Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রোগীকে ‘ভুল’ গ্রুপের রক্ত এসএসকেএমে

সূত্রের খবর, রবিবার রাত ১২টার পরে সঙ্গীতার জন্য এবি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী সুকান্ত মণ্ডল।

রোগীকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ এসএসকেএম হাসপাতালে।

রোগীকে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ এসএসকেএম হাসপাতালে।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

কিডনির অসুখে আক্রান্ত বালিকার শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়ার অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ যাচাই করতে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে তদন্ত কমিটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, ছোট অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

পরিবার সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে কিডনির অসুখে ভুগছে ১১ বছরের সঙ্গীতা চক্রবর্তী। এসএসকেএম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগে চিকিৎসা চলছিল তার। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, রবিবার গভীর রাতে সঙ্গীতার রক্তের নমুনা নিয়ম মাফিক ‘টু বি ডিটারমাইন্ড’ লিখে ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছিলেন বিভাগীয় চিকিৎসক। সেই মতো গ্রুপ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় রক্ত পাঠানোও হয়। ১৯ তারিখ মঙ্গলবার বিকেলে সেই রক্ত দেওয়া হয় সঙ্গীতাকে। অভিযোগ, রক্ত দেওয়ার পরপরই সঙ্গীতার প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। শুরু হয় কাঁপুনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তড়িঘড়ি ডায়ালিসিস শুরু করতে হয়। ওই রাতে বিষয়টি জানাজানি হতেই বিক্ষোভ দেখান পরিজনেরা। এখন মেয়েটি স্থিতিশীল বলে দাবি হাসপাতালের।

কী হয়েছিল সে রাতে? নিয়ম অনুযায়ী, রক্তের নমুনার গ্রুপ নির্ধারণ এবং ক্রস ম্যাচ করে প্রয়োজনীয় ইউনিটের রক্ত দেওয়ার কথা কর্তব্যরত কর্মীর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার রাত ১২টার পরে সঙ্গীতার জন্য এবি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী সুকান্ত মণ্ডল। মঙ্গলবার রাতে শিশুরোগ বিভাগের আরএমও ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানান, সঙ্গীতার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তাকে এবি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল।

এর পরেই কার ভুল, তা দেখতে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দু’জন টেকনিশিয়ানকে দিয়ে সঙ্গীতার রক্তের পুরনো নমুনা পরীক্ষা করান। দেখা যায়, রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। নিশ্চিত হতে নতুন রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে একই গ্রুপ পাওয়া যায়। প্রশ্ন ওঠে, রবিবার রাতে তবে কেন সঙ্গীতার জন্য এবি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দেওয়া হল? হাসপাতাল সূত্রের খবর, সঙ্গীতাকে যে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল

অফিসার ইন চার্জ প্রতীক দে-কে চিঠি দেন ওই আরএমও।

ভুল রক্তে রোগীর কী হতে পারে? নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শরীরে ভুল গ্রুপের রক্ত গেলে কোষ ধ্বংস হতে পারে। বেশি প্রতিক্রিয়া হলে কিডনি, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্য গ্রুপের রক্ত রোগীর শরীরে কতটা এবং কত ক্ষণ ধরে গিয়েছে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে।’’

বুধবার সুকান্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ এ দিন প্যাথলজি বিভাগের প্রধান শিক্ষক-চিকিৎসক ছন্দা দত্ত বলেন, ‘‘সুপার তদন্ত করছেন। দু’জনকে সেই ভার দেওয়া হয়েছে। তাই কিছু বলব না।’’ প্রতীক দে বলেন, ‘‘তদন্ত হচ্ছে। বিষয়টি সুপার বলতে পারবেন।’’ কীসের তদন্ত? প্রতীকবাবু বলেন, ‘‘কী হয়েছে, কী ভাবে হয়েছে। এমন যাতে না ঘটে সে জন্যই তদন্ত।’’

এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘চিকিৎসক ব্লাড ব্যাঙ্কে রিকুইজেশন পাঠালে তা টেকনিশিয়ান দেখেন। তার পরে মেডিক্যাল অফিসার দেখেন। বিভাগে রক্ত যাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট নার্স এবং চিকিৎসক দেখেন। এর পরে তা রোগীকে দেওয়া হয়। সেখানেই রক্ত আটকে গিয়েছে। তাই তেমন সমস্যা হয়নি।’’ তা হলে তদন্ত কীসের? সুপার বলেন, ‘‘ছোটখাটো অভিযোগ হলেও তদন্ত করা হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Blood Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE