• এসআইপি পদ্ধতিতে টাকা জমাতে চাই। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন।
উদয়ভানু সরকার, বিনপুর
এসআইপি করতে চান খুব ভাল কথা। তবে কয়েকটি বিষয় বিচার করে নিন। যেমন— কত দিনের মধ্যে মোটামুটি কতটা সঞ্চয় গড়ে তুলতে চান? সঞ্চয় বাড়াতে কতটা ঝুঁকি নিতে পারবেন? টাকা কত দিন আটকে রাখা সম্ভব ইত্যাদি। এ সবের ভিত্তিতেই ফান্ড বাছতে হবে আপনাকে।
ইকুইটি, ডেট বা মিক্সড, সব ধরনের ফান্ডেই এসআইপি করা যায়।
ইকুইটি ফান্ডে তহবিলের বেশির ভাগটা ঢালা হয় শেয়ারে। এতে চড়া রিটার্নের সম্ভাবনা থাকলেও, ঝুঁকি অনেকটা বেশি। বেশি রিটার্ন পাওয়া যায় বলে বেশির ভাগ এসআইপি ইকুইটি ফান্ডেই হয়। ডেট ফান্ডের টাকা খাটে সরকারি ও বেসরকারি ঋণপত্রে (বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি)। এতে ঝুঁকি কম। তবে ইকুইটি ফান্ডের তুলনায় কম হতে পারে রিটার্নও। মিক্সড বা মিশ্র ফান্ডের তহবিলের টাকা কিছুটা শেয়ারে ও কিছুটা ঋণপত্রে লগ্নি করা হয়। কোন ক্ষেত্রে কত টাকা খাটবে, সেটা ফান্ড বিশেষে আলাদা। যে যার ঝুঁকি অনুযায়ী তার মধ্যে থেকে বাছবেন। ফান্ড বাছার সময়ে এগুলি মাথায় রাখুন।
এসআইপি করলে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথম থেকে যা যা করতে হবে, সেগুলি হল—
১) লগ্নির লক্ষ্য (যে-সময়ের মধ্যে মোটামুটি যতটা রিটার্ন পাওয়ার আশা) পূরণ হতে পারে, এমন ফান্ড বাছার চেষ্টা করুন। সিদ্ধান্ত নিন ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও রিটার্নের খিদে বিচার করে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নিন।
২) বাড়তি চাপ না-নিয়ে কিস্তির অঙ্ক স্থির করুন।
৩) হিসেব করে দেখুন কত সময় পর পর টাকা জমা দিলে কোনও অসুবিধা হবে না।
৪) এসআইপি-র মেয়াদ ঠিক করুন। লম্বা মেয়াদে রিটার্ন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষত ইকুইটি ফান্ডে দীর্ঘ মেয়াদি এসআইপি করা লাভজনক। তাতে শেয়ার নির্ভর ফান্ডের ঝুঁকি কিছুটা এড়ানো যায় এবং রিটার্নের পরিমাণও অন্যান্য ফান্ডের থেকে অনেক বেশি হতে পারে।
৫) এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ‘নো ইওর কাস্টমার’ (কেওয়াইসি) করুন। এর জন্য কেওয়াইসি ফর্ম ভরে জমা দিন। যাদের থেকে বা যাদের মাধ্যমে ফান্ড কিনবেন, তারাই ফর্ম দেবে।
৬) বাদবাকি কাজেও সাহায্য করবে ওই সংস্থাই। এই ধাপে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম ভর্তির পালা। সেখানেই এসআইপি করার কথা বা ফান্ডের নাম-সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে হবে। চাইলে অটো-ডেবিটের ব্যবস্থাও করে নিতে পারেন। অর্থাৎ কিস্তি যদি মাসে মাসে দেন, তা হলে প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাঙ্কই আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়ে সংস্থায় জমা করবে। এতে টাকা দেওয়া নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না। শুধু ওই অ্যাকাউন্টে টাকা আছে কি না খেয়াল রাখবেন।
একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন, ফান্ড দুনিয়ায় কিন্তু ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের মতো নিশ্চিত রিটার্ন বলে কোনও বস্তু নেই। শেষ পর্যন্ত আপনি কত টাকা পাবেন, তা পুরোটাই নির্ভর করে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার ওঠা-নামার উপর। যে এসআইপি-ই করুন না কেন, নিয়মিত তার পারফর্ম্যান্সে নজর রাখা উচিত।
• বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। বয়স ২৬। আয়কর দিতে হয় না। খরচ শেষে মাসে ৪,০০০ টাকা মতো হাতে থাকে, যেটা সেভিংসে রাখি। ফিক্সড ডিপোজিট করিনি। শেয়ারে লগ্নি শুরু করতে চাই।
চন্দর সাহা
শেয়ার বাজারে টাকা খাটানো অন্যান্য লগ্নির তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তেমনই আবার ভাল শেয়ার কেনার পরে তা লম্বা মেয়াদে ধরে রাখলে, তাক লাগানো রিটার্নের সম্ভাবনাও বাড়ে। যে-কারণে আমরা সব সময়েই বলি বয়স কম থাকলে এই ঝুঁকি অল্প-বিস্তর সকলেরই নেওয়া উচিত।
তবে হাতের সবটুকু পুঁজি শেয়ারে লাগিয়ে দেওয়া অবিবেচকের কাজ। বরং মাথা ঠান্ডা রেখে হিসেব করে নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করা জরুরি। সেখানে এক দিকে যেমন ব্যাঙ্ক জমা, রেকারিং, পিপিএফের মতো তুলনায় সুরক্ষিত সঞ্চয় থাকবে, তেমনই অন্য দিকে থাকবে শেয়ার বাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ লগ্নি। যাতে ঝুঁকির জায়গা থেকে মনের মতো রিটার্ন না-পেলে বা লোকসান হলে পথে বসতে না-হয়। সুরক্ষিত লগ্নিগুলি তখন পায়ের তলার মাটি শক্ত রাখবে। কাজেই মোটামুটি সুরক্ষিত কিছু সঞ্চয় প্রকল্পে অবশ্যই কিছু টাকা রাখা উচিত। আর অন্য অংশটা খাটাতে পারেন শেয়ারে।
আমার মনে হয়, আপনার পক্ষে সহজ ও ভাল হবে ডি ম্যাট পদ্ধতিতে অল্প টাকা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করা। তবে সরাসরি শেয়ারে লগ্নি শুরুর কথাও বলছি।
• শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির www.sebi.gov.in ওয়েবসাইটে যান। সেখানে তাদের অনুমোদিত ব্রোকার সংস্থাগুলির তালিকা আছে। এ বার আপনার সুবিধামতো ব্রোকারকে বেছে নিয়ে যোগাযোগ করুন।
• সব থেকে আগে দরকার তিনটি অ্যাকাউন্ট
১) নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট
২) ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট।
৩) ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট। যাকে বলে ইউনিক ক্লায়েন্ট কোড।
শেয়ার কেনা-বেচার জন্য চেকে টাকা দিতে বা নিতে লাগে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের কাজ আপনার কেনা শেয়ার জমা রাখা। এতে একটি অনলাইন অ্যাকাউন্টে আপনার নামে থাকে শেয়ারগুলি। ডি-ম্যাট খোলা যায় ব্যাঙ্ক বা ব্রোকার সংস্থায়। আর শেয়ার কেনা-বেচার মূল প্রক্রিয়া চলে ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট মারফত। যে-ব্রোকার সংস্থার মাধ্যমে আপনি স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কেনা-বেচা করবেন, তারাই এটা খুলে দেবে।
• ডি-ম্যাট ও ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য লাগবে ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টের তথ্য ও প্যান কার্ড। আধার কার্ড থাকলে আরও ভাল। কেওয়াইসি করার পরে সংশ্লিষ্ট শেয়ার ব্রোকিং সংস্থায় তাদের নিয়ম অনুযায়ী কেনা-বেচা করতে পারবেন।
• অনেকের ধারণা, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা না-থাকলে শেয়ারে লগ্নি করা যায় না। ভুল। বরং শুরুতে খুব বেশি টাকা না-লাগানোই ভাল। ধীরে ধীরে শুরু করুন। ব্যাঙ্ক বা সঞ্চয়ের অন্যান্য নিরাপদ খাতে টাকা রাখার পরে বাড়তিটুকু লাগান। কিংবা যে-টাকাটা বাজে খরচ হয়, সেটাকেও প্রাথমিক লগ্নির জন্য বরাদ্দ করতে পারেন।
• অনেক ব্রোকার সংস্থা অবশ্য কম লগ্নিতে রাজি হয় না। তাই পছন্দসই সংস্থাকে খুঁজে বার করার পরিশ্রমটকু আপনাকে করতেই হবে।।
• দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারে লগ্নি করাই ভাল। পাঁচ বছরের বেশি শেয়ার ধরে রাখলে যে-কোনও সঞ্চয় প্রকল্পের থেকে রিটার্ন বেশি হতে পারে।
• দু’তিন ধরনের শিল্প থেকে একটু একটু শেয়ার কিনুন। তার আগে দেখুন সংস্থাগুলির ব্যালান্স শিট। বিশেষত, শেয়ার প্রতি আয়, পুরনো ডিভিডেন্ডের রেকর্ড, নিট সম্পদ ইত্যাদি। বাজারে দাম ঠিকঠাক পাচ্ছেন কি না জানতে, দেখে নেবেন শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত। তবে এক সঙ্গে বেশি টাকা লাগাতে অসুবিধা থাকলে শেয়ারগুলি এক সঙ্গে কিনবেন না। বরং পরিকল্পনা মাফিক দফায় দফায় কিনুন। তার পর অপেক্ষা করুন লম্বা সময় ধরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy