Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘নো সিআইএসএফ’, ডাক পোস্টারে

বিশ্বভারতীর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের তরফ থেকে জয়দীপ সাহা, রূপা চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর মুক্ত চিন্তার পরিসর, বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা তো জঙ্গি নয়! তা হলে এখানে কেন সিআইএসএফ ডাকা হবে? এই সিদ্ধান্ত মানব না। বিশ্বভারতী চত্বরে সিআইএসএফ এলে প্রতিবাদ হবে। বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’

বাসুদেব ঘোষ
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

প্রতিবাদ আছড়ে পড়ছে বিশ্বভারতীতে। পোস্টারে, সোশ্যালে—সর্বত্র। প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধা সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ। কিন্তু, খবর চাউর হতেই ক্ষোভ ও অসন্তোষের মেঘ ক্যাম্পাসে। ‘আমরা জঙ্গি নাকি?’—প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ক্যাম্পাস জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাতে লেখা, ‘নো সিআইএসএফ’! সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছেন পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ।

বস্তুত, সমাবর্তনের একেবারে মুখে সমাবর্তনের চেয়ে এখন আধা সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েই চর্চা সবচেয়ে বেশি বিশ্বভারতীতে। প্রশ্ন উঠছে একাধিক। যদি বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ মোতায়েন করা হয়, তাহলে কত জন জওয়ান থাকবেন? যেহেতু বিশ্বভারতীতে যেহেতু মুক্ত ক্যাম্পাস, তাই সে ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় জওয়ান মোতায়েন করা হবে? কেন্দ্রীয় বাহিনী নিরাপত্তার জন্য যে খরচ হবে, তা বিশ্ববিদ্যালকেই বহন করতে হবে। আর্থিক সঙ্কটে ভোগা বিশ্বভারতী সেই খরচ কী ভাবে সামলাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল।

বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ মোতায়েনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদে নামতে দেখা গিয়েছিল ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডিএসও-র সদস্যদের। এ দিন বিকেলে কলাভবন চত্বরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা একটি আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেন, বিশ্বভারতীতে সিআইএসএফ মোতায়েনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হবে একযোগে। সেই মতো এ দিন কলাভবন, শিক্ষাভবন, বিশ্বভারতীর কয়েকটি ছাত্রাবাসে, রতনপল্লি এবং আরোশ্রী মার্কেট চত্বরে আধাসেনা মোতায়েনের প্রতিবাদে পোস্টারিং করা হয়। কোনও পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘অবিলম্বে ক্যাম্পাসে সিআইএসএফ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’ কোনওটিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘গুরুদেবের মুক্ত শিক্ষাঙ্গনে বন্দুকধারী পাহারা কি দরকার!’ কিছু পোস্টারে লেখা আছে, ‘নিরাপত্তার নামে ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন দমন করা যাবে না।’

একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বহু মানুষ। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী থেকে বর্তমান ছাত্রছাত্রী এবং অনেক সাধারণ মানুষও আধা সেনা নিয়োগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক জন লিখেছেন, ‘শান্তিনিকেতনে আধা সেনা। বিশ্ববিদ্যালয় উপদ্রুত অঞ্চল নাকি? সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।’ আর এক জনের প্রশ্ন, ‘বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা কি জঙ্গি? হোক প্রতিবাদ!’ কেউ কেউ জানতে চাইছেন, ‘ক্যাম্পাস হবে কি মুক্তচিন্তার প্রাঙ্গণ? নাকি সিআইএসএফ বেষ্টিত জেলখানা?’

বিশ্বভারতীর সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের তরফ থেকে জয়দীপ সাহা, রূপা চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর মুক্ত চিন্তার পরিসর, বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা তো জঙ্গি নয়! তা হলে এখানে কেন সিআইএসএফ ডাকা হবে? এই সিদ্ধান্ত মানব না। বিশ্বভারতী চত্বরে সিআইএসএফ এলে প্রতিবাদ হবে। বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’ বিশ্বভারতীর ডিএসও ছাত্রসংগঠনের লোকাল কমিটির সদস্য অমিত কুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘সিআইএসএফ মোতায়েন করা হলে বিশ্বভারতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার যে পরিবেশ আছে, সেটা নষ্ট হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ছাত্রছাত্রীরা যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ না করতে পারেন, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এর প্রতিবাদে খুব শীঘ্রই হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিশ্বভারতীর সকল ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের আন্দোলনে নামার ডাক ডিএসও-র পক্ষ থেকে দেওয়া হবে বলেও অমিত জানিয়েছেন।

আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন আশ্রমিকেরাও। প্রবীণ আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদারের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতীর মতো জায়গায় এটা কাম্য নয়। বরং এটা যাতে কার্যকর না করা হয়, তার জন্য উপাচার্য, অধ্যাপক এবং ছাত্রছাত্রী— সকলে এক সঙ্গে বসে ভাবনা চিন্তা করা দরকার।’’

কিছুটা ভিন্নসুরও শোনা গিয়েছে। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সভার সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলছেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত অন্ধকারে রয়েছি। তবে এটা ঠিক, বিশ্বভারতীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে।’’ কর্মিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতীর অমূল্য সম্পদ, রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক চুরি গিয়েছে। সেটা সবাই জানেন। তাই সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বভারতীর বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা করা হলে, তাকে স্বাগত।’’ তবে, অস্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীরা যাতে কর্মহীন না হয়ে পড়েন, সেটাও কর্তৃপক্ষতের দেখা উচিত বলে তাঁর মত।

২০১৭ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আধা সেনার দাবি জানিয়েছিলেন। যদিও সে সময়ে সেই দাবি খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রক। প্রশ্ন রয়েছে সিআইএসএফে। আধা সেনা বাহিনীর একটি সূত্রের বক্তব্য, অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়া কোনও ব্যক্তিকে কী ভাবে শায়েস্তা করা যায়, তা বাহিনীকে শেখানো হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা তো জঙ্গি নয়। তাঁদের সঙ্গে কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে বাহিনীর কাছে কোনও প্রশিক্ষণ নেই। সূত্রের খবর, সেই কারণে বিশ্বভারতীতে মোতায়েন হলে বাহিনীর দায়িত্ব কী হবে, তা সিআইএসএফের তরফে বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে। তা স্পষ্ট হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shantiniketan Viswa Bharati CISF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE