Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

আর্থিক পরিকল্পনা করার সময়ে দু’ধরনের লক্ষ্যের কথা বলি আমি। স্বল্প মেয়াদি, যা মোটামুটি ৫ বছরের মধ্যে। আর দীর্ঘ মেয়াদি, যার জন্য হাতে ৫ বা ১০ বছরের বেশি সময় রয়েছে। ভাস্করও নিজের জন্য বেশ কিছু স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য স্থির করেছেন।

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪০
Share: Save:

ভাস্কর (৪০) • স্ত্রী (৩৫) • মেয়ে (৬) • মা (৬৫)

বেসরকারি সংস্থার কর্মী • ইচ্ছে বাড়ি দোতলা করা ও গাড়ি কেনা • লক্ষ্য মেয়ের পড়াশোনা ও বিয়ের জন্য সঞ্চয়

আর্থিক পরিকল্পনা করার সময়ে দু’ধরনের লক্ষ্যের কথা বলি আমি। স্বল্প মেয়াদি, যা মোটামুটি ৫ বছরের মধ্যে। আর দীর্ঘ মেয়াদি, যার জন্য হাতে ৫ বা ১০ বছরের বেশি সময় রয়েছে। ভাস্করও নিজের জন্য বেশ কিছু স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য স্থির করেছেন। আজ তাঁকে সেই পথে এগোনোর পরামর্শ দেব। দেখব, পরিকল্পনায় ভুল-ত্রুটি কোথায়।

সমস্যা ১

সঞ্চয় নেই: ভাস্করের বয়স ৪০ বছর। কিন্তু সে ভাবে সঞ্চয় করতে পারেননি। অথচ ৩-৫ বছরের মধ্যে বাড়ি দোতলা করা, গাড়ি কেনার মতো পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু সে জন্য টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে ধারণা নেই। মায়ের পেনশন বাদ দিয়ে তাঁর হাতে মাস গেলে মাত্র ২,৭০০ টাকা থাকে। অর্থাৎ, নতুন করে লগ্নির মতো অর্থ নেই। এই অবস্থায় মেয়ের পড়াশোনা, বিয়ে, নিজের অবসরের দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য পূরণও করতে হবে তাঁকে।

সমাধান: লেখায় সেই পথ বাতলানোর চেষ্টা করলাম। এখনই সব বিনিয়োগ হয়তো করা যাবে না। কিন্তু বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা লগ্নির ধরন বদলে তা করতে হবে।

সমস্যা ২

জীবনবিমা: ভাস্কর দু’টি পলিসি ইতিমধ্যেই পেড-আপ করেছেন। তার পরও ৬টি পলিসি রয়েছে এবং সেগুলি মূলত মানি ব্যাক ও এনডাওমেন্ট প্রকল্প। এর মধ্যে দু’টি আবার মেয়ের নামে। ফলে তাঁর কিছু হলে, পরিবার খুব বেশি টাকা হাতে পাবে না। ২৮ লক্ষের টার্ম পলিসি করা সত্ত্বেও না।

সমাধান: বিমা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আরও কিছু পলিসি পেড-আপ করুন। টার্ম পলিসির অঙ্ক বাড়ান।

স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্য

বাড়ি দোতলা করা: ৩ থেকে ৫ বছরে বাড়ি দোতলা করে ইচ্ছে একতলাটা ভাড়া দেওয়ার। দোতলা তৈরির জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা চাই বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ লগ্নিই আটকে জীবনবিমা, পিএফ, পিপিএফ, সুকন্যা সমৃদ্ধি, রেকারিং বা এনএসসি-র মতো দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্পে। নগদ টাকাই নেই। আমার মতে—

আপাতত রেকারিং এবং এনএসসি-র মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সঙ্গে স্থায়ী আমানতের টাকা হাতে এলে, তবে বাড়ির কাজে হাত দিন। তত দিনে বেতনও কিছুটা বাড়বে, ফলে বাকি যে-টাকা প্রয়োজন হবে, তা ঋণ নিতে পারবেন।

পলিসি পেড-আপ করে হাতে আসা টাকা এবং মাস গেলে রয়ে যাওয়া ২,৭০০ টাকার কিছুটা ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডে এসআইপি করুন। সেখান থেকে কিছুটা হলেও টাকা জমাতে পারবেন।

গাড়ি কেনা: বাড়ি দোতলা করা এবং গাড়ি কেনার জন্য একই সময় ঠিক করেছেন ভাস্কর। কিন্তু তা সম্ভব নয়। বাড়ির কাজ শেষ হলে তবেই গাড়ি কেনার কথা ভাবুন। একতলাটা ভাড়া দিয়ে যদি আয় কিছুটা বাড়াতে পারেন, সেই টাকা গাড়ির ডাউনপেমেন্ট করতে রেকারিং-এ রাখতে পারেন।

বছরে এক বার ঘুরতে যাওয়া: এ জন্য এক বছর মেয়াদের রেকারিং করতে হবে। বেড়াতে যাওয়ার আগে যেন সেই টাকা হাতে আসে। যদি এখনই এই সঞ্চয় করা সম্ভব না-হয়, তবে বেতন বাড়ার অপেক্ষা করুন।

দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য

মেয়ের উচ্চশিক্ষা এবং বিয়ে: মেয়ের জন্য ভাস্কর সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্পে লগ্নি করেছেন। এ বছরের বাজেটেই প্রকল্পটি চালুর কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম ভাল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এতে। যেমন—

কন্যা সন্তানের নামে বাবা-মা অথবা অভিভাবক এই প্রকল্প চালু করতে পারেন।

এক জন কন্যা সন্তানের নামে একটি মাত্র অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। সর্বাধিক দু’টি মেয়ের নামে প্রকল্প চালুর সুযোগ রয়েছে।

মেয়ের ১০ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত এই অ্যাকাউন্ট চালু করা যাবে।

বছরে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫০ লক্ষ টাকা প্রকল্পে জমা রাখা যায়।

৮০সি ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে।

বছরে সুদ ৯.২%।

মেয়ের বয়স ১৮ বছর হলে জমা টাকার ৫০% পর্যন্ত তোলা যায়।

২১ বছর হলে অ্যাকাউন্ট বন্ধের সুযোগ মেলে।

একমাত্র ১৮ বছর বয়সের পরে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে, তবেই অ্যাকাউন্টটি মেয়াদ শেষের আগে বন্ধ করা যায়।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ভাস্কর যদি ঠিক মতো এই প্রকল্পে লগ্নি চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে এখান থেকেই তিনি মেয়ের উচ্চশিক্ষা এবং বিয়ের টাকা জোগাড় করতে পারবেন। তবে মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এর সঙ্গেই বেতন বাড়ার পরে একটি ভাল ডাউভার্সিফায়েড ফান্ডে লগ্নি করার পরামর্শ দেব আমি।

অবসরের সঞ্চয়:

বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিপিএফে লগ্নি বাড়াতে থাকুন। মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁর পেনশনের কিছু টাকা এই খাতে রাখতে পারেন।

এসআইপি-র পরিমাণ বাড়ান। লার্জ এবং মিড ক্যাপ ফান্ডের অনুপাত মেনে চলুন। কিন্তু ফান্ডের বেশি লগ্নি যেন হয় শেয়ারে। কম ঝুঁকি চাইলে ব্যালান্সড ফান্ড বেছে নিতে পারেন।

দোতলা তৈরির পরেও রেকারিং চালিয়ে যেতে হবে। মেয়াদ শেষে সেই টাকা স্থায়ী আমানতে রাখতে পারেন।

পিএফ, এনএসসি, স্থায়ী আমানত, এসআইপি, রেকারিং এবং পিপিএফের টাকা দিয়েই অবসরের তহবিল গড়ে তুলতে হবে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

ছবি: প্রতীকী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE