Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মানত ছিল, তাই ৫ বছরেই শিবের সঙ্গে বিয়ে

পিয়ালির বাবা রাম পাল দরিদ্র চাষি। তাঁর মুখে মানতের কথা। রাম বলেন, ‘‘জন্ম থেকে পিয়ালি শুধু ভুগত। একমাত্র মেয়ের রোগ সারাতে গ্রামের শিব ঠাকুরের কাছে মানত করেছিলাম।

পাত্রী: কনের সাজে পিয়ালি পাল। —নিজস্ব চিত্র।

পাত্রী: কনের সাজে পিয়ালি পাল। —নিজস্ব চিত্র।

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৩
Share: Save:

কথায় বলে শিবের মতো বর। সেই ‘মতো’র অপেক্ষায় না থেকে একেবারে দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিলেন বাবা-মা। মেয়ের বয়স মাত্র পাঁচ।

পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের চাপদা গ্রামের শিব মন্দিরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় বসেছিল বিয়ের আসর। পাত্রী পিয়ালি পাল ঘাবড়ে গিয়েছে। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, উলুধ্বনি, চার দিকে হইহুল্লোড়ের কার্য-কারণ সে ঠাওর করতে পারছে না। শাড়ি, লাল চেলি, ফুলের মালা আর মাথার মুকুট সামলাতেও ছোট্ট পিয়ালি ততক্ষণে নাজেহাল।

যে রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে রুখতে এত সক্রিয়তা, যেখানকার কন্যাশ্রী প্রকল্প আন্তর্জতিক স্বীকৃতি পায়, যেখানে নাবালিকা মেয়েরা পড়বে বলে নিজের বিয়ে ভাঙতে সটান থানায় যায়, সেখানে এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে। এলাকারই অনেকের জিজ্ঞাসা— বিয়ে শব্দটার মানে বোঝে না যে শিশুকন্যা, যখন পড়া আর খেলাই তার জীবন, তখন এ কেমন আচার?

পিয়ালির বাবা রাম পাল দরিদ্র চাষি। তাঁর মুখে মানতের কথা। রাম বলেন, ‘‘জন্ম থেকে পিয়ালি শুধু ভুগত। একমাত্র মেয়ের রোগ সারাতে গ্রামের শিব ঠাকুরের কাছে মানত করেছিলাম। রোগ সেরে যাওয়ায় ওই শিবের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।’’ রাম সঙ্গে এ-ও জানালেন, মেয়েকে চিকিৎসক দেখিয়েছেন।

এমন বিয়ে যে অন্ধ বিশ্বাসের ফল, তা মানছেন কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানব সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘এখনও অনেকে কুসংস্কার আঁকড়ে রয়েছেন। এ সব ভাঙতে সচেতনতা প্রচার করব।’’ স্থানীয় দেউলিয়া সত্যেন বসু বিজ্ঞান সংস্থার সম্পাদক আনন্দবরণ হান্ডাও বলছেন, ‘‘বহুযুগ আগে ঠাকুর-দেবতার সঙ্গে বিয়ের কথা শোনা যেত। আমরাও প্রয়োজনে চাপদা গ্রামে গিয়ে কুসংস্কার বিরোধী সচেতনতা শিবির করব।’’

এখন তো গ্রামবাসীর কাছে খবর পেয়েই বহু নাবালিকার বিয়ে রুখছে পুলিশ-প্রশাসন। পিয়ালির ‘বিয়ে’র ভোজে হাজির গ্রামের কেউ অবশ্য এই বিয়ে রোখার তাগিদ অনুভব করেননি। চাপদা গ্রামের বাসিন্দা অশোক বেরার বক্তব্য, ‘‘ অবাক হলেও কিছু বলিনি। আসলে ধর্মীয় বিশ্বাসে ঘা দিতে চাইনি।’’ তবে অশোকবাবুও মানছেন, ‘‘কাজটা ঠিক হয়নি।’’

পিয়ালি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। তবে শিক্ষকেরা এমন বিয়ের কথা জানতেন না বলে দাবি করেছেন। এক শিক্ষকের আশ্বাস, ‘‘ঘটনার প্রভাব যাতে ওই ছাত্রীর মনে না পড়ে, আমরা সেই চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE