ত্রিপুরার মন্ত্রী বিজিতা নাথ।
বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির প্রতি সাধারণ আমানতকারীদের আস্থা অর্জনে তিনি সরাসরি সাহায্য করেছিলেন বলে স্বীকার করলেন ত্রিপুরার বাম সরকারের মন্ত্রী বিজিতা নাথ। বিজিতা দেবীর কথায়, ‘‘রোজ ভ্যালির একটি হাসপাতাল তৈরির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম।’’ এবং সেখানেই রোজ ভ্যালির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াতে উদ্যোগী হন মন্ত্রী। পাশাপাশি, সংস্থাটিও যাতে সাধারণ আমানতকারীর বিশ্বাস অর্জন করতে পারে তার জন্য দ্রুত রাজ্যে ‘সম্পদ’ তৈরি করার উপরেও গুরুত্ব দেন মন্ত্রী। বাম-মন্ত্রীর দাবি, “যা বলেছিলাম, প্রকাশ্যেই বলেছিলাম।”
গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই তল্লাশি শুরু হয়েছে। আটক করা হয়েছে বহু নথি। সংস্থার বিভিন্ন কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। সারদা মামলায় তো ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের জালে আটকে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মমতা মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রী, তৃণমূলের বেশ কয়েকজন সাংসদ। কার্যত তদন্তের গতিপ্রকৃতি আঁচ করেই ত্রিপুরার সিপিএম নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তাঁদের দলের কাউকে যদি সিবিআই জেরা করে তবে করবে। তদন্তের স্বার্থে তাঁরা কোনও কিছুতেই বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। দলের সেই কথারই প্রতিধ্বনি করে ত্রিপুরায় রোজ ভ্যালির ঘোষিত ‘ব্রান্ড অ্যামবাসাডর’ বিজিতা দেবী জানিয়েছেন, ‘‘সিবিআই যদি আমাকে ডাকে, তদন্তের খাতিরে সব রকম সাহায্য করব। তবে আমি এখনও কোনও ডাক পাইনি।”
মন্ত্রী জানান, “রাজ্যবাসীর আস্থা অর্জনের উদ্দেশেই ওই অনুষ্ঠানে আমি সংস্থা কর্তৃপক্ষকে হাসপাতলটি দ্রুত তৈরি করার জন্য অনুরোধ করি।” ‘রোজ ভ্যালি হসপিটাল’-এর হোর্ডিংও টাঙানো ছিল নির্দিষ্ট স্থানটিতে। কিন্তু প্রস্তাবিত হাসপাতালটি তৈরি হয়নি। কিন্তু ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে রোজ ভ্যালি যে মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রচুর সম্পদ তৈরি করেছে, সে বিষয়ে মন্ত্রী অবহিত। তবে টাকা তোলা ছাড়া এ রাজ্যে রোজ ভ্যালি যে কিছু করেনি, এ কথা মানতে রাজি নন বিজিতাদেবী। এ প্রসঙ্গে তিনি আগরতলার রোজ ভ্যালি পার্কের উল্লেখ করেন। অবশ্য একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, “এ রাজ্যে আমি রোজ ভ্যালির ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর বলে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। আমি কোনও দিনই তা ছিলাম না।”
২০০৮ সালে বিজিতা নাথ ত্রিপুরার বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়ে আসেন। সে বছরই রোজ ভ্যালি উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়। মন্ত্রীর দাবি, ধর্মনগরের ওই অনুষ্ঠানের পরে অবশ্য রোজ ভ্যালির সঙ্গে তাঁর আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। তবে বেসরকারি এই অর্থলগ্নি সংস্থাতে তিনি নিজেও কিছু ‘টাকা’ বিনিয়োগ করেন। ঠিক সময়ে তা যে তিনি সুদ-সহ ফেরতও পেয়েছেন, তাও একাধিকবার জানিয়েছেন এই বাম মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সময় মতোই আমি আমার টাকা ফেরত পাই। কোনও অসুবিধা হয়নি।”
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক করা নথি পরীক্ষা করে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ধারণা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মতোই ত্রিপুরাতেও বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মাথায় ছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়া। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এই যোগাযোগই ছিল বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার অন্যতম ‘পুঁজি’। তাকে কাজে লাগিয়ে সারদা গোষ্ঠী যেমন পশ্চিমবঙ্গে ফুলেফেঁপে উঠেছিল, তেমনই ত্রিপুরায় রোজ ভ্যালির মতো সংস্থাও নিজেদের ‘শ্রীবৃদ্ধি’ ঘটায়।
তবে পশ্চিমবঙ্গে যে ভাবে শাসক দলের ও সরকারের মদতে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন পযর্ন্ত করা হয়, ত্রিপুরায় তেমন পথে হাঁটবে না বামফ্রন্ট তথা সিপিএম। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সিপিএমের কোনও বিধায়ক বা মন্ত্রীকে সিবিআই এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। করলে করবে। সিবিআই স্বাধীন ভাবেই এ রাজ্যে কাজ করছে।” বিজিতা দেবীও জানিয়েছেন, “রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সিবিআই যদি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে, আমি নিশ্চয় যাব। যা জানি বলব।” তাঁর কথায়, “ত্রিপুরা সরকারই তো রোজ ভ্যালি-সহ ৩৭টি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। দেরিতে হলেও সিবিআই এ রাজ্যে এসেছে। তাঁদের স্বাগত জানাই।” রাজ্যে রোজ ভ্যালির বিভিন্ন অফিসে সিবিআই হানা, সংস্থার বিভিন্ন কর্তার বাড়িতে হানা-জেরা ইত্যাদিতে তিনি যে মোটেই বিচলিত নন তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজিতা দেবী। তবে শুধু বিজিতা দেবী নন, সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অ-বাম কিছু বিধায়ক, নেতা, জেলা স্তরের বহু নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy