Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ছোটগল্প

নিজস্বী

এই বছর রিঙ্কার বোর্ডের পরীক্ষা। পড়াশোনায় মেয়েটা চিরকালই ভাল। ওর বন্ধুরা যেখানে অনেক অল্প বয়স থেকেই মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত, সেখানে রিঙ্কাকে মোবাইল দেওয়া হয়েছে ক্লাস ইলেভেনে। 

ছবি: সৌমেন দাস

ছবি: সৌমেন দাস

পার্থ সরকার
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

রিঙ্কা, রিঙ্কা! সুদেষ্ণা ডেকে চলেছে সমানে। সাড়া নেই। বাথরুমের দরজা বন্ধ। একটা হিমেল স্রোত সুদেষ্ণার শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে গেল। জয়ন্ত বাড়িতে নেই। সুদেষ্ণা সজোরে দরজায় আঘাত করতে থাকল।

এই বছর রিঙ্কার বোর্ডের পরীক্ষা। পড়াশোনায় মেয়েটা চিরকালই ভাল। ওর বন্ধুরা যেখানে অনেক অল্প বয়স থেকেই মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত, সেখানে রিঙ্কাকে মোবাইল দেওয়া হয়েছে ক্লাস ইলেভেনে। মেয়ে কতক্ষণ ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে তা সুদেষ্ণার নজর এড়ায় না। জয়ন্ত, সুদেষ্ণা আর রিঙ্কা মোটামুটি নিজেদের মধ্যে অনায়াস। কিন্ত গত এক বছর ধরে সুদেষ্ণা লক্ষ করছে, রিঙ্কাকে সেলফির নেশায় পেয়েছে। নিজস্বী তুলতে সুদেষ্ণা নিজেও ওস্তাদ। এটা তার প্রিয় অবকাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যদিও সুদেষ্ণার ধারণা, ও কখনওই সীমা লঙ্ঘন করছে না। গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। যে রিঙ্কা কোনও দিন মুখেমুখে তর্ক করে না তাকে সেলফির বাড়াবাড়ি নিয়ে বলতে গিয়ে ঝপাং উত্তর, ‘‘মা আই অ্যাম সেভেনটিন, নিজেকে দেখো।’’ উত্তর শুনে সুদেষ্ণা অবাক। মেয়েকে বকুনি না দিয়ে ব্যাপারটা জয়ন্তকে বলেছিল। কিন্তু সে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে বলেছিল, ‘‘ঠিকই তো আছে। ভুল কী বলেছে? যে রকম দেখবে সে রকমই শিখবে।’’ সুদেষ্ণা বুঝেছিল, কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। নিজের অভ্যেস বদলাতে হবে। তাই প্রকাশ্যে সেলফি তোলা বন্ধ করে দিল। গুণগ্রাহীদের অভিযোগ, লাইকের সংখ্যা দেখার প্রলোভন, এ সব থেকে বেরনো সহজ ছিল না। কিন্তু মেয়ের কথা ভেবে সুদেষ্ণা পারল। অথচ লাভ কিছুই হল না। রিঙ্কা বদলাল না।

আজ রিঙ্কার মন ভাল নেই। এক-এক দিন এমন হয়। কিচ্ছু ভাল লাগে না। হেডফোন লাগিয়ে গান শোনার চেষ্টা করল। ভাল লাগল না। মা বলে, মন ভাল বা খারাপ সবখানে রবীন্দ্রনাথ। তাও কেন আজ ভাল লাগছে না? রিঙ্কা জানে মন ভাল করার ওষুধ। মুঠোফোনে হাত দিল। ছবি তুলল বিভিন্ন কোণ থেকে। স্নান করে তোয়ালে পরে স্নানঘরে তুলল আরও কিছু ছবি। কী সুন্দর দেখতে লাগছে নিজেকে! ভাবল এক বার অদ্রিজার সঙ্গে শেয়ার করবে। ধুর! ওর মুখে কিচ্ছু আটকায় না। তাই আর পাঠাল না। কিন্তু মনটা ভাল হয়ে গেল। সংবিৎ ফিরল মায়ের ডাকে। তড়িঘড়ি জামা পরে বাথরুম থেকে বেরল সে। খেয়ে উঠে আবার ছবিগুলো দেখে দু’একটা ক্রপ, স্টাইল করে সেভ করে রাখল রিঙ্কা। বিকেলে গেল কোচিং সেন্টার।

রিঙ্কা আর অদ্রিজা প্রাণের বন্ধু। কিন্তু রিঙ্কা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না অদ্রিজার বয়ফ্রেন্ড রজতকে। কী করে যে ছেলেটাকে অদ্রিজার ভাল লাগে কে জানে। রূপে গুণে কোনও দিক থেকেই তো অদ্রিজার সঙ্গে যায় না। ছেলেটি কলেজে পড়লেও সারাক্ষণ মস্তানি করে বেড়ায়। অদ্রিজা ওকে বলেছে রজত গ্রাফিক ডিজ়াইনার। বিশ্বাস হয় না রিঙ্কার। এই ব্যাপারটা অদ্রিজাকে বলেও লাভ হয়নি। তাই রিঙ্কাও চুপ করে গিয়েছে।

আজ কোচিং থেকে বেরিয়েই রিঙ্কা রজতের বাইকটা দেখতে পেল। দেখল, অদ্রিজার মুখ উজ্জ্বল। সে জোর করে টানতে টানতে কফি শপে নিয়ে গেল রিঙ্কাকে। অদ্রিজা অর্ডার করতে উঠে গেল। রজত আর ও মুখোমুখি। কী অস্বস্তি! ভাবল এই মুডের একটা ছবি নেয়। কিন্তু ফোনটা মুখের সামনে ধরেও নামিয়ে রাখল। তাই দেখে রজত বলল, ‘‘তোমার ক্লান্ত লাগে না, প্রতিদিন এত সেলফি তুলতে?’’ রিঙ্কা কাঠ-কাঠ গলায় উত্তর দিল, ‘‘আমার মোবাইল। আমার মুখ। এনি প্রবলেম?’’ রজত ব্যঙ্গের গলায় বলল, ‘‘নাহ।’’ রিঙ্কা কোনও উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। চোখেমুখে ভাল করে জল দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরে এসে দেখে, রজতের আরও দুই বন্ধু উপস্থিত। তাদের মধ্যে এক জনের নাম সে জানে না। কিন্তু আগে দেখেছে। দ্বিতীয় জনকে প্রথম বার দেখছে রিঙ্কা। কী অবলীলায় ওদের চেয়ারে রজত তার বন্ধুদের বসতে দিল। নিজে বসে আছে। অথচ অদ্রিজা চেয়ার খুঁজে বেড়াচ্ছে।

রিঙ্কার বেশ খারাপ লাগল। মা বলে, ছোট ছোট কাজ দিয়েই মানুষ চেনা যায়। চেয়ার পাওয়া গেল। কিন্তু মেজাজ ততক্ষণে বেশ খারাপ। প্রিয় কফিও বিস্বাদ লাগছে রিঙ্কার। ফোনটা টেবিলের উপর ছিল। বাজতেই রজতের এক বন্ধু অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘এটা তোমার?’’ ছেলেটার কণ্ঠস্বর পরিচিত লাগল রিঙ্কার। মনে হল, আগে শুনেছে কোথাও। অদ্রিজা হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে রিঙ্কাকে দিয়ে বলল, ‘‘আন্টি ফোন করেছে? বল না একটু দেরি হবে।’’ রিঙ্কা ঘাড় নাড়িয়ে বলল, ‘‘না রে। মা’র আবার খাতা দেখা আছে। রাতে কথাই হবে না। আমি যাই।’’ রজতের সেই বন্ধু বলল ‘‘চাপ নিও না। ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি তোমায় ড্রপ করে দেব?’’ অদ্রিজা আন্তরিক ভাবে বলল, ‘‘সেই ভাল। দিলদার তোকে নামিয়ে আসুক।’’ রিঙ্কা দেখল, রজত কোনও কথা না বলে একমনে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে গান শুনে যাচ্ছে। রিঙ্কা ভাবল একটা ক্যাব ডেকে নেবে। কিন্তু সেই সময় ক্যাবের ভাড়া দেখে রিঙ্কার চোখ কপালে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে এসে এত টাকা খরচ করে ফেললে মা আর হাতখরচের টাকা দেবেই না। এ ব্যাপারে সুদেষ্ণা বেশ কড়া। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই দিলদারের সঙ্গে বেরিয়ে গেল সে। গড়িয়াহাট থেকে বাইকে ওর বাড়ি বড়জোর দশ মিনিট। রাস্তায় কোনও কথা হল না। বাড়ির সামনে ওকে নামিয়ে দিলদার হেসে বলল, ‘‘গুডনাইট।’’ চলে যাওয়ার পরে হঠাৎ রিঙ্কার মনে হল, ছেলেটা তো ওকে জিজ্ঞেসও করেনি কোথায় নামবে! তবে কি ওকে অদ্রিজার সঙ্গে ওদের আবাসনে দেখেছে? চিন্তায় ছেদ পড়ল বাড়িতে ঢুকে। বাড়ি ফিরে রোজনামচা মাকে বলা রিঙ্কার অভ্যাস। এটা ওদের নিজস্ব সময়। আজ রিঙ্কার মুখে সব শুনে সুদেষ্ণা বলল, ‘‘রজতকে নিয়ে অদ্রিজাকে কিছু বলিস না। ওকে বুঝে নিতে দে।’’

দু’দিন কেটে গেল। এর মধ্যে আর একটা ঘটনা ঘটল। যে মেয়ে মোবাইল হাতছাড়া করে না, সে মেয়ে মোবাইল খুঁজে পাচ্ছে না। মেয়ের কান্না শুনে কর্মস্থল থেকে প্রায় দৌড়তে দৌড়তে বাড়ি ফিরে দেখে, আবাসনের সিকিয়োরিটি গার্ড ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রিঙ্কার মুখ কাঁচুমাচু। জানা গেল, রিঙ্কা স্নানের পরে ছাদে উঠে পড়াশোনা করছিল। সেখানেই ফোনটা ছেড়ে এসেছে। উপরতলার ফ্ল্যাটের একটি ছেলে সিকিয়োরিটির কাছে জমা দিয়েছে।

রিঙ্কার রাতে পড়াশোনা ভাল হয়। নিচু লয়ে গান চালিয়ে পড়া ওর অভ্যেস। রাত তখন দুটো। অদ্রিজার নম্বর ভেসে উঠল। অদ্রিজা কাঁদছে। রিঙ্কা আশঙ্কিত হল। বলল, ‘‘কী হয়েছে প্লিজ় বল।’’ অদ্রিজা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘‘রিঙ্কা এফবি দেখ।’’ রিঙ্কা ওর ওয়ালে গিয়ে স্তম্ভিত।

সে দিনের স্নানের পরে তোলা ছবি পাতা জুড়ে। তবে তফাত আছে। বুক অবধি তোয়ালে জড়ানো অবস্থায় সেলফি তুলেছিল রিঙ্কা। এখানে একটা সুতোও নেই। রিঙ্কা আর্তনাদ করে উঠল। ছুড়ে ফেলে দিল মোবাইল। আওয়াজ শুনে সুদেষ্ণা দৌড়ে এল। দরজার সামনে মোবাইল পড়ে আছে। উপরে জ্বলজ্বল করছে রিঙ্কার নগ্ন শরীর।

ওসি পল্লব গঙ্গোপাধ্যায় মন দিয়ে সব শুনে সরাসরি রিঙ্কাকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ছবিটা যে কেউ আপলোড করেছে এটা তো বুঝতেই পারছ? তোমার কি কাউকে সন্দেহ হয়?’’ রিঙ্কা মাথা নিচু করে আছে। জয়ন্তর প্রবল অস্বস্তি হচ্ছে এটা ভেবে যে এর পর কী কী প্রশ্ন আসতে পারে। সবাইকে চমকে দিয়ে সুদেষ্ণা দৃঢ় গলায় বলল, ‘‘তুই চুরি করিসনি, অন্য লোকে করেছে। জবাব দে ওঁকে।’’ রিঙ্কা রজত ও তার দুই বন্ধুর কথা বলল। পল্লবকে জানাল, কী কী কারণে সে রজতকে অপছন্দ করে। আরও কিছু টুকিটাকি প্রশ্নের পরে পল্লব জয়ন্তর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘দেখুন মিস্টার সেন, এ রকম ঘটনা এখন হামেশাই ঘটছে। এই কেসে আপনার মেয়ের অসাবধানতার সুযোগ কেউ নিয়েছে। ঘটনাটা ঘটতে পারে দুটো জায়গা থেকে। দুটো স্পট। আপনার ফ্ল্যাটের ছাদ আর কফিশপ। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন, আপনার মেয়েই কেন? কারণ আজকাল টিনএজদের ব্রেকআপের পরে অন্তরঙ্গ ছবি পর্ন সাইটে বিক্রি হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রচুর ঘটছে। একে বলে রিভেঞ্জ পর্ন। প্রেমে বদলা। বুঝলেন মশাই?’’ সুদেষ্ণা টের পেল রিঙ্কা ওর হাতটা জোরে চেপে ধরল।

পল্লব বলে চলে, ‘‘আমি সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করেছি। সাড়ে আটশোর বেশি পর্ন সাইট আমাদের দেশে মানুষ দেখেন। আইন করেও আটকানো যাচ্ছে না। তবু আমরা চেষ্টা করব অপরাধীকে খুঁজে বার করতে। না হলে কেস করবেন, যদি কম্পেনসেশন ক্লেম করতে চান।’’ রক্তশূন্য মুখে জয়ন্ত বলল, ‘‘না না, ও সব কিছু চাই না। মেয়েটা যাতে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে... সামনে পরীক্ষা তো।’’

‘‘হুম। ঠিক আছে। দত্ত...’’ পাশে দাঁড়ানো উর্দি পরা মানুষটা বলে উঠলেন, ‘‘স্যর।’’

‘‘যা শুনলেন আগে একটা ডাইরি নিন। ও হ্যাঁ, পোস্টটা এবং ওরিজিনাল ছবিটা ডিলিট করেছ?’’ রিঙ্কা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।

‘‘আইপি অ্যাড্রেসটা দরকার, যদিও এতক্ষণে ছড়িয়ে গিয়েছে। যাই হোক, সন্দেহজনক সবাইকে ব্লক করে দাও, আনফ্রেন্ড কোরো না। আমাদের দরকার হতে পারে। এফবি টিমকেও রিপোর্ট করবে। পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করবে। মনে থাকবে? আমাদের এক জন ই-সেফটি কমিশনার আছেন। তাঁকেও রিপোর্ট করতে পারো।’’

প্রয়োজনীয় কাজ সেরে তিনজনে বাইরে আসতেই সুদেষ্ণার ফোন কেঁপে উঠল। তরুণিমা। ‘‘বল। না রে আজ যাব না,’’ সুদেষ্ণা বলে যাচ্ছিল। হঠাৎ মুখটা কঠিন করে বলল, ‘‘শুনছিস না বল দেখছিস?’’ সুদেষ্ণা ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিল। জয়ন্ত জিজ্ঞেস করল, ‘‘কেটে দিলে কেন? এ সব তো এখন শুনতেই হবে।’’ সুদেষ্ণা পাথরের দৃষ্টিতে বলল, ‘‘আমি কাটিনি। ওই কেটেছে। চলো।’’ গাড়ি থেকে নামার সময় কমপ্লেক্সের গেটে ইতস্তত চেনা মুখের ভিড়। মন্তব্য উড়ে এল। ‘কী যে হচ্ছে সব আজকাল। মেয়েকে এখন বেরোতে দেবেন না ক’দিন।’ কোনও উত্তর না দিয়ে ওরা ফ্ল্যাটে ঢুকে গেল।

জয়ন্তকে এক বার ব্যাঙ্কে যেতে হল। মেয়েটা বাড়ি ফিরেও কিচ্ছু খায়নি। ল্যাপটপে বসে পল্লবের কথামতো রিঙ্কা কাজগুলো করে ফেলল। তখনই ওর ফোনে ফোনটা এল। অচেনা ল্যান্ডলাইন নম্বর। সুদেষ্ণা ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই কেটে গেল। আবার বাজল। এ বার রিঙ্কা ছুটে এসে ফোনটা ধরে বলল, ‘‘হু ইস দিস?’’ ও দিক থেকে ফ্যাসফেসে গলা, ‘‘হাই বেবি। রাগ করে না। পুলিশে গিয়ে কী হবে? আমরা তো আছি। ওসি আমাদের কেনা। কিসসু হবে না। বাবাকে বলো দশ লাখ তুলে রাখতে। বাবা, মা’র কোন ব্যাঙ্কে কত আছে আমরা জানি। ও হ্যাঁ, শোনো মামণি, টাকাটা কাল সকাল দশটায় চৌভাগা বাসস্ট্যান্ডের পিছনে একটা সিমেন্টের বেঞ্চের নীচে রেখে আসতে বলবে বাবাকে। পুলিশকে জানালে খবর পেয়ে যাব। এমনিতে তোমার ছবি বিক্রি করে এ টাকাটা আমরা তুলে নেব। তবে পেলে আর সেটা করব না। আমরা ফেল করি না। কসম সে।’’ সুদেষ্ণাকে কিছু বলতে না দিয়ে রিঙ্কা ছুটে দরজার বাইরে গিয়ে বলল, ‘‘ভয় নেই মা। আসছি কিছুক্ষণে।’’

সুদেষ্ণার ফোন পেয়ে জয়ন্ত ফিরে এল। রিঙ্কাকে ফোন করতেই বলল, ‘‘আমি ওকে বাবা। প্লিজ় এখন কল কোরো না।’’ জয়ন্ত ওসিকে ফোন করল। সব শুনে উনি অপেক্ষা করতে বললেন। দু’ঘণ্টা যেন দুটো দিন। বাইরে বেল বাজল। রিঙ্কা নয়। অদ্রিজা। চোখ লাল। সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে ধরল। বলল রজত আর দুই বন্ধুকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। এ বার জয়ন্তর ফোন বাজল। পল্লব জানাল, রিঙ্কা ওর সঙ্গে আছে। পনেরো মিনিটের মধ্যে বাড়িতে আসছে।

পল্লব ঢুকেই সুদেষ্ণাকে বলল, ‘‘সাহসী মায়ের সাহসী মেয়ে।’’ রিঙ্কার মুখে হাসি। পল্লব বলে চলেছে, ‘‘আপনার মেয়ে থানায় এসে জানায়, সে দিনের তিন জন ছেলের মধ্যে এক জনকে ও মাঝে আপনাদের আবাসনে দেখেছে। আপনাদের উপরের ফ্ল্যাটে ছেলেটির আড্ডা। এদের কেউ হ্যাকার। কেউ স্টকার। প্রায় সবাই সাইবার ক্রিমিনাল। আমরা ছেলেটিকে চেজ় করে আপনাদের সিকিয়োরিটির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, এই ছেলেটিই সে দিন রিঙ্কার ফোন ফেরত দিয়েছিল।’’

পাশ থেকে কনস্টেবল দত্ত বলল, ‘‘স্যর, সকলে যদি এমন সাহসী হত, তা হলে পুলিশ ছ-সাত ঘণ্টায় কেস সলভ করতে পারত।’’ সুদেষ্ণা চা আনতে উঠতেই পল্লব বলল ‘‘এখানেই শেষ নয়। আপনাদের মেয়ে ওই ছেলেটার থ্রেট কল ভয়েস রেকর্ড করেছে। সেটা আমাদের খুব কাজে দিল।’’

জয়ন্ত, সুদেষ্ণা রিঙ্কাকে জড়িয়ে ধরল। এগিয়ে এল অদ্রিজা। পল্লব বলল, ‘‘প্রেসকে আটকে রেখেছি। আপনারা চাইলে, শি ক্যান টক।’’ জয়ন্ত বলল, ‘‘তার আর দরকার নেই।’’

রিঙ্কা সুদেষ্ণার দিকে তাকাল। তার পরে বলল, ‘‘চলুন আঙ্কল।

আমি বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Sarkar Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE