Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মার্ক্সবাদে বিশ্বাসঅটল রইল

এ ছাড়াও একটি অধ্যায়ে ‘ছবির কথা’। ছবি নিয়ে, বা ছবি-আঁকিয়ের জীবন নিয়েই যেন ডায়েরির মতো লিখে গিয়েছেন গোটা বইয়ে। শিল্পী চন্দনা হোর, সোমনাথ-কন্যা, বাবার পুরনো কয়েকটি বঙ্গলিপি খাতা জুগিয়ে দিয়েছেন দেবভাষা-র সৌরভ দে ও দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়কে, সঙ্গে অপ্রকাশিত স্কেচ-খাতাও।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

মনে পড়ে, মনে পড়ে না

সোমনাথ হোর

৩৫০.০০

দেবভাষা

১৯৫৬-য় সোভিয়েত রাশিয়ায় ক্রুশ্চেভের স্ট্যালিন নিন্দার পর ভারতের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে তোলপাড় হয়ে গেল, পঞ্চাশের দশকের গোড়াতেই অবশ্য আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট মুখপত্রে ভারতীয় কমিউনিস্টদের রাজনীতি যে সংকীর্ণতার দিকে ঝুঁকছে তা নিয়েও কড়া সমালোচনা হচ্ছিল। এই প্রেক্ষিতকেই খেয়াল করিয়ে সোমনাথ হোর লিখছেন তাঁর আত্মকথনে: ‘‘১৯৫৬ সালে পার্টির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ ছিন্ন হল কিন্তু মানসিকতায় মার্কসবাদে বিশ্বাস অটুট রইল এবং কখনোই নিজেদের পার্টি থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করিনি। সেই সঙ্গে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যকেও ক্ষুণ্ণ হতে দিইনি।’’ বইটিতে এ-লেখার শিরোনাম ‘আত্মজীবনীর অন্যদিক’। যে স্মৃতিগদ্যের নামে এ-বইয়ের নাম, তাতে লিখেছেন, ‘‘দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত-র গ্রাম ‘বরমা’য় আমাদের জন্ম। দেশের কাজে খুব নামডাক ছিল, সেজন্য তো বটেই, মেমসাহেব বিয়ে করেছিলেন বলেও আমাদের খুব গর্ব ছিল। আমরা সাহেব-বিদ্বেষী ছিলাম, কিন্তু মেম পরিগ্রহ করলে পরিস্থিতি কেমন পালটে যেত। অবচেতনে এমন ধারণা হয়তো ছিল যে, বোমা পিস্তলে হত্যা এবং মদনবাণে ঘায়েল করা একই রকম ফলপ্রসূ।’’ লাল কাঁকরের শান্তিনিকেতন— এ অধ্যায়ের একটি গদ্য ‘কিঙ্করদার শেষ যাত্রার শুরু’: ‘‘কিঙ্করদার প্রয়াণ শান্তিনিকেতনের জীবনে এক মর্মান্তিক অনুভব। তাঁর ভাঙা হাসি, উদাত্ত গান, উষ্ণ সান্নিধ্যর অভাব আমাদের দারিদ্র্য বৃদ্ধি করল। আমরা ভাবিনি— এত শীঘ্র শান্তিনিকেতন তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে বঞ্চিত হবে।’’ সোমনাথ হোরের পুরনো সহকর্মী অগ্রজপ্রতিম দিনকর কৌশিক যখন তাঁকে আহ্বান জানালেন কলাভবনে লুপ্তপ্রায় ছাপচিত্র বিভাগকে নতুন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য, ১৯৬৯-এ সেখানে স্থায়ী ভাবে ঠাঁই নিলেন তিনি। তাঁর আসায় খুব খুশি হয়েছিলেন রামকিঙ্কর ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, ‘‘তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন।’’ এ ছাড়াও একটি অধ্যায়ে ‘ছবির কথা’। ছবি নিয়ে, বা ছবি-আঁকিয়ের জীবন নিয়েই যেন ডায়েরির মতো লিখে গিয়েছেন গোটা বইয়ে। শিল্পী চন্দনা হোর, সোমনাথ-কন্যা, বাবার পুরনো কয়েকটি বঙ্গলিপি খাতা জুগিয়ে দিয়েছেন দেবভাষা-র সৌরভ দে ও দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়কে, সঙ্গে অপ্রকাশিত স্কেচ-খাতাও। সেই সব স্কেচ আর এই সব লেখালেখি থেকেই তৈরি হয়ে উঠেছে সোমনাথ হোরের আপনকথাটি, ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসময় নির্যাস নিয়ে।

নৃতত্ত্বের চোখ

অভিজিত গুহ

২০০.০০

উপত্যকা (মেদিনীপুর)

সেই মানুষ যেআজকের মানুষহয়ে উঠলসময়ের পথে তার নিরানব্বই ভাগই ছিল শিকারি জীবন। মানুষের অস্তিত্ব শুধু শারীরিক নয়সমাজ আছে, সংস্কৃতি আছে, আছে প্রাগিতিহাসের পরিক্রমা। অতীত আর সমকাল নিয়ে নৃতত্ত্বের এই পরিসর সুবিস্তৃত। এমনই জাগতিক চর্চার বহুমুখিনতায় জল, জমি, পরিবেশ, আত্মীয়তা, রোগ, নগরায়ণ, বিদ্রোহ, হিংসা, জ্যোতিষবিদ্যা, সিনেমা, গুজব ইত্যাদি মানুষের যাপন-সংশ্লিষ্ট বিস্তারকে দেখেছেন লেখক। এ সব লেখার সরল কথায় জনজাতীয় গোষ্ঠীর অবস্থানে শিকার-পশুপালন-কৃষিকাজের ধারাপথে সত্যাসত্য সম্পর্কও খুঁজেছেন। ডারউইনের প্রগতি ধারণা জীবনবিজ্ঞানের বাইরে সমাজবিজ্ঞানের চৌহদ্দিতে আনার সূত্রে, অমর্ত্য সেনের সঙ্গে প্রবন্ধাকারে বিতর্কও করেছেন। শিল্পকলার উৎকর্ষ বিচার ডারউইনীয় প্রাকৃতিক নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়এরই বিপ্রতীপে মতামত দিয়েছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রপাত থেকে চৌহদ্দির অধিবাসীদের সঙ্গে সংযোগ-সম্পর্কের ভিত্তি নিয়েও শিক্ষকতার পাশাপাশি জিজ্ঞাসু হয়েছেন। এ সব লেখাও ফলিত নৃতত্ত্বের সন্ধানী উপকরণ। বাংলায় নৃতত্ত্ব পরিচয়ে অভিজিত ব্যতিক্রমীদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াসী। নৃবিজ্ঞানের তথ্যভিত্তি ও তার্কিক বয়ানে, ঔৎসুক্য নিয়ে মানুষকে জানা ও জানানোয়, বইটি হয়ে উঠেছে আকর্ষণী সংলাপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE