Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খনি ধর্মঘটের গোড়াতেই ধাক্কা রাজ্যে

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ এবং পুনর্গঠনের বিরুদ্ধে পাঁচ ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা পাঁচ দিনের ধর্মঘট জোর ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গে। সৌজন্যে, তৃণমূল ও তাদের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি-র বাধা। তেলঙ্গানায় সিঙ্গারেনি খনি অঞ্চলেও আংশিক ধর্মঘট হয়েছে। কয়লা ক্ষেত্রের ‘বেসরকারিকরণ’ বন্ধ করার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দেশ জুড়ে এই খনি শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। আইএনটিইউসি, বিএমএস, এআইটিইউসি, সিটু এবং এইচএমএস কয়লা ক্ষেত্রের পাঁচ প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

কয়লা শ্রমিক ধর্মঘটে শুনশান ধানবাদের একটি কয়লাখনি এলাকা। ছবি: চন্দন পাল।

কয়লা শ্রমিক ধর্মঘটে শুনশান ধানবাদের একটি কয়লাখনি এলাকা। ছবি: চন্দন পাল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ এবং পুনর্গঠনের বিরুদ্ধে পাঁচ ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা পাঁচ দিনের ধর্মঘট জোর ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গে। সৌজন্যে, তৃণমূল ও তাদের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি-র বাধা। তেলঙ্গানায় সিঙ্গারেনি খনি অঞ্চলেও আংশিক ধর্মঘট হয়েছে।

কয়লা ক্ষেত্রের ‘বেসরকারিকরণ’ বন্ধ করার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দেশ জুড়ে এই খনি শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। আইএনটিইউসি, বিএমএস, এআইটিইউসি, সিটু এবং এইচএমএস কয়লা ক্ষেত্রের পাঁচ প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। যার জেরে দিনে প্রায় দেড় মিলিয়ন টন পর্যন্ত উৎপাদনে ঘাটতি হতে পারে এবং তার ফলে বিদ্যুৎ সঙ্কট আরও ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎকর্মীদের সংগঠন ইইএফআই এই ধর্মঘট সমর্থন করছে।

দেশের অন্যতম কয়লা উৎপাদক রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া, ধানবাদ, নিরসা, কতরাস, গোবিন্দপুর, বাঘমারার মতো খনি এলাকাগুলিতে কোনও শিফটেই শ্রমিকরা কাজ করেননি। ধানবাদে অফিসে আসা কয়লা-কর্তাদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিয়ে প্রতিবাদ জানান ধর্মঘটী শ্রমিকেরা। জট কাটাতে এ দিনই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংযুক্ত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা।

আসানসোল-রানিগঞ্জের যাবতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত খনি যাদের নিয়ন্ত্রণে সেই ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের (ইসিএল) সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “ঝাড়খণ্ডের খনিগুলিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। কিন্তু রানিগঞ্জ খনি এলাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক-কর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন।” ধর্মঘটীরাও মেনে নিচ্ছেন, অন্তত ৫০ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন। ইসিএলের হিসেবে, রাজ্যে এ দিনই প্রায় ২৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা উৎপাদন হয়েছে, স্বাভাবিকের থেকে যা মাত্র দু’হাজার টন কম।

কেন এই রাজ্য হঠাৎ অন্য পথে?

ধর্মঘটী সংগঠনগুলির অভিযোগ, শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছে আইএনটিটিইউসি তথা তৃণমূল। ঘটনা হল, যথেষ্ট সদস্য জোগাড় করতে না পারায় কয়লাঞ্চলে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেস (কেকেএসসি) আজও সরকারি তকমা পায়নি। সেখানে ইসিএলের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের অর্ধেকেরও বেশি আইএনটিইউসি সদস্য। বাকিরা অন্য চার সংগঠনের। তা হলে কেকেএসসি ধর্মঘটে বাধা দিল কী করে? ধর্মঘটী ইউনিয়নের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও বহু শ্রমিক কাজে গেলেন কেন?

কেকেএসসি-র চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “আমাদের সাংসদেরা সংসদে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করছেন। কিন্তু ধর্মঘট সমাধানের পথ নয়।” তাঁরা যে গোড়া থেকেই ধর্মঘটের বিরোধিতা করছেন তা জানিয়ে দিয়ে মলয়বাবু বলেন, “এতে শ্রমিকেরা দিনের মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তা ছাড়া, ইসিএল সদ্য রুগ্ণ তকমা ছেড়ে বেরিয়েছে। এই মুহূর্তে ধর্মঘট মানে যে সংস্থাকে ফের সঙ্কটে ফেলে দেওয়া, তা আমরা শ্রমিকদের বোঝাতে পেরেছি। তাই তাঁরা কাজে গিয়েছেন।” ইসিএল সূত্রের খবর, এ দিন যতটুকু ধর্মঘট হয়েছে তাতেই তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

ধর্মঘটী সংগঠনগুলির নেতারা অবশ্য অভিযোগ করছেন, ধর্মঘটের বিষয়টি শুধু খনিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং সরাসরি রাস্তায় নেমেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাদের হুমকিতেই বহু শ্রমিক কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “হুমকি সত্ত্বেও কাজে না যাওয়ায় বিকেলে কেকেএসসি-র লোকজন ঝাঁঝরা এলাকায় আমাদের সংগঠনের অফিসঘর দখল করেছে।” সিটু নেতা বংশগোপাল চৌধুরী, এআইটিইউসি নেতা রামচন্দ্র সিংহ, বিএমএসের উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়েরাও এলাকায়-এলাকায় তৃণমূলের হুমকির অভিযোগ তুলেছেন।

মলয়বাবু অবশ্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি। কাজে যোগ দেওয়া শ্রমিকদেরও কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

strike in coal section inttuc coal india bms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE