Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

যৌবনসরসীনীরে

মিস ইউনিভার্স যখন তার নগ্ন শরীরের তপ্ত যৌবনবিভা সুইমিং পুলের উষ্ণতায় মিশিয়ে দেয়, নির্জন পুলের নিরালা কোণে তখন শুধুই ওরা দুজন। আলো-আবছায়ায় ঘাপটি মেরে থাকা দুটো বুড়োকে কী উদাসীন ঔদ্ধত্যে আর উপেক্ষায় স্রেফ ‘নেই’ করে দিয়ে সে উতরোল জলকেলিতে মেতে যায়! ও দিকে ফ্রেড আর মিক— আশি ছুঁই-ছুঁই বয়েসের মিচকেমো, কৌতুক আর কৌতূহল নিয়ে ভরন্ত যৌবনের সেই লীলা দেখে।

শান্তনু চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

মিস ইউনিভার্স যখন তার নগ্ন শরীরের তপ্ত যৌবনবিভা সুইমিং পুলের উষ্ণতায় মিশিয়ে দেয়, নির্জন পুলের নিরালা কোণে তখন শুধুই ওরা দুজন। আলো-আবছায়ায় ঘাপটি মেরে থাকা দুটো বুড়োকে কী উদাসীন ঔদ্ধত্যে আর উপেক্ষায় স্রেফ ‘নেই’ করে দিয়ে সে উতরোল জলকেলিতে মেতে যায়! ও দিকে ফ্রেড আর মিক— আশি ছুঁই-ছুঁই বয়েসের মিচকেমো, কৌতুক আর কৌতূহল নিয়ে ভরন্ত যৌবনের সেই লীলা দেখে। এ ভাবেই সুইস-আল্পসের ওই পাঁচতারা পাহাড়ি স্বাস্থ্যনিবাসের পুলের জলে, লিফ্‌টের অন্দরে, মালিশের বিছানায়, বাগানের বেঞ্চে, লাঞ্চের টেবিলে— শরীর, হৃদয়, ব্যর্থতা, বাসনার কুয়াশা-রোদ্দুরের আশ্চর্য খেলা চলে।

যেমন ডাইনিং হল-এ রোজ দেখা ওই বয়স্ক দম্পতিটি। যারা পাথরের মতো মুখ করে বসে খাওয়া সারে। তারা কোনও দিন কথা বলবে কি না, সেই বাজিতে মিক ফ্রেডের কাছে রোজ গো-হারা হারে। তার পর এক দিন নৈঃশব্দ্য ফাটিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। বুড়ি ঠাটিয়ে বুড়োকে একটা চড় মারে। আর সে দিনই বিকেলে ফ্রেড আর মিকি জঙ্গলের ভেতর গাছের আড়ালে ওদের সঙ্গম করতে দেখে। সাদা চুলের পুরুষটি যৌবনবেলার উদ্যম নিয়ে প্রবল প্রবেশ করতে চায়, আর প্রৌঢ়া নারীর আকাঙ্ক্ষার শীৎকার ক্রমশ গুমরানো কান্নায় ভেঙে যায়। তা হলে কি পৃথিবীর এ ধার-ও ধার থেকে ধনী আর সেলেব্রিটি মানুষেরা এই রিসর্টে তাদের যৌবন ফেরত পেতেই আসে? বা অন্তত তার ইশারাটুকু? তা হলে মারাদোনা এখানে কী করছেন? হ্যাঁ, পিঠে কার্ল মার্ক্স-এর ট্যাটু আঁকা, বেঢপ, বিশালবপু মারাদোনাও এখানে একটি চরিত্র। যিনি সুইমিং পুলে একটু ভেসেই হাঁসফাঁস করেন। বান্ধবী ক্লদিয়ার মতোই, অক্সিজেনের সিলিন্ডারও যাঁর ছায়াসঙ্গী। বিখ্যাত বাঁ-পায়ে টেনিস বলটা বার কয়েক নাচানোর পরেই হ্যা-হ্যা করে হাঁপান। আবার হোটেলের ঘরের একান্তে অন্যমনস্ক তাঁকে ক্লদিয়া যখন জিজ্ঞেস করে ‘কী ভাবছ’, আর তিনি জবাব দেন ‘ভবিষ্যৎ’, তখনও তাঁর স্মৃতি-স্বপ্নের ভিস্যুয়ালে ভাসে তাঁর ময়দানি কিশোরবেলা!

ছবিতে এ ভাবেই নানা চরিত্র ও মুহূর্তের কোলাজ। কয়েকটা জীবনের ক’টা জানলা-দরজা খোলা-বন্ধ করতে করতেই ছবি আবার ফ্রেড-মিকের গল্পে ফেরত আসে। এই সাংগীতিক চলনটা প্রধান চরিত্রগুলোর জীবনভাবনার সঙ্গেও মানিয়ে যায়। কারণ ফ্রেড তো এক জন ভুবনবিখ্যাত সংগীতকার। তার সুর করা ‘সিম্পল সংস’ এখনও ভীষণ জনপ্রিয়। ও দিকে মিক এক সফল পরিচালক, যার সাম্প্রতিক ছবিগুলো খুব চলছে না। অবসর নিলেও ফ্রেডের কান এখনও ঝরনার চলায়, গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টার টুংটাঙে সুর খোঁজে। কিন্তু বাকিংহাম প্রাসাদে প্রিন্স ফিলিপের জন্মদিনের কনসার্টে ‘সিম্পল সংস’ পরিবেশনের আমন্ত্রণ সে ফিরিয়ে দেয়। কারণ ওই গানের সুরের শেষ দিকে উত্তাল-তীব্র সোপ্রানো অংশটা সে তার স্ত্রীর জন্যে বেঁধেছিল। আর ভেনিসের অ্যাসাইলাম-বাসিনী সেই নির্বাক নারী এখন গান থেকে অনেক দূরে!

মিকও তার নতুন ছবির চিত্রনাট্য লিখতেই এই স্বাস্থ্যনিবাসে এসেছে। কিন্তু তার বহু বছরের পুরনো বান্ধবী, তার এগারোটা ছবির নায়িকা ব্রেন্ডা, আচমকাই এসে জানায়— মিকের ফ্লপ ছবিতে সে আর অভিনয় করবে না, সে সিরিয়াল করতে যাচ্ছে। ব্রেন্ডার নেলপালিশ-পরা কুঞ্চিত হাত মিকের বৃদ্ধ গাল এক বার আদরে ছুঁয়ে যায়। আল্পসের উপত্যকায় ব্রেন্ডা-অভিনীত অজস্র নারী মিককে ঘিরে দাঁড়ায়। সে এই বিচ্ছেদ সইতে পারে না। ফ্রেডের চোখের সামনেই ব্যালকনি থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। ছবির শেষ সিকোয়েন্সে আমরা দেখি, ফ্রেড শেষ অবধি রানির আমন্ত্রিত অনুষ্ঠানে নতুন গায়িকাকে নিয়ে ‘সিম্পল সংস’ পরিবেশন করছে। অনুষ্ঠান শেষে, চারপাশের ভিড়, হাততালি পেরিয়ে ফ্রেড মিককে দেখতে পায়। রোদ-ঝলমল সবুজ উপত্যকায় সে স্বপ্নের নতুন ছবির লোকেশন খুঁজছে! সৃষ্টির মধ্যে বেঁচে থাকাই তো যৌবন, তাই না!

sanajkol@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE