Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুম্বইয়ে ‘ভজহরি’র ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়দুর্গাপুজোর আনন্দের রেশ যেতে না যেতেই এল দীপাবলি ও ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। মুম্বইয়ের তামাম বাঙালি দিদি ও বোনেরা যাতে তাদের প্রিয় দাদা, ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে জমিয়ে বাঙালি ভুরিভোজের আয়োজন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে ‘ভজহরি মান্না’র তরফে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন রাজীব নিয়োগী, গৌতম ঘোষ, সিদ্ধার্থ বসু প্রমুখ।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

দুর্গাপুজোর আনন্দের রেশ যেতে না যেতেই এল দীপাবলি ও ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। মুম্বইয়ের তামাম বাঙালি দিদি ও বোনেরা যাতে তাদের প্রিয় দাদা, ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে জমিয়ে বাঙালি ভুরিভোজের আয়োজন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে ‘ভজহরি মান্না’র তরফে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন রাজীব নিয়োগী, গৌতম ঘোষ, সিদ্ধার্থ বসু প্রমুখ। বেঙ্গলি মাস্টার শেফ হৃষিকেশ করকে সঙ্গে নিয়ে ভাইফোঁটা স্পেশাল রকমারি মেনু তাঁরা তৈরি করে ফেলেছেন। মুম্বইয়ের ওশিওয়াড়ায় ‘ভজহরি মান্না’র রেস্তোরাঁতে গিয়ে মধ্যহ্ন ও নৈশভোজে ভাইফোঁটা স্পেশাল খাবারগুলো খাওয়ার ব্যবস্থা তো থাকছেই, এর সঙ্গে পাওয়াইয়ে টেক অ্যাওয়ে কাউন্টার থেকেও ভাইফোঁটা স্পেশাল খাবার কিনে নিয়ে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা তো থাকছেই। ভাইদের পছন্দের খাবার রান্না করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এ বারের সবচেয়ে বড় চমকটি হল কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত ব্যস্ত দাদা বা ভাইদের ভাইফোঁটা স্পেশাল খাবারগুলো লাঞ্চটাইমে তাদের অফিসেই পৌঁছবার বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী যে সমস্ত দাদা ভাইয়েরা মুম্বইপ্রবাসী, তাদের দিদি বা বোনেরা চাইলে কলকাতার ‘ভজহরি মান্না’র যে কোনও আউটলেটে গিয়ে সেখান থেকেই মুম্বইয়ে দাদা বা ভাইয়ের বাড়ি বা অফিসে ভাইফোঁটা স্পেশাল খাবার পাঠাবার ব্যবস্থা পাকা করতে পারেন। দেওয়ালে ফোঁটা দিয়ে মোবাইলে ভাই বা দাদার উদ্দেশ্যে ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, জমের দুয়ারে পড়ল কাটা মন্ত্র উচ্চারণ করে দূর থেকে দুরাভাসে ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা জানিয়ে তার পর লাঞ্চে বা ডিনারে অফিস বা বাড়িতে ভজহরির স্পেশাল খাবার পাঠিয়ে দাদা বা ভাইকে আপ্লুত করে তুলতে পারেন।

ছবি: অনুষ্টুপ ভট্টাচার্য।

ভজহরি মান্না-র অন্যতম কর্ণধার রাজীব নিয়োগী জানালেন, “মুম্বইয়ের চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ী বাঙালিরা খুবই ব্যস্ত থাকেন, তাই তাদের পক্ষে ভাইফোঁটার দিন প্রবাসে বসে পঞ্চব্যঞ্জনে বাঙালি ভুূরিভোজের আয়োজন করা, বাঙালি মাছ, সবজি জোগাড় করে রান্নাবান্না করা খুবই সমস্যার। তাই তাদের কথা ভেবেই বিশুদ্ধ আমিষ ও নিরামিষ বাঙালি খাবার ভাইফোঁটার দিনে মুম্বইয়ের বাঙালিদের অফিস ও বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করেছি।” রাজীববাবু আরও জানালেন, এক সঙ্গে বেশি লোকের (১০০-২০০) খাবার লাগলে তার জন্যও ডেচকি সার্ভিস ও কেটারিংয়ের বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে।

যারা ভাইফোঁটা স্পেশাল খাবার অর্ডার করতে চান, তারা মুম্বইয়ে যোগাযোগ করতে পারেন সুরজিত্‌ ৮৭৬৭৫৭৫৫৬৬/২৮৫৭৪৪৭৭ নম্বরে। যারা পাওয়াইতে থাকেন তারা সরাসরি ভজহরি মান্নার টেক অ্যাওয়ে কাউন্টারে চলে আসতে পারেন।

ঠিকানা! শাহ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, উইং সি, ইউনিট, থ্রিু, গ্রাউন্ড ফ্লোর, শাকিবিহার রোড, আন্ধেরী ইস্ট, মুম্বই। এ ছাড়া ওম হিরা পান্না মলের কাছে ওশিয়াড়া অব লিঙ্ক রোডে ভজহরি মান্নার রেস্তোঁরাতে গিয়েও ভাইফোঁটার দিন জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন। ফোন-৬৫৯৯৩৩৮৫। এ বারে ভজহরি মান্না-র ভাইফোঁটা স্পেশাল মেনুতে থাকছে—ভেটকি রংপুরি ফ্রাই, ভেটকি পাতুরি, সরষে ইলিশ, ইলিশ বরিশালী, ভাপা ইলিশ, পাবদা সরষে, ট্যাংরার ঝাল, চিতল মুইঠ্যা, চিতল পেটির কালিয়া, তেল কই, চিংড়ির মালাইকারি, মাটন ডাকবাংলো, মাংস ও মুরগির ঝোল প্রভৃতি। নিরামিষে থাকছে ধোকার ডালনা, মোচার ঘন্ট, ছানার ডালনা, পটলের দোলমা, মালাই ফুলকপি, ঝিঙে আলু পোস্ত, ছানার কোর্মা প্রভৃতি। থাকছে বাসন্তি পোলাও, ইলিশ পোলাও প্রভৃতি। মিষ্টির মধ্যে থাকছে মিষ্টি দই, ল্যাংচা, সন্দেশ, রাজভোগ প্রভৃতি। যারা মুম্বইয়ে ভাইদের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে চান তাদের জন্য ‘ভজহরি মান্না’র বিখ্যাত পদের রেসিপি জানানো হল।

ধোকার ডালনা

উপকরণ: মটর ডাল ৫০০ গ্রাম, ছোলার ডাল ৫০০ গ্রাম। মটর ও ছোলার ডাল ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। দুটি আলাদা পাত্রে জল নিয়ে মটর ডাল ও ছোলার ডাল ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ২ ঘণ্টা বাদে মিক্সিতে ডাল বেটে নিন। আদাবাটা ৫০ গ্রাম, ১০টা কাঁচালঙ্গা বাটা, নুন-আন্দাজমতো, চিনি ৩ টেবিল চামচ, একটা নারকোলকোরা, হিং বড় এক চিমটে, নারকোল কোরা, কালো জিরা ১ টেবিল চামচ, জল এক গ্লাস।

প্রণালী: একটি পাত্রে মটর ডাল ও ছোলার ডাল বাটা নিয়ে তার মধ্যে আদাবাটা, কাঁচা লঙ্কা বাটা, নুন, চিনি, নারকোল কোরা, হিং কালোজিরা নিয়ে হাতের সাহায্যে ভাল করে মেখে ওর মধ্যে জল ঢেলে ভাল করে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন।

সরষের তেল: ১৫০ গ্রাম। কড়া আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে উপরের তৈরি ডালবাটার মিশ্রণটা দিয়ে নিভু আঁচে খুন্তির সাহায্যে ভাল করে কষুন। ভাল করে কষিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। একটা বড় চৌকো ট্রের ভিতর হাত দিয়ে সরষের তেল মাখিয়ে নিন। এ বার রান্না করা ডালের মিশ্রণটা ট্রের মধ্যে বিছিয়ে দিন। একটা ট্রে দিয়ে চেপে তুলে নিয়ে বেলনির সাহায্যে বেলে সমান করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছুরির সাহায্যে বরফির শেপে কেটে নিন। কড়া আঁচে বসিয়ে আন্দাজ মতোন রিফাইন্ড ওয়েল গরম করে ডালের মিশ্রণের বরফিগুলো দিয়ে ডুবো তেলে হালকা বাদামি রং করে ভেজে নিন। তুলে তেল ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন। ধোকা তৈরি হয়ে গেল।

গ্রেভি তৈরির উপকরণ: সরষের তেল ১৫০ গ্রাম, ছোট দ্বারচিনির স্টিব ৫টা, ছোট এলাচ ৫টা, তেজ পাতা ৩টে, আদাবাটা ৩ টেবিল চামচ, ২ টো বড় সাইজের টম্যাটো পেস্ট, টক দই ১০০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ। লঙ্কার গুঁড়ো দেড় টেবিল চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, নুন আন্দাজমতো, অর্ধেক নারকোল কোরা, পোস্তবাটা ১ টেবিল চামচ, জল আন্দাজ মতো, ভাজা জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, গরম মশলার গুঁড়ো এক চিমটে, ঘি ১ চামচ।

প্রণালী: কড়া আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে দারচিনি, ছোটএলাচ, তেজপাতা ফোড়ন দিন। আদাবাটা দিয়ে নিভু আঁচে নেড়ে ভেজে টম্যাটো পেস্ট দিয়ে ভাল করে নেড়ে কষে নিন। তেল ছাড়লেই টকদই দিয়ে নেড়ে মেশান, কিছুক্ষণ বাদে ওর মধ্যে হলুদ গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কারগুঁড়ো, চিনি, নুন দিয়ে ভাল করে কষুন। এর পর নারকোলকোরা ও পোস্তবাটা দিয়ে নিভু আঁচে ক্রমাগত নেড়ে মিনিট তিন চারেক কষে নিন। এর পর আন্দাজ মতো জল দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিভু আঁচে পাঁচ মিনিট রান্না করুন। এর পর ভাজা ধোকার বরফিগুলো ঝোলের মধ্যে দিয়ে রান্না করুন মিনিট দুয়েক। এর পর আঁচ বন্ধ করে উপর থেকে ভাজা জিরের গুঁড়ো, গরম মশলার গুঁড়ো ও ঘি ছড়িয়ে দিয়ে নেড়ে ভাল করে মিশিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে মিনিট পাঁচেক রেখে দিন। লুচি, পরোটা বা ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।

গলদা চিংড়ির মালাইকারি

উপকরণ: গলদা চিংড়ি ১ কেজি মোট ৭ পিস, চিংড়ির কালো শিরা, মাথার উপরের ময়লা পরিষ্কার করে লেজ ও উপরের অংশের খোসা অক্ষত রেখে নীচের অংশের খোসা ও চিংড়ির শুঁড়গুলো বাদ দিয়ে দিন। চিংড়ি মাছগুলো ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। অল্প নুন ও হলুদ মাছগুলোর গায়ে মাখিয়ে আলাদা করে রাখুন। ঘি ২ টেবিল চামচ, তেজপাতা ২টো, দারচিনির ছোট স্টিক ৩টে, ছোট এলাচ ৪টে, পেঁয়াজ বাটা ১০০ গ্রাম, রসুনবাটা হাফ চা চামচ, আদাবাটা ২ চা চামচ, একটা বড় টমেটো কুচি, টক দই ৫০ গ্রাম, লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ (একটি পাত্রে টক দই ও শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো নিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করে নিন।) নুন আন্দাজ মতো, চিনি ১ চা চামচ, জল ৩ কাপ, একটা নারকোলের দুধ, ঘি ১ টেবিল চামচ, গরম মশলার গুঁড়ো এক চিমটে।

প্রণালী: চিংড়িগুলো ভেজে তুলে নেবার পর কড়ায় যে সরষের তেলটা অবশিষ্ট থাকবে তার মধ্যে ঘি দিয়ে গলিয়ে নিন। তেজপাতা, দারচিনি, ছোটএলাচ ফোড়ন দিন। পেঁয়াজবাটা দিয়ে নিভু আঁচে ক্রমাগত খুন্তি দিয়ে নেড়ে ভাজুন। সোনালি রং হয়ে গেলে ওর মধ্যে রসুনবাটা দিয়ে একটু নেড়ে আদাবাটা দিন। ভাল করে কষুন। এ বার টম্যাটো কুচি দিয়ে কষুন, টমেটো গলে গেলে ওর মধ্যে ফেটানো টক দই ও শুকনো লঙ্কার গুঁড়োর মিশ্রণটা ঢেলে দিন। নুন ও চিনি দিয়ে নেড়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। ভাজা চিংড়িগুলো ওর মধ্যে দিয়ে ১ কাপ জল দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিন। নিভু আঁচে রান্না করুন। জল শুকিয়ে এলে ওর মধ্যে আরও ২ কাপ জল দিন। মিনিট দুয়েক ফুটিয়ে নিন। চিংড়িগুলো সিদ্ধ হয়ে এলে ওর মধ্যে নারকোলের দুধটা ঢেলে দু’মিনিট ফুটিয়ে আঁচ বন্ধ করে দিন। ঘি ও গরম মশলার গুঁড়ো উপর থেকে ছড়িয়ে দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে পাঁচ মিনিট রেখে দিন। ৫ মিনিট পর গরম দেরাদুন চালের ভাত বা পোলাও সহযোগে পরিবেশন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE