রয়োগ হওয়ার নজির আছে বলে তো মনে হয় না। মাওবাদীদের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, তার সঙ্গে ভাঙড়ের গ্রামবাসীরা কি তুলনীয়?’’
দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের দিকেও। বাম জমানায় প্রতিবাদের পরে ইউএপিএ নিয়ে তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান কি বদলেছে? দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধু বলছেন, ‘‘নির্বিচারে ওই আইন প্রয়োগের আমরা বিরোধিতা করেছিলাম।’’ এখনকার আন্দোলনকারীদের দাবি, তৃণমূলের সরকার তো নির্বিচারেই ওই আইন প্রয়োগ করছে! লক্ষ্যণীয়, তৃণমূল বা সিপিএমের মতো বড় রাজনৈতিক দলগুলি সরাসরি ইউ ইউএপিএ তুলে দেওয়ার কথা বলছে না। বরং, সরকারে থাকলে সুবিধামতো সেই আইন প্রয়োগ করার অভিযোগে বিদ্ধ তারা। কিন্তু সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো ছোট বামপন্থী
দল এমন ‘দানবীয় আইন’ বিলোপ করার পক্ষে। লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘সন্ত্রাসের অভিযোগ বিচার করার জন্য এই রাষ্ট্রেরই তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধির নানা ধারা আছে। দিনের পর দিন জামিন না দিয়ে যেখানে আটকে রাখা যায়, তেমন আইন দরকার কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy