নাগেরবাজারের বিস্ফোরণ কারা ঘটিয়েছে, কী ভাবে ঘটেছে, সব তাঁর নজরে আছে বলে শুক্রবার দলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারা সেই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বলতে রাজি নন বলেও মন্তব্য করেছেন। মূল অপরাধীকে দ্রুত হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ওই বিস্ফোরণের চার দিন পরেও কোনও অভিযুক্তের হদিস পেলেন না সিআইডির তদন্তকারীরা।
সিআইডি সূত্রের দাবি, এই বিস্ফোরণের পিছনে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের একটি দল জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের কয়েক জনকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই সন্দেহভাজনদের খোঁজে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় তল্লাশি হয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। শুক্রবার বিস্ফোরণে আহত ফলবিক্রেতা অজিত হালদারের বোন যমুনা মণ্ডলকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেছে সিআইডি।
এ দিনই তৃণমূল ভবনের বৈঠকে মমতা বলেন, এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে, সব নজরে আছে। কিন্তু কারা ঘটিয়েছে, তা জানতে চাইবেন না। পুজোর মরসুমে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সকলকে নিজের নিজের এলাকায় সতর্ক থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পরে এই বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘‘একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সিআইডি তদন্ত করছে। অপরাধীকে দ্রুত হেফাজতে নিতে বলা হয়েছে।’’
শুক্রবার অজিতের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সিআইডি সূত্রের খবর, অজিতের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন, বুধবার সকালে এক ব্যক্তি একটি ব্যাগ নিয়ে ওই ফল বিক্রেতার পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিছু ক্ষণ পরে তিনি পরে চলেও যান। কিন্তু সেই ব্যক্তির কোনও বর্ণনা অজিত দিতে পারেননি। এর বেশি কিছু বলতে পারেননি অজিত। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বিস্ফোরণে মারাত্মক জখম হওয়ার জেরে সাময়িক স্মৃতিভ্রষ্ট হয়। অজিতের শারীরিক অবস্থাও ভাল নয়। ফলে তাঁকে বেশি ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। অজিতের ভাইপো মানস হালদার এ দিন জানান, ‘‘বিকেলের পরে কাকার জ্ঞান ফিরেছে।’’
মঙ্গলবার সকালে নাগেরবাজারের কাজীপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে এক শিশু মারা যায়। আহত হন ১০ জন। প্রথমে দমদম থানা ও ব্যারাকপুর কমিশনারেট তদন্ত শুরু করলেও নবান্নের নির্দেশে পরে সিআইডি তদন্তভার নিয়েছে। কী ভাবে বিস্ফোরণ হয়েছে তা নিয়েও ধন্দ কাটেনি তদন্তকারীদের। বৃহস্পতিবার যমুনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁরা জেনেছিলেন, মঙ্গলবার সকালে ট্রেনে শিয়ালদহে নেমে মেছুয়া বাজারে তাঁরা ফল কিনতে গিয়েছিলেন। এর পর ট্যাক্সিতে চেপে তাঁরা নাগেরবাজারে পৌঁছন।
শুক্রবার সকালে আর জি কর হাসপাতাল থেকে যমুনাকে প্রথমে কামারডাঙা ফাঁড়িতে আনা হয়। সেখান থেকে তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে শিয়ালদহ যান তদন্তকারীরা। ট্রেন থেকে নেমে কীভাবে তাঁরা মেছুয়া বাজার যান, সেখানে কার কাছ থেকে কী ফল কিনেছিলেন এবং ফল কিনে কোথা থেকে ট্যাক্সি ধরে অজিত ও যমুনা নাগেরবাজার পৌঁছেছিলেন তা সরেজমিনে দেখেন তদন্তকারীরা। সিআই়ডি সূত্রের খবর, যমুনার সঙ্গে অজিতের রক্তের সম্পর্ক নেই। মগরাহাটের পূর্ব উড়ালচাঁদপুরের বাসিন্দা অজিতের সঙ্গে দেড় বছর আগে ফলের ব্যবসায় যোগ দেন যমুনা। এর পর ব্যবসার সুবিধার কারণে দক্ষিণ দুর্গাপুরে দু’জনে ভাড়াবাড়ি নিয়ে থাকতেন।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, এই বিস্ফোরণে কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। যেহেতু অজিতের দোকানের পিছনেই বিস্ফোরণ হয়েছে তাই তাঁর এবং যমুনার সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অজিতের ভাইপো জানিয়েছেন, কাজিপাড়ার আগে অজয়নগর এবং তারও আগে গড়িয়াহাট, ঢাকুরিয়া স্টেশন ও যাদবপুর কলামন্দিরের কাছে ব্যবসা করতেন। অজিত কেন ঘন ঘন ব্যবসার জায়গা পরিবর্তন করতেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গাঁধী জয়ন্তীর দিনের বিস্ফোরণের সঙ্গে তিন বছর আগে দমদমের আমবাগানের মানস বৈদ্যের বাড়িতে হওয়া একটি বিস্ফোরণের মিল পেয়েছে সিআইডি। এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলার উপরে অনেকটা আবাসিক হস্টেলের ঢঙে দু’পাশে সারি সারি ঘর। সে রকমই একটি ঘরে ২০১৫ সালের ১৪ অগস্ট রাতে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এ দিন মানস বলেন, ‘‘আড়াই নম্বরের এক জনের মাধ্যমে অশোকনগরের বাসিন্দা দু’জনকে ভাড়া দিয়েছিলাম। ওরা বিমানবন্দরে ইট, পাথর সরবরাহের কাজ করে বলেছিল। ভাড়া দেওয়ার সাত দিনের মাথায় ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে ছোট ভাইয়ের সিলিংয়ের পাখা ঝুলে গিয়েছিল।’’ সিআইডির দাবি, ওই ঘটনাতেও সকেট বোমা ফেটেছিল। কিন্তু দমদম থানার তদন্তকারীরা যথাযথ না করায় রহস্যভেদ হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy