মঞ্চে মিমি
মানুষের মাঝে মিশে যেতে জড়তা নেই তাঁর। মঞ্চ থেকে নেমে ব্যারিকেডের কিনারা ঘেঁষে ছুটছেন, হাত নাড়ছেন মিমি। পিছনে হতভম্ব মিডিয়া, পুলিশ।
নায়িকা হতে পারেন। তবে যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী মোটেও তাসের দেশ-এর হরতন, রুইতন, ইস্কাবন নন। সেটা বুঝিয়েও দিচ্ছেন প্রতি পদে। টালিগঞ্জের শান্তিনগর বা যাদবপুর যুবসংঘের মাঠ থেকে শুরু করে সোনারপুর-বারুইপুরের কমিউনিটি হলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা কর্মিসভা সেরে ফেলেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার, ভাঙড়ের ভোজেরহাট ফুটবল মাঠের কর্মিসভাতেও অপেক্ষমাণ জনতাকে একই রকম ছটফটে প্রাণশক্তিতে মিমি মাত করলেন।
সাদা লেগিংস, লম্বা হাতা হলুদ কুর্তির সঙ্গে সুচারু নকশার ওড়নায় সুসজ্জিতা, মঞ্চ থেকে নেমে মাঠের ডাইনে-বাঁয়ে ছুটে জনতার সঙ্গে ভাব করছেন। প্রথমে মঞ্চে বসা দলের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সৌজন্য বিনিময়! মিমিকে কাছে পেয়ে পোলেরহাট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা জড়োসড়ো টুম্পা বিবি খচাখচ নিজস্বী তুলতে মাতোয়ারা। তারকা-প্রার্থীর জেদ, মঞ্চে তাঁর দুই ‘গুরুজন’ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীরও পাশে বসা চাই! স্থানীয় নেতা আরাবুল ইসলাম, কাইজ়ার আহমেদ, মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা— কেউই প্রার্থীর সসম্ভ্রম সম্ভাষণে বাদ পড়লেন না।
‘‘ও কাকা আমায় দেখতে পাচ্ছ তো! দিদির স্বপ্ন সফল করতে সবাইকে চাই, কিন্তু,’’ ভাঙড়ে বলতে উঠে, মাঠের বাইরে তিন তলা বাড়িটার ছাদেও মিমির দৃষ্টি ছুটল!
গানে শান দিন
মাঠের যে কোনও প্রান্তে জনতার সঙ্গে চোখাচোখি বা আই কনট্যাক্টে জোর দিচ্ছেন তারকাপ্রার্থী। বাঁধাধরা স্ক্রিপ্টের তোয়াক্কা করেন না। স্বতঃস্ফূর্ত আলাপচারিতায় সড়গড় মিমি। তবু মেন্টর অরূপদার দাবি, গান-অস্ত্রে শান দিতে হবে। ভাঙড়ে গলা ফাটিয়ে বক্তৃতার পরেই গানের ফরমায়েশে প্রথমে একটু থমকালেন। ইস, দু’চুমুক জল পেলে সুবিধে হতো! তার পরেই নতুন ছবির হিট গান ধরলেন, ‘দেখলে তোকে বদলায় দিন’! তুরুপের তাস হিসেবে কয়েকটা গান সময়মতো প্রয়োগের জন্য রেখে দিয়েছেন মিমি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
টি শার্ট বনাম কুর্তি
দলের নেতাদের একাংশের আশঙ্কা ছিল, ভোটের ময়দানে মিমির সাজগোজ কতটা গৃহীত হয়। দেখনদারি নয়, আধুনিকা তরুণীর স্বাভাবিকতার স্টাইলেই অকুতোভয় প্রার্থী। বারুইপুরের কর্মিসভায় মিমি সটান বলেওছেন, ‘‘আমি শাড়িতে পা জড়িয়ে পড়লে কি আপনাদের ভাল লাগবে?’’ ভাঙড়ের সভার লেগিংস-কুর্তি, সন্ধ্যায় বিজয়গড়ের পার্টি অফিসে ফুরফুরে সান্ধ্য জিনস-টি শার্টে পাল্টে গেল। নায়িকার সাফ কথা, ‘‘মেয়েদের ক্ষমতায়নের কথা বলব আবার ভোটপ্রার্থীর ড্রেসকোড নিয়ে মাথা ঘামাব, তা হয় না কি!’’
ঘরোয়া টি শার্টেই যাদবপুরের বারো ভূতের মাঠ বা বাঘাযতীনের কমলদার চায়ের দোকানে ঝটিকা সফর। ক্যারাটে ক্লাসের কচিকাঁচাদের দাবি মেনে, নিজস্বী তুললেন ‘মিমিদি’। চৈত্রসেলের ভিড়ের সঙ্গেও করমর্দন অকাতরে।
শাকাহারেই শক্তি
কসবা রথতলার ফ্ল্যাট থেকে এ যাত্রা মিমিকে ভোটপ্রচারে বেশি দূরে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহে পাঁচ-ছ’দিন সাধারণত নিরামিষেই রুচি তাঁর। ভাঙড়ের সভার পরে বিজয়গড়ের পার্টিঅফিসে দু’-তিন গাল মুড়িমাখা কি বড়জোর চায়ের দোকানে, একখানা বেকারির বিস্কুট। তাঁর প্রচারসঙ্গী ম্যানেজাররা ব্যাগে পর্যাপ্ত ফল, বাদাম মজুত রাখছেন। ইচ্ছে মতো নায়িকার মুখ চলবে। নাগাড়ে শুটিং বা দিনভর প্রচারে অফুরান উদ্যমের রসদ বলতে এটুকুই।
কটাক্ষ, নিন্দেমন্দয় কান না-দিয়ে মিমির সঙ্গী বলতে ইতিবাচক মন। বাঘাযতীনের রাস্তায় মমতার তারকা-প্রার্থীর দুধসাদা টি-শার্টের লেখাও তাই বলছে। পিস বিগিনস উইথ আ স্মাইল। মিমি প্রত্যয়ী, হাসি মুখটির জয় সর্বত্র।
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy