Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দাড়িহীন যিশুর মাথায় কোঁকড়া চুল

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।কেমন দেখতে ছিল যিশুকে? এখনও পর্যন্ত পাওয়া তাঁর বেশির ভাগ ছবিতেই বড় দাড়ি, কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া একটি কাচের প্লেটের উপর আঁকা ছবিতে দাড়িহীন যিশুকে দেখা গিয়েছে। মাখাভর্তি ছোট ছোট কোঁকড়া চুল। স্পেনে খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের ওই প্লেটটি উদ্ধার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রায় ২২ সেন্টিমিটার ব্যাসের প্লেটটির অনেকগুলি টুকরো ভাঙা অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও টুকরোগুলির প্রায় ৮১ শতাংশ জুড়তে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

• বুলগেরিয়ায় মিলল প্রাচীনতম মুদ্রা

কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে বুলগেরিয়ার ছোট্ট শহর সোজোপল। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দেশের অন্যতম প্রাচীন এই শহরটি বিখ্যাত। খ্রিস্ট জন্মের ছ’শো বছর আগে সোজোপল ছিল এশিয়া মাইনরের পশ্চিম প্রান্তে মিলেটাস রাজ্যের একটি গ্রিক কলোনি। অতি সমৃদ্ধ এই শহরের প্রথম নাম ছিল অ্যানথেইয়া। পরে নাম হয় অ্যাপোলোনিয়া। প্রতিবেশী রাজ্য লিডিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল মিলেটাসের। বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আদানপ্রদান হত মুদ্রারও। এ বার সেই লিডিয়ারই একটি স্বর্ণমুদ্রার খোঁজ মিলল সোজোপলে। প্রায় দু’হাজার সাতশো পঞ্চাশ বছরের পুরনো এই মুদ্রাটি বুলগেরিয়ায় পাওয়া মুদ্রাগুলির মধ্যে প্রাচীনতম। তবে, ছ’শো তিরিশ মিলিগ্রামের মুদ্রাটি সম্পূর্ণ সোনার নয়। সোনা ও রুপোর মিশ্রণে তৈরি সঙ্কর ধাতুর এই মুদ্রাটিকে মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। শখের এক ডুবুরি মুদ্রাটির খোঁজ পান তটের কিছু দূরে কৃষ্ণ সাগরের নীচে। মুদ্রাটি তিনি সোফিয়ার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান দিমিত্রভের হাতে দেন। এর পরেই শুরু হয়ে মুদ্রাটির ইতিহাসের সন্ধান।

• মাখাভর্তি কোঁকড়া চুল এবং দাড়িহীন যিশু খ্রিস্টের দুষ্প্রাপ্য ছবি

কেমন দেখতে ছিল যিশুকে? এখনও পর্যন্ত পাওয়া তাঁর বেশির ভাগ ছবিতেই বড় দাড়ি, কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া একটি কাচের প্লেটের উপর আঁকা ছবিতে দাড়িহীন যিশুকে দেখা গিয়েছে। মাখাভর্তি ছোট ছোট কোঁকড়া চুল। স্পেনে খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের ওই প্লেটটি উদ্ধার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রায় ২২ সেন্টিমিটার ব্যাসের প্লেটটির অনেকগুলি টুকরো ভাঙা অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও টুকরোগুলির প্রায় ৮১ শতাংশ জুড়তে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্লেটটি সম্ভবত খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের কাজে ব্যবহৃত হত। ওই সময়ে দার্শনিকরা টোগা নামের এক ধরনের বিশেষ পোশাক পরতেন। যিশুর ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাঁর পরনে রয়েছে সেই টোগা। এক হাতে ক্রস এবং অন্য হাতটি আশীর্বাদের ভঙ্গিতে রাখা। ছবিতে তাঁর দুই শিষ্যকেও দেখা গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই দু’জন সম্ভবত পিটার এবং পল। এঁদের প্রত্যেকেরই মাথার পিছনে বলয়ের উপস্থিতি বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়।

প্লেটটি আবিষ্কৃত হয়েছে স্পেনের আন্দালুসিয়া অঞ্চলে একটি প্রাচীন অট্টালিকার ভিতরে মাটি খুঁড়ে। প্রত্নতাত্ত্বিক দলটির প্রধান মার্সেলো কাস্ত্রো জানিয়েছেন, বাড়িটি চতুর্থ শতকে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী শতকেই সেটি ভেঙে পড়ে। সেটা ছিল রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের রাজত্বকাল। প্লেটের ছবিতে রোমান এবং বাইজ্যান্টাইন সভ্যতার ছাপ রয়েছে। সেই সময়ের প্রতিটি ছবিতেই যিশুকে মাঝখানে রাখা হত বলে জানিয়েছেন তিনি।

• ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নীচে প্রাচীন জাহাজ

তেরো বছর আগের অভিশপ্ত ৯ সেপ্টেম্বর। জঙ্গিহানায় মাটিতে মিশে গিয়েছিল আমেরিকার গর্বের টুইন টাওয়ার। নিহত হন হাজার তিনেক মানুষ। এর পরে, ধ্বংসস্থলের উপর নতুন করে ট্রেড সেন্টার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। সেই মতো শুরু হয় কাজ। খোঁড়াখুঁড়ির সময়ে পুরনো টুইন টাওয়ারের দক্ষিণে খোঁজ মিলল আদ্যি কালের এক জাহাজ-মাস্তুলের। মাস্তুলটির খোঁজ মেলে পুরনো ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণে মাটির প্রায় বাইশ ফুট নীচে। প্রথম বার ট্রেড সেন্টার তৈরির সময়ে এটি নজরে আসেনি।

কোথা থেকে এল এই মাস্তুল?

বছর চারেক আগে খোঁজ পাওয়া সেই মাস্তুলের রহস্য ভেদ হয়েছে সম্প্রতি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জাহাজটি প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। তার ইতিহাস জানতে মাস্তুলের কাঠের পরীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায়, যে ওক গাছের কাঠ দিয়ে মাস্তুলটি তৈরি, সেই ধরনের গাছ স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ফিলাডেলফিয়াতে পাওয়া যেত। তাঁদের মতে, তৈরির ২০-৩০ বছর পর ইচ্ছাকৃত ভাবেই সম্ভবত নষ্ট করে ফেলা হয় জাহাজটি। এর পর শহরের পরিধি বাড়াতে হাডসন নদীর পাড় ভরাটের সময়ে অন্য অনেক জিনিসের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় ভাঙা জাহাজটিও। প্রধানত ব্যবসার উদ্দেশ্যেই জাহাজটি ব্যবহার করা হত বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেটিকে সংরক্ষণ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেসন কনওয়াল।

ঐতিহ্য

• প্রকাশ্যে এল টাইটানিকের মেনুকার্ড

১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল দুপুরে আরএমএস টাইটানিকের যাত্রী ছিলেন এলিস লরেট। বিলাসবহুল ওই জাহাজে সফররত স্পেনসার দম্পতির পরিচারিকাদের দলে ছিলেন তিনি। সে দিন জাহাজের প্রথম শ্রেণির মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশিত হয়েছিল মাটন চপ, টাপিওকা পুডিং-সহ ৪০টিরও বেশি পদ। ভোজের সেই মেনুকার্ড তিনি রেখে দিয়েছিলেন তাঁর কোটের পকেটে। কে জানত, এর দিন কয়েক পরেই হিমশৈলের আঘাতে আচমকাই ডুবে যাবে টাইটানিক? তবে আশ্চর্যজনক ভাবে কয়েক জন ভাগ্যবানের সঙ্গে বেঁচে ফিরেছিলেন এলিস। শুধু কি তাই! একশো বছর আগে আগে কে ভেবেছিল, সে দিনের সেই মেনুকার্ড এই সময়ে এসে ৬০ হাজার পাউন্ডে বিকোবে!

গত মাসের ১৮ অক্টোবর গ্রেট ব্রিটেনের ডেভিজেস-এর ‘অলড্রিজ অ্যান্ড সন’-এ নিলাম হল ওই মেনুকার্ড-সহ অন্য কিছু স্মারক। টাইটানিকের দুর্ঘটনার পরে আরও এক বছর বেঁচেছিলেন এলিস। মৃত্যুর আগে ষাট বছরের এলিস তাঁর পরিবারের কাছে মেনুকার্ডটি গচ্ছিত রেখে যান। তাঁর পরিবারের তরফেই কার্ডটি নিলামে তোলা হয়েছে।

• ইন্টারনেটে ত্রিমাত্রিক সংগ্রহালয়

বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা হেরিটেজ সাইটগুলি এক জায়গায় এসে জড়ো হলে কেমন হয়? এক লহমায় দেখা হয়ে যেত কত অজানা শহর, স্মৃতিসৌধ বা ইতিহাস-বিখ্যাত মূর্তি। কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণে এ বার ঘরে বসেই পৌঁছনো যাবে রোমের পম্পেই হয়ে দিল্লির আম খাস বাগে! মাউসের এক ক্লিকেই তা সম্ভব করতে মাইক্রোসফটের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আমেরিকার একটি সংস্থা সাইআর্ক। ইন্টারনেটে যৌথ ভাবে একটি ডিজিট্যাল আর্কাইভ তৈরি করছে এই দুই সংস্থা। উদ্দেশ্য, সারা বিশ্বের বিখ্যাত হেরিটেজ সাইটগুলিকে এক পোর্টালের ছাতার তলায় আনা। এ জন্য প্রতিটি সাইটের হুবহু ত্রিমাত্রিক (ত্রি-ডি) মডেল তৈরি করবে তারা।

কিন্তু, হঠাত্ এ ধরনের পোর্টাল কেন?

সাইআর্কের তরফে জানানো হয়েছে, মূলত যুদ্ধ, জঙ্গি নাশকতা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে এই সমস্ত ঐতিহাসিক সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের পোর্টাল তৈরির ভাবনা চিন্তা শুরু হয়। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ লি বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নিখুঁত ভাবে রেকর্ডবন্দি করতে ত্রি-ডি মডেলকে কাজে লাগানো যেতে পারে।” এ কাজে স্থানীয়দের সাহায্যও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডিজিটাল আর্কাইভ তথা পোর্টালের কাজ সম্পূর্ণ হতে বছর পাঁচেক সময় লাগবে। তবে প্রাথমিক ভাবে আমেরিকার মাউন্ট রাশমোর ন্যাশনাল মেমোরিয়াল, মেক্সিকোর চিচেন ইতজা, রোমের প্রাচীন শহর পম্পেই, এ দেশের আম খাস বাগ-সহ বেশ কয়েকটি সাইটের থ্রি-ডি মডেল তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ কাজে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে নোকিয়ার মতো সংস্থাও। ‘জিপিএস সেন্সর’ থেকে শুরু করে ‘ট্রু টেকনোলজি ম্যাপিং সিস্টেম’-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোটা বিষয়টিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করা হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।

• ফের দর্শকের সামনে পিকাসো-র শিল্পসৃষ্টি

পাঁচ বছর পর গত অক্টোবরে ফের পিকাসো সংগ্রহালয়ের দরজা খুলল! এই উপলক্ষে গত ২৫ অক্টোবর সংগ্রহালয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। প্যারিসের ওই সংগ্রহালয়টি এত দিন সংস্কার-কাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।

তবে সংস্কার প্রকল্পটিকে কেন্দ্র করে গত পাঁচ বছরে বিতর্ক কিছু কম হয়নি। সময়সীমা থেকে শুরু করে বাজেট বহির্ভূত ব্যয় অথবা প্রশাসনের সঙ্গে পিকাসো-পুত্রের মনোমালিন্য— সবই হয়েছে। প্রায় ৬৬ মি‌লিয়ন মার্কিন ডলারের এই অত্যাধুনিক প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল দু’বছরের মধ্যে। কিন্তু শেষমেশ তা গড়ায় পাঁচ বছরে। ফলে খরচ হয় আরও বেড়ে যায়। এই বিতর্কের আবহে বরখাস্ত হন সংগ্রহালয়ের ডিরেক্টর। এরই মধ্যে পিকাসোর ছেলে ক্লদের সঙ্গে ফরাসি সরকারের সম্পর্কে তিক্ততা আসে। তবে সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে ফ্রান্স তথা বিশ্বের শিল্পরসিকদের সামনে খুলল পিকাসোর এই শিল্পভাণ্ডার।

উত্তর আধুনিক শিল্পের জনক পাবলো পিকাসো আদতে স্পেনের হলেও তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল ফ্রান্সে। ফলে ১৯৭৩ সালে মৃত্যুর সময়ে তাঁর অধিকাংশ শিল্পসৃষ্টি রয়ে গিয়েছিল সেখানেই। ১৯৮৫-তে প্যারিসের এক অভিজাত পাড়ায় সপ্তদশ শতকের একটি ম্যানসনে শুরু হয় এই সংগ্রহালয়। প্রাথমিক ভাবে পিকাসোর পাঁচ হাজার চিত্রকলা, ভাস্কর্য, অঙ্কন, স্থিরচিত্র-সহ সেরামিকের কাজ এবং দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে সংগ্রহালয়ের প্রদর্শনী শুরু হয়। সংগ্রহালয়ে পিকাসোর শিল্পকৃতি দান করেছেন শিল্পীর স্ত্রী জ্যাকেলিন-সহ পরিবারের অন্যরাও।

পিকাসো সংগ্রহালয়ের নতুন ডিরেক্টর লরাঁ লা বোঁ জা‌নিয়েছেন, সংস্কারের পর আগের তুলনায় সংগ্রহালয়ের আয়তন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে ৪১ হাজার বর্গফুটের প্রদর্শনস্থলে আরও শিল্পসামগ্রী রাখা যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এর ফলে শিল্পরসিকেরা এথানে সাবলীল ভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন, ঠিক যে স্বাধীনতার ছোঁয়া পাওয়া যায় পিকাসোর সৃষ্টিতে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

• গাছের রোগ সারাবে রসুন

রসুনের ভেষজ উপকারিতার কথা কম বেশি সবারই জানা। কোলেস্টেরল, উচ্চরক্তচাপ, প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি আরও নানাবিধ গুণ রয়েছে এর। তবে এ সবই মানুষের রোগ বিষয়ক। গাছেদের নানা রোগ সারাতে এ বার রসুনকে ব্যবহার করার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। আশ্চর্যজনক ভাবে সফলও হয়েছেন ব্রিটেনের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী। উদ্ভিদবিজ্ঞানী জোনাথন ককিং জানিয়েছেন, এত দিন মানুষের বিবিধ রোগ ও তার নিরাময়ের উপায় বাতলে এসেছে উদ্ভিদেরা। এ বার তাদের নিয়ে ভাববার পালা।

রসুনের মাধ্যমে উদ্ভিদের কী ধরনের রোগ নিরাময় সম্ভব তা এখনও গবেষণাধীন। তবে সম্প্রতি যে রোগ নিয়ে বিজ্ঞানীরা মাথা ঘামাচ্ছেন তা হল, গাছের কাণ্ডের ছত্রাকজনিত রোগ ‘ব্লিডিং ক্যাঙ্কারস’। সংক্রমণজনিত এই রোগটি প্রথমে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বেশ কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছিল। ১৯৭০ সালে প্রথম এই রোগের সঙ্গে পরিচয় হয় উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের। এর পরে আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে উদ্ভিদের ভিতর এই রোগের জীবানু মেলে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই সংক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।

কী এই ‘ব্লিডিং ক্যাঙ্কারস’?

অনুজীব ফাইটোপথেরার সংক্রমণে গাছের কাণ্ডের চার পাশে এক রকম গভীর ক্ষত তৈরি হয়। ক্রমশ এই ক্ষত ছড়িয়ে পড়তে থাকে গাছের শাখাপ্রশাখার মধ্যে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন গাছের গা থেকে রক্ত ঝরছে। সাধারণত ‘হর্স চেস্টনাট’ নামক গাছে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কাণ্ডের বেড় ১০ সেন্টিমিটার বা তার কম হলে এই সংক্রমণ অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই দেখা যায় চারা গাছেরা সবচেয়ে বেশি এই জীবাণু সংক্রমণের শিকার। তবে শুধু চারা গাছ নয় সংক্রমণযোগ্য কোনও গাছ যদি আশেপাশে থাকে তা হলে ৩-৫ বছরের মধ্যে পুরো এলাকার সব গাছই এই সংক্রমণে শুকিয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি ইংল্যান্ড, আমেরিকার গণ্ডি পেরিয়ে নাইজিরিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও জার্মানিতেও হানা দিয়েছে এই দুরারোগ্য ব্যাধি।
তবে রসুন আছে যখন চিন্তা কি! এমনটাই মত বিজ্ঞানী জোনাথনের। রসুনের প্রধান জৈব উপাদান অ্যালিসিন। কী ভাবে কাজ করে এই অ্যালিসিন? দীর্ঘ দিনের মা-ঠাকুমাদের ঘরোয়া টোটকা এ বার বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের হাতে। পদ্ধতি সেই একই তবে প্রয়োগ ভিন্ন। রসুনের কোয়া বেটে তৈরি রস বিজ্ঞানীরা বিশেষ ‘অক্টোপাস টিউব’-এর মধ্যে দিয়ে কাণ্ডের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। রসুন কাটলে রসুনের মধ্যস্থ অ্যামাইনো অ্যাসিড অ্যালেইনকে উৎসেচক অ্যালিনেজ অ্যালিসিনে পরিবর্তিত করে। তবে অ্যালিসিন খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না। খুব দ্রুত সালফার যৌগ ডাইঅ্যালিল ডাইসালফাইডে পরিবর্তিত হয় যা ছত্রাক ও ব্যাকটিরিয়া দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জোনাথন জানিয়েছেন, গত চার বছরে ৬০টি চেস্টনাট গাছ এই টোটকায় নতুন জীবন পেয়েছে, শুধু তাই নয় গোটা দেশে ৩৫০টি পৃথক প্রজাতির গাছের উপরেও এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত সাফল্যের হার প্রায় ৯৫ শতাংশ।

• মাছেদের জন্য হাসপাতাল

আহা! মাছ বলে কি তাদের রোগ-ব্যাধি হয় না ? মাছেদের রোগভোগ দূর করতে এ বার ভারতেও হাসপাতাল খোলার কথা ভাবছেন মত্স্য বিজ্ঞানীরা। বিদেশে এ রকম কয়েকটি হাসপাতাল আছে। কেরলের কোচিতে হাসপাতাল তৈরির পরিকাঠামোগত কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আইসিইউ, সিসিইউ-সহ সব জরুরি বিভাগই থাকবে এই হাসপাতালে। তবে বেড নয়, রোগীদের জন্য এখানে থাকছে অ্যাকোয়ারিয়াম— এমনটাই জানালেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মত্স্য বিশ্ববদ্যালয়ের শীর্ষ মাইক্রোবায়োলজিস্ট টি জে আব্রাহাম। তাঁর কথায়, ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে প্রায় ৬০-৬৫ রকম রোগ দেখা যায়। এ জন্য প্রতি বছরই মাছের উত্পাদন অস্বাভাবিক রকম কমে যায়। জলাশয়ে একটি মাছ আক্রান্ত হলে সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্য মাছেদের মধ্যেও। কখনও বা সংক্রামিত মাছটিকে জলাশয় থেকে সরিয়ে দিলেও রোগের জীবাণু জলে মিশে অন্য মাছেদের মধ্যেও রোগ ছড়ায়। সমীক্ষা বলে প্রতি বছর ১০-২০ শতাংশ মাছ নানা রোগ-সংক্রমণে মারা যায়।

কী রকম হবে এই হাসপাতাল?

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অত্যাধুনিক এই হাসপাতালে থাকছে উন্নতমানের চিকিত্সা ব্যবস্থা। রোগীদের থাকার জন্য অ্যাকোয়ারিয়াম, বড় বড় জলের ট্যাঙ্ক ছাড়াও থাকবে রোগ নির্ণয়ের জন্য উন্নতমানের প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি। মাছেদের যে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা, রঙের পরিবর্তন বা কোনও জলাশয়ে মাছের মড়ক দেখা দিলে তত্ক্ষণাত্ এই হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে বলে জানালেন তিনি। সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত মাছ বা প্রয়োজনে জলের নমুনা এনে চিকিত্সার কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে। শুধু চিকিত্সাই নয় মাছের ফলন বাড়াতে মাছ চাষিদের জরুরি পরামর্শ এবং ওষুধও দেওয়া হবে।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় এই রকম একটি হাসপাতালে মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছে জর্জ নামে এক গোল্ড ফিশের। তাঁর মালিক থাকেন মেলবোর্নে। অস্ত্রোপচারকারী চিকিত্সক ত্রিস্টান রিচের কথায়: “জর্জের মাথায় একটি বড় টিউমার হয়েছিল। খুব কষ্ট পাচ্ছিল সে। ঠিক করে খেতেও পারছিল না। ৪৫ মিনিটের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের পর এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ। জর্জের বয়স এখন ১০ বছর, অস্ত্রোপচারের পর আরও ২০ বছর বাঁচবে সে।”

• বাঁদর বিলাল টাকা

গত ফেব্রুয়ারি মাসেই কয়েকশো সিমলাবাসীর উপর পুষ্পবৃষ্টির মতো নোট-বৃষ্টি করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে একটি বাঁদর। টিনের চালের মাথায় গুরুগম্ভীর মুখে বসে তাড়া তাড়া নোট বিলিয়েছে সে। আর সেই টাকা কুড়োতে হামলে পড়েছে আম জনতা। আর সে দৃশ্য দেখে কার্যতই অবাক পর্যটক থেকে পুলিশ। আট থেকে আশি কে নেই সেই ভিড়ে। জটায়ুর ভাষায় বলতে গেলে— সিমলায় শিহরণ!

প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, সেটা ছিল রবিবারের সকাল। চার দিকে ফুরফুরে হাওয়া, হাল্কা রোদ। হঠাত্ই আশপাশের কয়েকটা বাড়ির ছাদ থেকে বেশ দুড়দাড় শব্দ পাওয়া গেল। সঙ্গে পরিচিত ‘হুপ-হাপ’। এমনিতেই সিমলা বাঁদরের উত্পাতের জন্য বিখ্যাত। ‘কুখ্যাত বললেও কোনও ভুল হবে না।’ জানালেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। বাঁদরদের দাপাদাপি করতে দেখে তাই কেউই বিশেষ পাত্তা দিচ্ছিলেন না। হঠাত্ই একটি বাড়ির টিনের চালে উঠে একটু রাশভারী গোছের এক বাঁদর এক তাড়া নোটের বান্ডিল নিয়ে গম্ভীর মুখে গুনতে শুরু করে। দেখতে দেখতে মোটামুটি ভিড় জমে যায়। আচমকাই পথ চলতি মানুষদের অবাক করে বান্ডিল থেকে নোট খুলে ছুঁড়তে শুরু করে দেয় সে। তত ক্ষণে সেই টাকা কুড়োতে রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।

ব্যাপারটী কী?

জানা গেল কাছেরই একটি বাড়িতে চুরি করে পেট পুজো করতে ঢুকেছিলেন কপিবর। কিন্তু খাবার না পেয়ে দশ হাজার টাকার একটি কড়কড়ে নোটের বান্ডিলই হাতিয়ে নেয় সে। টাকা বিলির পরে লেজ দুলিয়ে বেশ দুলকি চালে পাশের পাইন জঙ্গলে ঢুকে যায়। আরও টাকা পাওয়ার আশায় তার পিছু নেয় জনতা! কিন্তু তত ক্ষণে একটা উঁচু পাইন গাছের ডালে বসে সে ড্যাবডেবে চোখে ফাঁকা হাত দেখাচ্ছে সবাইকে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক পর্যটক জানিয়েছেন, সিমলায় নাকি এই ঘটনা আগেও এক বার ঘটেছে। এই সময়ে সিমলায় প্রায় ৩ লক্ষ বাঁদর বহাল তবিয়তে বাস করছে। তাদের বাঁদরামো সামলাতে রীতিমতো নাকাল প্রশাসন। এলাকার প্রৌঢ় এক বাসিন্দা কপিবরের মহিমায় সকাল সকাল কিছু প্রাপ্তিযোগের পর বলছেন, “আহা! দুষ্টু বাঁদরদের পাশাপাশি দু’একটা ভাল বাঁদরও তো থাকতে পারে না কি?”

পর্যটন কেন্দ্র

• আরব সাগরের কোলে ভারকালা

তিরুঅনন্তপুরম জেলার পুরশহর ভারকালা কেরলের অন্যতম একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তিরুঅনন্তপুরম থেকে এর দূরত্ব ৫১ কিলোমিটার এবং কোল্লাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার।

কেরলের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত ভারকালা। এত পরিচ্ছন্ন সাগরবেলা, সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ি টিলায় সাজানো সৈকত নিয়ে দক্ষিণের ভারকালা এক অসাধারণ সুন্দর জায়গা। দক্ষিণ কেরলের আরব সাগরের তীরে একমাত্র এই ধনুকাকৃতি সৈকতের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে লাল পাথরের টিলা। সৈকতজুড়ে নারকেল গাছের সারি নজর কাড়ে।

ভারকালার দু’টি সৈকত— পাপনাশম বিচ এবং ব্ল্যাক বিচ। স্থানীয়দের বিশ্বাস পাপনাশম বিচে স্নান করলে পাপ নাশ হয়। সাঁতার আর রৌদ্রস্নানের জন্য অসাধারণ সৈকত এটি। সন্ধেবেলায় ভারকালার রূপ মুগ্ধ করার মতো। সৈকত বরাবর রয়েছে অসংখ্য হোটেল, রিসর্ট। ভারকালা থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে পাপনাশম বিচের কাছে ভারকালা প্রস্রবণ। পাপনাশম বিচ ঘেঁষেই মাউন্টেন ক্লিফ। ভারকালার আরও এক আকর্ষণ হিন্দু তির্থ প্রাচীন জনার্দন স্বামীর মন্দির। ব্ল্যাক বিচটি অপেক্ষাকৃত ছোট আর নিরালা। এখানের সৈকতের বিশেষত্ব— বালিতে খনিজ পদার্থ বেশি থাকার জন্য এর রং কালচে দেখায়।

শিবগিরি পাহাড়ের উপর ১৯০৪ সালে নির্মিত শিবগিরি মঠ। এখানেই সমাধিস্থ রয়েছেন শ্রী নারায়ণ গুরু। এ ছাড়া আছে অবশ্য দর্শনীয় ১৩ কিমি দূরের ব্যাক ওয়াটার পারাভুর লেক। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ।

• ঐতিহাসিক জিয়ান

চিনের শানসি প্রদেশের রাজধানী জিয়ান। উত্তর-পশ্চিম চিনে গুয়ানঝং সমভূমিতে অবস্থিত জিয়ানকে চিনের সভ্যতা আর সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি বলা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকে খ্রিস্টাব্দ ১০০০ হাজার সাল পর্যন্ত জিয়ানই ছিল চিনের রাজধানী। জিয়ানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে চিনের রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ও সমাজ-সংস্কৃতি। ঐতিহাসিক সিল্ক রুটের শুরু হয় এই জিয়ান থেকেই। বর্তমানেও চিনের অন্যতম প্রধান শিল্প, বাণিজ্য কেন্দ্র এটি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণার জন্যও জিয়ান বিশ্ববিখ্যাত। তবে পর্যটকদের কাছে জিয়ানের প্রধান আকর্ষণ তার প্রাচীনত্ব। জিয়ানের প্রধান দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে রয়েছে—

• সম্রাট কিং শি হুয়ানের সমাধি—সবুজে ঘেরা ৪৩ মিটার উঁচু ও ১ লাখ ৭০ হাজার মিটার পরিধির সমাধি স্থলটি একটি টিলার উপর অবস্থিত। সমাধি স্থালটি ঘিরে রয়েছে দু’টি দেওয়াল। আর এই দেওয়ালের চারপাশে রয়েছে দরজা। সমাধিক্ষেত্রটি এতই পরিচ্ছ্ন্ন যে দেখলে মনে হবে না এটি তিন হাজার বছরের পুরনো!
• দ্য টেরাকোটা আর্মি— সম্রাট কিং শি হুয়ানের সৈন্যদলের মাটির মূর্তি সংরক্ষিত করে রাখা আছে এখানে। ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো এটিকে হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তিন হাজার বছর আগে চিনের প্রথম সম্রাট কিং শি হুয়ান নিজের জীবদ্দশাতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। নিজের সমাধিভূমির নিরাপত্তার জন্য টেরাকোটার সৈন্যবাহিনী নির্মাণ করেন তিনি। পর পর চারটি আয়তাকার প্রকোষ্ঠে সাজানো রয়েছে আট হাজার যোদ্ধার মূর্তি। পোশাক ও অস্ত্রের বিভিন্নতায় তাঁদের পদমর্যাদা বোঝানো হয়েছে।
• ঐতিহাসিক প্রাচীর— জিয়ানের অন্যতম দ্রষ্টব্য এই ঐতিহাসিক প্রাচীর। আকারে ছোট হলেও প্রাচীনত্বের দিক থেকে বেজিংয়ের গ্রেট ওয়াল অফ চায়নার থেকে পুরনো। চতুর্দশ শতকে মিং রাজ বংশের রাজত্বকালে নগর রক্ষার জন্য এটি নির্মিত হয়।
• স্মল গুজ প্যাগোডা— ঐতিহাসিক প্রাচীরের খুব কাছেই ৪৩ মিটার উঁচু পনেরো তলা বিশিষ্ট প্যাগোডাটি তৈরি হয়েছিল টাং রাজ বংশের রাজত্বকালে। ভূমিকম্পে মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এটি পুনর্নির্মিত হয়।
• বিগ গুজ প্যাগোডা— পাঁচ তলা এই প্যাগোডার সঙ্গে বিখ্যাত পর্যটক হিউয়েন সাংয়ের নাম জড়িত আছে। ৬৫২ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত ৬৫ মিটার উঁচু এই প্যাগোডায় ভারত ভ্রমণ শেষে হিউয়েন সাংয়ের আনা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ মর্যাদাপূর্ণ ভাবে রক্ষিত আছে। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে এটি পুনর্নির্মিত হয়। এই প্যাগোডার পাশেই রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম মিউজিক্যাল ফোয়ারা।
• বেল টাওয়ার-ড্রাম টাওয়ার— জিয়ান শহরের ঠিক মাঝ খানে অবস্থিত ৪০ মিটার উঁচু বেল টাওয়ার। ১৩৮৪ সালে মিঙ রাজাদের রাজত্বকালে নির্মাণ করা হয় জিয়ান শহরের প্রতীক এই বেল টাওয়ারটি। এটি একটি সুদৃশ্য ত্রিস্তর বিশিষ্ট ইট ও কাঠ নির্মিত স্তম্ভ। ভিতরে আছে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি বিরাট বেল। বেল টাওয়ারের খুব কাছেই আছে ড্রাম টাওয়ার। এটির ভিতরে আছে একটি বিরাট ড্রাম।
এ ছাড়া জিয়ানে আছে প্রাচীন ও বিখ্যাত ফামেন সি মন্দির। যেখানে গৌতম বুদ্ধের আঙুলের হাড় রাখা আছে। সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে যা অতি পবিত্র।

• কপিল মুনির মেলা

রাজস্থানের অন্যতম বড় মেলা কপিল মুনির মেলা। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে কার্তিক পূর্ণিমায় বিকানরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের কোলায়াত-এ এই মেলা বসে। মেলা চলে এক দিনই। কপিল মুনির নামানুসারে কোলায়াত-কে ‘কপিলায়তন’ বলেও ডাকা হয়। এখানে একটি বড় হ্রদ আছে। হ্রদকে ঘিরে রয়েছে মোট ৫২টি ঘাট। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘাট শুধুমাত্র মহিলাদের পুণ্যস্নানের জন্য সংরক্ষিত। প্রত্যেকটি ঘাটে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট মন্দির। এর মধ্যে একটি ঘাটে রয়েছে কপিল মুনির মন্দির। মেলার দিন পুণ্যার্থীরা কোলায়াত হ্রদে প্রদীপ ভাসান। এই রীতি ‘দীপমালিকা’ নামে পরিচিত। কপিল মুনির স্মরণে গান-বাজনা চলে সারা দিন। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, কার্তির পুর্ণিমার দিন কোলায়ত হ্রদে পুণ্যস্নান এবং কপিল মুনির আশ্রমে পুজোদান দশ বছরে দেশের সব পুণ্যস্থানে ঘুরে আসার সমান। শুধু কার্তিক পুর্ণিমার দিনই নয়, বছরভর পুণ্যার্থীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে কার্তিক পুর্ণিমায় কোলায়ত হ্রদে পুণ্যস্নানের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকেন হাজার হাজার মানুষ। হ্রদকে ঘিরে মেলা বসে সে দিন। কপিল মুনির মেলার পাশাপাশি পশু মেলাও হয় এখানে।

• ওয়াঙ্গালা উত্সব

মেঘালয়, অসম ও বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গারো উপজাতির অন্যতম প্রধান উত্সব ওয়াঙ্গালা। নতুন ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এই উত্সব পালন করেন তাঁরা। এই উত্সব ‘হানড্রেড ড্রামস, ওয়ান্না এবং ওয়ান্না রংচুয়া’ নামেও পরিচিত। প্রতি বছর যাতে ভাল ফসল ঘরে ওঠে সে কারণেই গারোরা সূর্যদেবতাকে উত্সর্গ করেই এই উত্সবের আয়োজন করে থাকেন। সূর্যদেবতাকে তাঁরা ‘মিসি সালজং’ রূপে পুজো করে থাকেন।

১৯৭৬-এর ডিসেম্বরে ওয়াঙ্গালা উত্সবের সূচনা হয় পশ্চিম গারো জেলার তুরা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আসানাং গ্রামে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে প্রথম পালিত হয় ১৯৭৮ সালে। প্রথম দিকে দু’তিন দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই উত্সব পালন করা হয়। প্রথম দিনে উত্সব পালন করেন উপজাতি প্রধান। স্থানীয় ভাষায় যাঁকে ‘নকমা’ বলে। প্রথম দিন ‘রুগালা’ ও ‘সাসাত সোয়া’ পালিত হয় এবং শেষ দিনের উত্সবের নাম ‘দামা গোগাতা’।

গারো জনজাতি সাধারণত কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে। নতুন ফসল সূর্যদেবতাকে উত্সর্গ করার পরই সেগুলো ব্যবহার করেন তাঁরা। দেবতাকে উত্সর্গ করার দিনকেই তাঁরা উত্সব রূপে পালন করে থাকেন। সারা বছর হাড় খাটুনি শেষে এই উত্সবই তাঁদের কাছে চিত্তবিনোদনের সময়। কাট্টা ডোকা, আজিয়া, দানি ডোকা, চাম্বিল মেসা এবং পমেলো— এ রকম ভিন্ন ধরনের নাচে মেতে ওঠেন আবাল-বৃদ্ধবনিতা।

• বটেশ্বরের পশুমেলা

যমুনার তীরে আগরা ও এটাওয়ার মধ্যবর্তী একটি গ্রাম বটেশ্বর। উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামটি হিন্দু ও জৈন সম্প্রদায়ের পুণ্যভূমি হিসাবেই পরিচিত। যমুনার অর্ধ চন্দ্রাকার বাঁকের পাড় বরাবর রয়েছে ১০৭টি শিব মন্দির। রাজা বদন সিংহ এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করান।

শিবের আরেক নাম বটেশ্বর। তাঁর নামানুসারে উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামের নামকরণ হয়েছে বটেশ্বর। প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, শিব এখানেই একটি বট গাছের নীচে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সেই গাছটি আজও রয়েছে। মহাভারত থেকে জানা যায়, বটেশ্বর গ্রাম তখন শৌরিপুর নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলে সে সময় শূরশ্রেণি রাজাদের শাসনকাল ছিল। জৈন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে ২২তম তীর্থঙ্কর নেমিনাথ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

হিন্দু ও জৈন ধর্মের এই পীঠস্থানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অক্টোবর ও নভেম্বরে পশুমেলার আয়োজন করা হয়। বিহারের শোনপুরের পরই এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পশুমেলা। শুধু তাই নয়, দেশের সবচেয়ে পুরনো মেলা এটি। এই মেলার বাণিজ্যিক গুরুত্বও অনেক। ১৮৪০ সাল থেকে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই মেলা হয়।

পরিষেবা

• কোচি মেট্রো প্রসারিত করার পরিকল্পনা

ত্রিপুনিথুরা পর্যন্ত কোচি মেট্রো প্রসারিত করার পরিকল্পনা ছিল আগেই। কিন্তু ১১ কিলোমিটারের লম্বা এই প্রস্তাবিত সম্প্রসারণ, জটিলতার কারণে সম্ভব হয়ে উঠছিল না বলে জানিয়েছে কোচি মেট্রো রেল লিমিটেড-এর আধিকারিকরা। তাঁরা বলেন প্রথম পর্যায়ে এই সম্প্রসারণের কাজ শুরু হবে শীঘ্র। অন্য দিকে, জওহরলাল নেহরু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, কালুর থেকে কাক্কানাদ হয়ে ইনফোপার্ক যাওয়ার জন্য সম্প্রসারণের কাজও খুব শীঘ্র শুরু হবে। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ত্রিপুনিথুরা পর্যন্ত কোচি মেট্রোকে সম্প্রসারের কাজ আর হবে না? এর জবাবে কোচি মেট্রো জানিয়েছে যে, সম্প্রসারণ দু’দিকেই হবে একসঙ্গে। মেট্রো রেল গড়ার কাজ শুরু করার আগে ওই জায়গার রাস্তা চওড়া করা জরুরি। দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে তারা জানান, রাস্তা চওড়া করার জন্য যে জমি দরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই জমি জটে কাজ আটকে রয়েছে। মেট্রো রেল সংস্থা রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন যে রাস্তা চওড়া করার জন্যে ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ৮০ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করে। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকার যদি ২০১৫-এর এপ্রিল মাসের মধ্যে তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে কাজ শুরু হবে।

• নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডা যোগ করবে দিল্লি মেট্রো

যাত্রীদের সুবিধার্থে নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডাকে জুরতে চলেছে দিল্লি মেট্রো। ৬০ কিলোমিটার লম্বা এই মেট্রো করিডর নয়ডা সিটি সেন্টারকে সংযোগ করবে গ্রেটার নয়ডা পারি চক হয়ে বোদাকিকে। তারপর আরও ৩০ কিলোমিটার সম্প্রসারন করা হবে এই করিডরকে যা বোদাকি থেকে পশ্চিম গ্রেটার নয়ডা হয়ে আবার নয়ডা সিটি সেন্টারে ফিরবে। মোট ২২টি স্টেশন থাকবে এই করিডরে। তার মধ্যে মুল যেই সমস্ত জায়গায় স্টেশন গড়া হবে সেগুলি হল নয়ডার সেক্টর ৫০, সেক্টর ১৪৩, সেক্টর ১৪৪ ও গ্রেটার নয়ডার পারি চক। আশা করা হচ্ছে আগামি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এই মেট্রো রেলের কাজ শুরু করা হবে। দিল্লি মেট্রো রেলের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে ভবিষ্যতে নয়ডা মেট্রো রেলকে যুক্ত করা হবে রাজধানী শহরের মেট্রোর সঙ্গে। তাদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে পরিকল্পনা অনুযায়ী যদিও দিল্লি মেট্রোই এই নতুন মেট্রো গড়ার দায়িত্বে আছে, পরবর্তীকালে আলাদা একটি সংগঠন গড়া হবে, নয়ডা মেট্রো রেল, যারা এই নতুন মেট্রো রেলের দায়িত্বে থাকবে। আনুমানিক দশ হাজার কোটি টাকা বাজেটের এই মেট্রো রেল গড়তে সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ বছর।

• মুম্বই-আমদাবাদ হাই স্পিড রেল করিডর

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মুম্বই থেকে আমদাবাদ পর্যন্ত রেললাইন উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিম রেল। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে যে, এই কাজ শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। ২০১৬-র মধ্যে নতুন লাইন পাতার কাজ সম্পুর্ণ হয়ে যাবে বলে তাদের আশা। উন্নত মানের লাইন পাতা হলে এই করিডর দিয়ে হাই-স্পিড ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। বর্তমানে যে সমস্ত ট্রেন এই পথে চলে তার গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের নীচে। নতুন লাইন পাতা হয়ে গেলে এই করিডর দিয়ে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চালানো সম্ভব হবে। দুরন্ত বা শতাব্দিতে যারা সফর করেন তাদের এই পথ অতিক্রম করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় কম লাগবে। দিল্লি-আগ্রা রুটে এই ট্রেন আগেই চালিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। পশ্চিম রেলের আধিকারিকদের দাবি মতো মুম্বই থেকে আমদাবাদের দূরত্ব ৪৪৬ কিলোমিটার। এই পথ অতিক্রম করতে যে কোনও সুপারফাস্ট ট্রেনের সময় লাগবে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। দুরন্ত বা শতাব্দিতে এই পথ অতিক্রম করতে তা লাগবে মাত্র চার ঘণ্টা। ভারতীয় রেলের তরফে জানানো হয়েছে যে, এ বছরের নভেম্বর মাসে অন্য একটি রুটে প্রথম সুপারফাস্ট ট্রেন চালানোর কথা। তার পরেই মুম্বই-আমদাবাদ, দিল্লি-চণ্ডীগড় ও দিল্লি-কানপুরের রেল লাইনের কাজ একসঙ্গে শুরু হবে।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE