Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দৈব-কূপ ঘিরে পর্যটন চায় কোরো

সাড়ে তিন হাত গভীর একটা গর্ত---সবাই বলে ‘চন্দ্রকূপ’। জনশ্রুতি, সেই গর্তে যত জলই ঢালা হোক না কেন, কখনওই সেটি ভরে না। খুব গরমেও পুরো শুকিয়ে যায় না কূপের জল। ছোট্ট ওই জলাধারে দেবতার ‘শক্তি’ লুকিয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন জামতারার কোরো গ্রামের বাসিন্দারা। বহুদিন আগে গ্রামের কর্ণেশ্বর মন্দিরে শুরু হয় চন্দ্রকূপের পুজো। এলাকার মানুষ এখন জানতে চান, কী ভাবে ঘটছে ওই ‘দৈব’ ঘটনা। বিজ্ঞানও কি জড়িয়ে তার সঙ্গে? তা জানতে উৎসুক সকলেই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
করমাটাঁড় শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

সাড়ে তিন হাত গভীর একটা গর্ত---সবাই বলে ‘চন্দ্রকূপ’। জনশ্রুতি, সেই গর্তে যত জলই ঢালা হোক না কেন, কখনওই সেটি ভরে না। খুব গরমেও পুরো শুকিয়ে যায় না কূপের জল।

ছোট্ট ওই জলাধারে দেবতার ‘শক্তি’ লুকিয়ে রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন জামতারার কোরো গ্রামের বাসিন্দারা। বহুদিন আগে গ্রামের কর্ণেশ্বর মন্দিরে শুরু হয় চন্দ্রকূপের পুজো। এলাকার মানুষ এখন জানতে চান, কী ভাবে ঘটছে ওই ‘দৈব’ ঘটনা। বিজ্ঞানও কি জড়িয়ে তার সঙ্গে? তা জানতে উৎসুক সকলেই।

জামতারার করমাটাঁড় থেকে ৭০৮ কিলোমিটার এগোলেই কোরো গ্রাম। বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা বেশি। লোকমুখে শোনা গেল, তন্ত্রমন্ত্রের জন্য এক সময় গ্রামের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল চারপাশে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলত তন্ত্র-সাধনা। ‘কাপালিক-গ্রাম’ বলে পরিচিতি হয় কোরোর। ‘ঐতিহ্য’ আজও চলছে। তবে, জনসমক্ষে নয়। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার নতুন ধারার দিকে এগিয়েছে। তাঁরাই চাইছেন চন্দ্রকূপের ‘রহস্য’ খুঁজে বের করতে। গ্রামে পর্যটনের রসদ দেখতে ভিড় জমুকতাও চাইছেন গ্রামের নবীনরা।

কোরো গ্রামের প্রবীণ কানাইলাল রায় জানান, প্রায় তিন দশক আগে পুরাতত্ত্ব দফতর কূপের রহস্য খুঁজতে এসেছিলেন। কর্ণেশ্বর মন্দিরের আশপাশে খোঁড়াখুঁড়ি হয়। কিন্তু সূত্র মেলেনি। তিনি বলেন, “মন্দিরের শিবলিঙ্গের সঙ্গে চন্দ্রকূপের সংযোগ রয়েছে। শ্রাবণ মাসে হাজার কলসি জল পড়ে শিবলিঙ্গে। কিন্তু কূপ উপ্চে পড়ে না। কখনও পুরো খালিও হয় না। অর্ধেক কূপ জল ভরে থাকে।”

জামতারার বাসিন্দা তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা দেবাশিস মিশ্রের কথায়, “কোরো গ্রামের কাছেই অজয়ের উপরে সিকটিয়া বাঁধ রয়েছে। বনভোজনের আদর্শ জায়গা। একই রাস্তা ধরে যাওয়া যায় দেওঘর, মধুপুরে। পর্যটন কেন্দ্র গড়তে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারকে অনুরোধ করেছেন। এতে তাঁরাও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।”

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, জঙ্গলে গরু হারানোয় সেটি খুঁজতে জামতারার ওই এলাকায় পৌঁছন মহারাজা কর্ণ। মহাদেবের স্বপ্নাদেশে শিবের ওই মন্দির তৈরি করেন। নাম দেন কর্ণেশ্বর মন্দির। পাশেই গড়ে ওঠে কর্ণ গ্রাম। পরবর্তীকালে তার পরিচয় হয় কোরো গ্রাম নামে। পরে কালা পাহাড় মন্দির ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে।

ভৌগোলিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের কাছেই কোরো গ্রাম। সেখানে রয়েছে কোটাল কালী, ধর্মরাজের মন্দির। বুদ্ধ পূর্ণিমায় গ্রামে বসে ধমর্রাজের মেলা। আশপাশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ সামিল হন।

কোরোর কাছেই বিদ্যাসাগরের শেষ জীবনের আশ্রয় করমাটাঁড়। এলাকার মানুষের বক্তব্য, করমাটাঁড় এবং কোরো গ্রাম মিলিয়ে দিলে গড়ে উঠতে পারে জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। আপাতত সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE