শাল, সেগুনের জঙ্গল আর পাথুরে জমির পাকদণ্ডী বেয়ে গাড়িটা বেশ চলছিল। আচমকা, ব্রেক। খানিকটা পিছিয়ে দাঁড়িয়ে গেল গাড়ি। চালকের ইশারায় চোখ চলে গেল রাস্তার ডান দিকে। বুনো হাতির দল মহানন্দে দুপুরের খাওয়াদাওয়া সারছে।
নতুন বছরে চার বন্ধুর বেরিয়ে পড়া পালামৌয়ের পথে। হাওড়া থেকে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে ডালটনগঞ্জে, রাত দেড়টায়। সাহিত্যের ‘কাঁড়িয়া পিরেত মারা শীত’ কাকে বলে, স্টেশনের প্রতীক্ষালয়েও তা টের পাওয়া গেল। ভোরের আলো ফুটতেই গাড়ি হাজির। গন্তব্য, বেতলা ফরেস্ট রেস্ট হাউজ়। খানিক দূর থেকেই শুরু জঙ্গলের রাজত্ব। কুয়াশায় সিক্ত গাছপালার মাথার উপরে তখন সূর্যোদয়। পুবের সেই রাঙা আলো সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে গেলাম বনবাংলোয়। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা, ১৯৭৪-এ তৈরি ভারতবর্ষের প্রথম ন’টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্যতম বেতলা ন্যাশনাল পার্ক করোনা-আবহে বন্ধ! ততক্ষণে বাংলোর ছাদে, বারান্দায় কপিদলের হুটোপাটি শুরু হয়েছে।
এ সব কারণে অবশ্য উদ্যমে ভাটা পড়ল না। পালামৌ দুর্গ আর কমলদহ ঝিল দেখতে বেরোলাম। কয়েক শতাব্দী আগে চেরো বংশীয় রাজা মেদিনী রাইয়ের আমলে তৈরি দুর্গ। দু’কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরও একটি দুর্গ। মেদিনী রাই ১৬৩৪ সালে পুত্র প্রতাপ রাইয়ের জন্য দুর্গটি নির্মাণ করেন। অতীত ছোঁয়া অন্ধকূপের গায়ে বটের জালবিস্তার, আলো-আঁধারি সিঁড়ি পেরিয়ে দুর্গপ্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে অনুভব করলাম ইতিহাসের আলিঙ্গন। ঘণ্টা তিনেক কাটিয়ে জঙ্গুলে গন্ধ গায়ে মেখে কমলদহ ঝিলে... এখানে বন্য প্রাণীরা নাকি নাওয়াখাওয়া করতে আসে।