বিধ্বস্ত: ফণীর তাণ্ডবের পরে পুরী শহরের দৃশ্য। ছবি: এএফপি
দেখছেন তো সবে থামল। এখন এটুকুই বলতে পারি, মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’’ অফিসের বাইরে চারটে চেয়ার, জেলাশাসককে ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা বসে। একটু দূরে আর এক কর্তা স্যাটেলাইট ফোনে সংযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পুরীর সব মোবাইল, ল্যান্ডফোন সংযোগ বিকল। তার মধ্যেই ফণী-উত্তর পুরীর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় জেলাশাসকের ওই উত্তর।
১৯৯৯-এর সুপার সাইক্লোনের কীর্তি মুছে দিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিজের কীর্তি স্থাপন করেছে ফণী। মানুষের নেওয়া প্রস্তুতি খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে। পাড়ার ক্রিকেট দেখেই যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের যদি লর্ডসের মাঠে খেলা দেখতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাঁদের যেমন অবস্থা হয়, আমি ও আমার দুই সহকর্মী, কুন্তক চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বণিকের ফণী-তাণ্ডবে তেমনই অবস্থা হয়েছিল। কলকাতায় ঝড় দেখে অভ্যস্ত চোখের সামনে হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে ছোট-বড় সমস্ত কিছু। উড়তে-উড়তেই অনেক জিনিস আবার বাতাসে দুই খণ্ড হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি, বড় বড় গাছ, ইট-কাঠ-পাথরের ভগ্ন কাঠামোয় রাস্তা ভর্তি।
আসল ক্ষতিটা বোঝা গেল ঝড় থামার পরে। হোটেলে জানিয়ে দেওয়া হল, জলের ‘র্যাশনিং’ শুরু হয়েছে। কারণ জলের পাইপ ফাটিয়ে দিয়েছে ফণী। দুই বালতি জল। একটা মগ। মগে নিক্তি মেপে জল খরচ। পানীয় জলের রসদও শেষের মুখে। হোটেলের ঘর ভেসে যাচ্ছে জলে-বালিতে। চারদিকে ভাঙা কাচ। দ্বিতীয় অনিশ্চয়তা মোবাইল নেটওয়ার্কের। অফিসে, বাড়িতে সবাই উদ্বিগ্ন, কী ভাবে জানানো যাবে ‘আমরা ঠিক আছি’! কী ভাবেই বা লেখা, ছবি পাঠাব? পুরীর সব মোবাইল টাওয়ার দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে ফণী। সঙ্গী হয়েছে লোডশেডিং। হোটেলে জেনারেটর চলার সময় বাঁধাধরা। ভ্যাপসা গরমে মাঝরাতে খাটে বসে আছি তিন জন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অফিসের ভাড়া করা গাড়ি অচল হয়ে গিয়েছে। সিমেন্টের একটা চাঙড় কোথা থেকে উড়িয়ে নিয়ে গাড়ির উপর এসে ফেলেছে ফণী। উইন্ডস্ক্রিন চৌচির, ভেঙেছে পিছনের কাচও। একটা অটো পাওয়া গেল শেষমেশ, তাতেই কখনও দশ, কখনও চল্লিশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মোবাইল সংযোগের সন্ধানে চষা হল চতুর্দিক। ওই ক’দিন অটোচালক মদনমোহন লেঙ্কাই ছিলেন ভরসা। হোটেলে যেমন ছিলেন স্বরূপ গড়াই নামে এক কর্মী। সকালে বেরিয়ে রাত দশটায় হোটেলে ফিরেছি, তিন জনেই নিশ্চিত যে আজ আর খাবার জুটবে না, সঙ্গে রাখা শুকনো খাবারই খেতে হবে। স্বরূপ কিন্তু যত্ন করে রেখে দিয়েছেন রাতের খাবার। বিপর্যয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানুষেরই সহজাত প্রবৃত্তি, ফণী তা কেড়ে নিতে পারেনি।
ভুবনেশ্বরের ফেরার দিন পুরীর রাস্তায়-রাস্তায় অবরোধ। জলের দাবিতে অবরোধে বসা এক বৃদ্ধাকে বোঝাচ্ছিলেন এক পুলিশকর্তা, ‘‘পুলিশ কোয়ার্টারেও জল নেই। আমাদের অবস্থাও আপনাদের মতোই।’’ অটোতে ভুবনেশ্বর এলাম, সেখান থেকে কলকাতার বিমান ধরব। পিছনে পড়ে রইল ধ্বস্ত পুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy