Advertisement
১১ মে ২০২৪
West Bengal News

ধনখড়ের নিরাপত্তায় আধাসেনা কেন? প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে চিঠি রাজ্যের, বাড়তে পারে সঙ্ঘাত

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে একেবারেই সহজ ভাবে নিচ্ছে না, তা সে দিনই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

রাজ্যপাল ধনখড়ের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন, ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাল রাজ্য।

রাজ্যপাল ধনখড়ের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন, ব্যাখ্যা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাল রাজ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৪৯
Share: Save:

আবার সঙ্ঘাতে কেন্দ্র-রাজ্য। টানাপড়েনের কেন্দ্রে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপালের নিরাপত্তায় কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী? রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কেন রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজের হাতে নিল কেন্দ্র? এই প্রশ্ন তুলে চিঠি পাঠানো হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। তাতেই শেষ নয়। রাজ্যপালের সমালোচনায় ফের সরব হলেন তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নিরাপত্তার ভার যে আর রাজ্যের পুলিশের হাতে থাকছে না, সে কথা ১৭ অক্টোবর জানা গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ওই দিনই রাজ্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, এ বার থেকে ধনখড়ের নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবে সিআরপিএফ। ধনখড় জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা পান। সেই নিরাপত্তা এত দিন রাজ্য পুলিশই দিত। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয় যে, ওই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে রাজ্যের পুলিশকে। এ বার থেকে সিআরপিএফ ওই দায়িত্ব পালন করবে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে একেবারেই সহজ ভাবে নিচ্ছে না, তা সে দিনই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ না খুললেও, তাঁর মন্ত্রিসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় সে দিন মুখ খোলেন। রাজ্যপালের যদি মনে হয়ে থাকে তাঁর নিরাপত্তায় যে বন্দোবস্ত রাজ্য সরকার রেখেছে, তা যথেষ্ট নয়, তা হলে রাজ্য সরকারকেই তিনি সে কথা বলতে পারতেন— বলেন সুব্রত। কেন কেন্দ্রের নিরাপত্তা রাজ্যপালকে নিতে হচ্ছে, তা নিয়ে সুব্রত প্রশ্ন তোলেন।

সেই প্রশ্নই এ বার সরকারি ভাবে তোলা হল। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রকে। বিনা বাক্য ব্যয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে যে রাজ্য সরকার প্রস্তুত নয়, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। নবান্ন সূত্রের খবর, চিঠিতে লেখা হয়েছে— রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপালকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্যপাল হিসাবে জগদীপ ধনখড় যে দিন কার্যভার গ্রহণ করেছেন, সে দিন থেকেই যখন তাঁকে জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক হঠাৎ কেন নিল? এই প্রশ্নই তোলা হয়েছে চিঠিতে। জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে।

আরও পড়ুন: ইসকন মন্দিরে লোন উল্ফ কায়দায় জঙ্গি হানার ছক! ভারতীয় গোয়েন্দারা সতর্ক করল ঢাকাকেও

রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যপালের নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখা হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকে পুনর্বিবেচনা করতেও বলা হয়েছে। রাজ্যের এই চিঠি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে প্রস্তুত নবান্ন। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল পদে বসার পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সঙ্ঘাত সামনে এসেছে। কখনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করে আনার ইস্যুতে, কখনও ‘লক্ষ্মণরেখা’ পার না করার পরামর্শকে কেন্দ্র করে, কখনও জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনাকে ঘিরে, কখনও কার্নিভালে তাঁকে ‘ব্ল্যাক আউট’ করার অভিযোগকে ঘিরে সামনে এসেছে অস্বস্তি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের তরফ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নীরব থাকার নীতি নিয়েছেন রাজ্যের শাসকরা। কিন্তু উত্তর দেওয়া হোক বা না হোক, সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে রাজ্য সরকারও যে সঙ্ঘাতের পথ থেকে পিছিয়ে আসবে না, কেন্দ্রকে পাঠানো চিঠিতে সে কথা বেশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার সমালোচনা করেছেন রাজ্যপালের। ধনখড়ের নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েনকে যে মোটেই ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না, পার্থ এ দিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ‘‘এমন রাজ্যপাল আগে কখনও দেখিনি,’’— মন্তব্য পার্থর।

আরও পড়ুন: নাট্যজগতে ফের মি-টু, অভিনয় শেখানোর নামে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ পরিচালকের বিরুদ্ধে

বিজেপি স্বাভাবিক কারণেই রাজ্যপালের নিরাপত্তায় আধাসেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে। রাজ্যপালকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নামে আসলে রাজ্য সরকার তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের দাবি। রাজ্যপালের উপরে সর্ব ক্ষণ নজরদারি চালানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে বলেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজ্য সরকারের অসুবিধা হচ্ছে। দাবি ওই বিজেপি নেতাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE