‘কবীর’-এর একটি দৃশ্য
প্র: ‘কবীর’-এ প্রথম বার সম্পূর্ণ নেগেটিভ চরিত্রে আপনি। একজন মানুষ কেন উগ্রপন্থী হয়ে ওঠে, ছবিটা সেই গল্প বলে। তার মধ্য দিয়ে কি সন্ত্রাসবাদকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে না?
দেব: ছবির প্রথমার্ধ দেখলে এক রকম মানসিকতা তৈরি হবে। ছবির শেষে ভিন্ন ভাবনা নিয়ে হল থেকে বেরোবেন। চরিত্রটা নেগেটিভ এবং ভুল পথে চালিত। তাই অভিনয় করব কি না তা নিয়েও দ্বিধা ছিল। অনেকেই আমাকে বলেছে, ছবিটা আজান দিয়ে কেন শুরু করলি না? আজান তো খুব সুন্দর। ‘কবীর’-এর ট্রেলারে দেখবেন, সব চরিত্রের ধর্ম বোঝা যাচ্ছে, শুধু কবীরের নয়। কারণ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম নেই।
প্র: ইয়াসমিন খাতুন কী রকম?
রুক্মিণী: আমি ব্যক্তিগত জীবনে যে রকম, ইয়াসমিন তার উল্টো। অতি সাধারণ একজন। চরিত্রটা সম্পর্কে অনিকেতদা আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার চোখে যে খুশি দেখতে পাই, সেটা মুছে ফেলতে হবে।’ তখন বুঝতে পারিনি, এটা কী ভাবে করব! কিন্তু ওয়র্কশপের পর যখন জানলাম, তার সঙ্গে কী-কী হয়েছে... ধীরে ধীরে ইয়াসমিনের ব্যথাটা বুঝলাম।
প্র: খুব ডার্ক চরিত্রে অভিনয় অভিনেতাকে নিংড়ে নেয়!
দেব: প্রোডিউসার আমাকে টেনে নিয়েছিল (হেসে)। মুম্বইয়ের সাতটা জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছিল, সে সব জায়গার পারমিশন, ট্রেন... এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার জোগাড় করা বিরাট চাপের কাজ ছিল। অভিনেতা দেবকেও হয়তো এ ছবির জন্য দর্শক মনে রাখবেন। আসলে নেগেটিভ চরিত্র মানুষ ভোলে না।
রুক্মিণী: দেব যে ভাবে কাজ করছে, অনেক সুপারস্টারও প্রযোজক হিসেবে সে ভাবে কাজ করবে না। প্রযোজক দেবকে আপনি ছুঁতে পারবেন না।
প্র: ‘চ্যাম্প’ ও ‘ককপিট’-এ বলেছিলেন, হাই সোসাইটি চরিত্রের জন্য রুক্মিণী ছাড়া কাউকে মনে হয়নি। এ বার চরিত্রটা উল্টো!
দেব: আপনি ছবিটা দেখলে বুঝবেন, এখানে তিনজন হিরো— ক্যামেরাপার্সন, পরিচালক অনিকেতদা এবং রুক্মিণী। ‘কবীর’ দেখার পর দর্শক আমার চেয়ে বেশি রুক্মিণীর প্রশংসা করবে। আবার ‘হইচই’ পুরোপুরি কমার্শিয়াল ছবি। সেখানে আমি রুক্মিণীকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিলাম না। তাই নিইনি।
রুক্মিণী: (আদুরে গলায়) কী বলছ তুমি! পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবিতে আমাকে মানাবে না?
দেব: তোমার কি সেটা মনে হয়? কেরিয়ার যখন দ্রুত ছুটছে, আমি গিয়ার চেঞ্জ করেছিলাম। ‘চাঁদের পাহাড়’-এর শুটিং শুরু হল না, অনেকেই বলেছে, দেবের চেয়ে সে ভাল ‘শঙ্কর’ হতে পারত। তখন যে সব পরিচালক আমাকে ‘বুনোহাঁস’ করতে বারণ করেছিল, তাদের বলেছিলাম, বাস্তব জীবন নিয়ে ছবি করতে। শুভশ্রীকে যখন ‘ধূমকেতু’র কথা বলি, ও বলেছিল, ‘চার বছর পর একসঙ্গে কাজ করছি, আমাদের একটা কমার্শিয়াল ছবি করা উচিত।’ (রুক্মিণীকে দেখিয়ে) ও সাক্ষী সে সব ঘটনার। শুভশ্রীকে বলেছিলাম, এটাই ভবিষ্যৎ। ও বিশ্বাস করেনি।
রুক্মিণী: হ্যাঁ, আমার মনে আছে।
দেব: এখন নায়িকারা চরিত্রধর্মী ছবি করতে চায়। যেটা আমি আট বছর আগে শুরু করেছি।
প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই বলছেন, দেব এখন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ...
দেব: নতুন পথে আপনাকে ঠিক বলার জন্য খুব কম লোকই পাবেন। আর কেউ একা করে দিতে চাইলেই, আমি একা হয়ে যাব না। ভগবান আমার প্রতি সব সময় সদয় থেকেছেন। আমি অনিকেতের কাছে যাইনি। ও এসেছে। হ্যাঁ, ও না এলে অন্য কেউ আসত। আমি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হলেও যথেষ্ট বড়। এবং তার শেকড়ও অনেক গভীরে। বাইরে থেকে তার কতটা দেখা যাবে অর্থাৎ কতটা উপরে উঠলাম, তা নিয়ে ভাবি না। তবে এই দ্বীপকে ধরে থাকা হাতগুলো আমার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: এক কাপে চুমুক
প্র: একজন পরিচালকের সঙ্গে এক বছরে চারটে ছবি! অন্য পরিচালকরা কাজ করতে চাইছেন না বলেই কি?
রুক্মিণী: না, এ রকম ব্যাপার নয়।
দেব: কে চাইছে, কে চাইছে না... তার চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট আমি কী চাইছি। এখানে বিশ্বাস আর ভরসাটা খুব জরুরি। অনিকেতের সঙ্গে আমার টিউনিংটা খুব ভাল। বাকি পরিচালকরা সৃজিত, বিরসা বা অরিন্দমদা... সবাই তো একই ব্যানারে কাজ করছে। কেউ যদি আমার সঙ্গে ভাল ভাবে কাজ করতে চায়, আই ডোন্ট মাইন্ড!
প্র: ছবির জন্য শুভশ্রীকে কখনও অ্যাপ্রোচ করেছেন?
দেব: কাউকে আমি যে চরিত্রটা দেব, সেটা তো জাস্টিফাই করতে হবে। ‘ধূমকেতু’ দেখলে বুঝতে পারবেন, ওই চরিত্রটা শুধু শুভশ্রীর জন্যই। মিমি, পূজা আমার বন্ধু। রুক্মিণীও। ছবির ক্ষেত্রে বন্ধু, এক্স এ সব ম্যাটার করে না! দিনের শেষে আমি শান্তিতে ঘুমোতে চাই। কোনও চরিত্র করার পর কেউ যেন আমাকে না বলে, তুই চরিত্রটার সঙ্গে জাস্টিস করিসনি। যদিও লোকে আমাকে মিসইউজ করেছে। কিন্তু নিজের অজান্তে কাউকে মিসইউজ করে ফেললে, সেটা আমাকে কষ্ট দেবে।
প্র: রুক্মিণী এখনও বন্ধু!
রুক্মিণী: সারা জীবনের জন্য বন্ধু।
দেব: দেখুন, ২০১৮-য় আর গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড বলে দিতে হয় না! দু’জন হাতে পরস্পরের ট্যাটু নিয়ে ঘুরছি। মানুষ অন্ধ নয়। আর সম্পর্ককে হাইলাইট করে ছবির প্রচার করব না। আপনি কাকে ভালবাসেন, সেটা নিজেদের ব্যাপার। আমরা যেন ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলি হাস্যকর জায়গায় নিয়ে না যাই। জনতাকে এটা দেখানোর প্রয়োজন নেই, রুক্মিণী আমার প্রেমিকা। তাঁরা ভালই বুঝতে পারেন, আপনি আসলে কী বলতে চাইছেন। দেব-রুক্মিণী বিয়ে করবে কি না এটাও তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। আর বিয়েটা না... দেখতেই তো পাচ্ছেন আজকাল কী হচ্ছে! বিয়ে যেন একটা সোশ্যাল সেলিব্রেশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy