শেষ কবে এসএমএস করেছেন? মনে আছে?
যদি মনে করতে না পারেন, তা হলে চিন্তা করবেন না। আপনিও অধিকাংশের দলেই আছেন।
রিপোর্ট বলছে প্রায় ৮০ কোটি লোকের নাকি এমনই অবস্থা। এসএমএস ছেড়ে তারা এখন ‘হোয়াটসঅ্যাপ করে দিচ্ছি’।
কেন?
প্রেমিকার জন্য গিফট কিনতে গিয়েছেন। কিন্তু মলে পৌচ্ছে পড়লেন মহাবিপদে। হাজারো ডিজাইনের মধ্যে কোন ব্যাগটা কিনবেন! চিন্তা কী, ব্যাগগুলোর ছবি প্রেমিকাকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিন। সে-ই বেছে দেবে।
সিনেমা দেখার প্ল্যান করেছেন। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সে পৌছে শুনলেন তার আসতে আধঘণ্টা দেরি। আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে, তা তাকে বোঝাবেন কেমন করে? চিন্তা কীসের, নিজের লোকেশনটা হোয়াটসঅ্যাপ করে দিন।
বন্ধুদের সঙ্গে উইকএন্ডে লংড্রাইভ। সবার হাতে স্মার্টফোন। সবাই তুলছে ছবি। কিন্তু সবার ছবি পাবেন কী করে? মেল? ধুর, সোমবার অফিসে গিয়ে সবাই ভুলে যাবে! ভাবনা কেন, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছবিগুলো আপলোড করে দিতে বলুন।
এমনকী এখন ইসিজি রিপোর্টও ডাক্তারের কাছে পৌঁছে যায় হোয়াটসঅ্যাপে। আজ্ঞে হ্যাঁ, এই কলকাতাতেও। সাধে কি আর নিয়েলসন রিপোর্টে ভারতে অ্যাপের কনজিউমার র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানটা হোয়াটসঅ্যাপ দখল করেছে!
আর ফেসবুককে পিছনে ফেলেই!
ব্যাপারটা কী?
পোশাকি ভাষায় হোয়াটসঅ্যাপ হল একটা ক্রস প্ল্যাটফর্ম মেসেজিং অ্যাপ।
মানে আপনার ফোন যাই হোক না কেন, আইফোন, অ্যানড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি কী উইনডোজ, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে মেসেজ আদানপ্রদান করতে পারবেন। তবে মেসেজ বলতে এসএমএসের মতো শুধু টেক্সট মেসেজ ভাববেন না। টেক্সট তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে ছবি, ভিডিয়ো, অডিয়ো পাঠানো এমনকী আপনার লোকেশনও শেয়ার করা।
আর এ সবই নিখরচায়। শুধু দরকার স্মার্টফোনে ডেটা প্ল্যান বা ওয়াইফাইয়ের মতো একটা ইন্টারনেট কানেকশন।
আর কী হয়?
ওয়ান টু ওয়ান মানে, দু’জনের মধ্যে মেসেজ আদানপ্রদান তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। কয়েকজন মিলে তৈরি করা গ্রুপ। যেখানে কোনও টেক্সট, ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করলে গ্রুপের সব সদস্যই তা দেখতে পাবে। যেমন পুরনো বন্ধুদের বা অফিসের কাজের জন্য গ্রুপ তো হতেই পারে। এ ছাড়া এখন তো বুটিক থেকে রেস্তোরাঁ-রও দিব্যি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকছে। যেখানে নতুন পোশাকের ছবি একসঙ্গে পৌচ্ছে যাচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। কিংবা রেস্তোরাঁর কোনও দিনের বিশেষ মেনুর খবর একসঙ্গে পৌচ্ছে যাচ্ছে খাদ্যরসিকদের কাছে। শুধু তাই নয়, অনেকে তো বাড়ির গাড়ি কখন কোথায় আছে সেটা জানার জন্যও ব্যবহার করছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। এখন তো আবার কথাও বলা যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। ফোন কলের মতো হোয়াটসঅ্যাপ থেকেই ভয়েস কল করা যায় অন্য হোয়াটসঅ্যাপে। সেটাও আবার নিখরচায়, শুধু ডেটা প্ল্যান থাকলেই হবে।
কেন আলাদা?
এসএমএস-এর টেক্সট মেসেজে প্রাণ পুরোপুরি ভরছিল না। ‘জীবন চাইছে আরও বেশি’র যুগে তাই সাদরে ঢুকে গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। সেই ২০০৯-এ। টেক্সট মেসেজের সঙ্গে ছবি, ভিডিয়ো, অডিয়ো, লোকেশন— সবই শেয়ার করা যায় হোয়াটসঅ্যাপে! নিখরচায়। বিদেশে বছর বছর সাবস্ক্রিপশনের জন্য টাকা লাগলেও, ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে সে সবের ঝক্কি নেই।
তবু আর পাঁচটা বিনাপয়সার অ্যাপের মতো বিজ্ঞাপনে ভরে যায়নি হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করার সময়ই দুই প্রতিষ্ঠাতা অ্যাকটন আর কুউম ঠিক করেছিলেন এই অ্যাপে কোনও বিজ্ঞাপন থাকবে না। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক ১৯ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় টাকায় প্রায় এক লক্ষ কোটি!)-এ হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নিলেও সে শর্ত পাল্টায়নি। এখনও কুউমের ডেস্কে আটকানো থাকে একটা নোট: ‘নো অ্যা়ডস! নো গেমস! নো গিমিকস!’
আইফোনের আইমেসেজ বা ব্ল্যাকবেরির বিবিএম তো ছিলই। কিন্তু সে শুধুই একটা প্ল্যাটফর্মের জন্য। লাইন, কিক, ভাইবারের মতো নানা মেসেজিং অ্যাপসের বাজারে এলেও হোয়াটসঅ্যাপের আসন টলাতে পারেনি।
ভয় নেই?
কথায় আছে, মায়ের ভালবাসা ছাড়া বিনাপয়সায় কিছু পাওয়া যায় না। তাই বিনাপয়সার সব পেয়েছির আসর হোয়াটসঅ্যাপের দিকেও লোকে বাঁকা চোখেই তাকিয়েছে। সেটা অস্বাভাবিকও নয়। হোয়াটসঅ্যাপের রোজগারের কিছুটা সাবস্ক্রিপশন থেকে এলেও বেশিটাই কিন্তু আসে আপনার পছন্দ-অপছন্দ সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনদাতার কাছে বিক্রি করে। সুতরাং আপনার ব্যক্তিগত চ্যাট যে তেমন ‘ব্যক্তিগত’ নয়, সেটা বুঝতে শার্লক হোমস হওয়ার দরকার নেই!
এই কিছু দিন আগেই তো এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তথ্যের নিরাপত্তায় একদমই শক্তপোক্ত নয় হোয়াটসঅ্যাপ।
তবে আইক্লাউডও তো হ্যাকড হয়! গোপনীয় তথ্য তাই হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের নিরাপত্তার কথা তো নিজেকেই ভাবতে হবে।
আপনি বরং এই লেখার লিঙ্কটা বন্ধুদের হোয়াটসঅ্যাপ করে দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy