Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মাটি খুঁড়তেই উঠে এল নয়া ইতিহাস

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।আর্জেন্তিনার প্যাটাগোনিয়া প্রদেশে লা ফ্লেচা মরুভূমির কাছে চাষের সময়ে মাটির এক উঁচু অংশে আচমকাই হোঁচট খেলেন এক চাষি। সন্দেহ হওয়ায় নিজেই কিছুটা খোঁড়াখুঁড়ি করলেন। উঠে এল নয়া ইতিহাস। আবিষ্কৃত হল বিশ্বের সর্ববৃহত্ প্রাণীর জীবাশ্ম। চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে সংবাদের হাওয়াবদল।

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০০:০৮
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

বৃহত্তম ডাইনোসর

আর্জেন্তিনার প্যাটাগোনিয়া প্রদেশে লা ফ্লেচা মরুভূমির কাছে চাষের সময়ে মাটির এক উঁচু অংশে আচমকাই হোঁচট খেলেন এক চাষি। সন্দেহ হওয়ায় নিজেই কিছুটা খোঁড়াখুঁড়ি করলেন। উঠে এল নয়া ইতিহাস। আবিষ্কৃত হল বিশ্বের সর্ববৃহত্ প্রাণীর জীবাশ্ম।

প্যাটাগোনিয়ার পশ্চিমে খোঁজ পাওয়া এই জীবাশ্মটির অতিকায় পায়ের হাড় দেখে বিজ্ঞানীদের অনুমান ডাইনোসরের এই বিশেষ প্রজাতিটি ছিল লম্বায় প্রায় ৬৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৩০ ফুট। আনুমানিক ৭৭ টন ওজনের সেই ‘দানব’টি আধুনিক যে কোনও সাততলা অট্টালিকার জানালা দিয়ে উঁকি মারতে সক্ষম। এত দিন পর্যন্ত জানা বৃহত্তম ডাইনোসর আর্জেন্টিনোসরাসের থেকেও প্রায় ৭ টন ভারী ক্রেটেশিয়াস যুগের শেষ পর্যায়ের এই প্রাণীটি। এলাকায় খননকাজ চালিয়ে বিজ্ঞানীরা তৃণভোজী এই প্রাণীর শ’দেড়েক হাড়ের সন্ধান পেয়েছেন। হাড়গুলির অবস্থাও বেশ ভাল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। যে পাথরগুলিতে জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীদের দাবি প্যাটাগোনিয়ার গভীর জঙ্গলে ১০ কোটি বছর আগে রাজত্ব করত এই ‘দানব’।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, আবিষ্কৃত জীবাশ্মটি টাইটানোসরের নতুন কোনও প্রজাতির হতে পারে। স্থানীয় ওই চাষির কৌতূহলের জন্যই যে এই আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে, তাও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা। এখনও নামকরণ না হওয়া এই ডাইনোসরটির নাম ওই চাষির নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা।

মমির পূর্ণাবয়ব ত্রিমাত্রিক প্রতিকৃতি

পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চাইছে কয়েক হাজার বছরের পুরনো এক মমি। তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত চলমান মমিদের একটা গোটা দল! হলিউডি সিনেমায় বার বার জীবন্ত মমি দেখা গেলেও বাস্তবে মমিদের চেহারার বিবরণ পাননি তাবড় বিজ্ঞানীরা। জীবন্ত মমি দেখা তো দূরস্থান! এ বার সেই অসম্ভব কাজকেই বাস্তবে করে দেখালেন ব্রিটেনের এক দল গবেষক। মমি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা থাকলেও এখনও পর্যন্ত কোনও মমির মুখের স্পষ্ট গঠন অথবা তাদের দেহের সঠিক গঠন জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। বহু বছর ধরে সংরক্ষণের ফলে বেশির ভাগ মমিরই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। সম্প্রতি ব্রিটিশ জাদুঘরের গবেষকরা আটটি মিশরীয় মমির উপর বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে তাদের প্রায় পূর্ণাবয়ব ত্রিমাত্রিক প্রতিকৃতি তৈরি করেছেন। বিশেষ ভাবে তৈরি স্ক্যানারের মাধ্যমে সিটি স্ক্যান করে মমিগুলির মাথার চুল, পেশি, হাড়— সব কিছুই প্রযুক্তিগত ভাবে পুনর্নির্মাণ করেছেন তাঁরা। ত্রিমাত্রিক ছবিগুলি কতটা স্পষ্ট তা বোঝাতে গিয়ে জাদুঘরের কিউরেটর জন টেলর জানিয়েছেন, “এ যেন অন্ধকার ঘরে হঠাত্ করে আলো এসে পড়ার মতো অভিজ্ঞতা। পুরনো মানুষগুলিকে এত ভাল করে দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম।” গবেষকরা একটি মমির ধমনিতে ফ্যাটের সন্ধানও পেয়েছেন। এর থেকে তাঁদের অনুমান প্রাচীন এই মানুষটির তখনকার সময়ের ‘জাঙ্ক ফুড’-এর প্রতি আসক্তি ছিল। ধমনিতে ফ্যাট জমে সম্ভবত হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। একটি মমির খুলির মধ্যে ঘিলুর কিছুটা অংশ এবং সেটা বের করার একটি যন্ত্রও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মমিকরণের জন্য নাক দিয়ে ঘিলু বের করে নেওয়া হত। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত পুরোটা বের করা সম্ভব হয়নি। এবং অসাবধানতাবশত ছোট্ট যন্ত্রটি মাথার ভিতরেই থেকে যায়। প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো মমিগুলির এই ত্রিমাত্রিক ছবি ভবিষ্যতে প্রাচীন মানুষকে আরও ভাল করে জানতে সাহায্য করবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের। মমিগুলিকে নিয়ে ব্রিটিশ জাদুঘরে গত ২২ মে থেকে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রাচীনতম শুক্রাণু

বিশ্বের প্রাচীনতম শুক্রাণুর সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১৭০ কোটি বছর আগের এই শুক্রাণুর সন্ধান মিলেছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের রিভারস্লে এলাকায়। ওই এলাকার একটি গুহায় চিংড়ি জাতীয় ছোট ছোট জলজ প্রাণীর জীবাশ্মের মধ্যে সন্ধান মিলেছে প্রায় ১.৩ মিলিমিটার লম্বা এই শুক্রাণুর। বিশালাকায় এই শুক্রাণুটি পুরুষ চিংড়ির দেহের থেকেও বড় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চিংড়ির যৌনাঙ্গের মধ্যে শক্ত করে গোটানো অবস্থায় থাকত এগুলি। প্রাচীন ওই গুহায় এক কালে একটি বিশাল জলাশয় ছিল। গুহার উপরে বাস করত অসংখ্য বাদুড়। উপর থেকে পড়া বাদুড়ের মল জলাশয়ে পড়ে শুক্রাণু-সহ চিংড়িগুলির সংরক্ষণ সহজতর করেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাদুড়ের মল জলে মিশে ফসফরাস-সহ অন্যান্য খনিজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়াতেই এত বছর পর এত ভাল ভাবে সংরক্ষিত আছে চিংড়িগুলি। নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দলের অন্যতম সদস্য মাইক আর্চার জানিয়েছেন, শুক্রাণুগুলি এতটাই ভাল ভাবে সংরক্ষিত রয়েছে যে এর ভিতরের নিউক্লিয়াসটি পর্যন্ত স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। চিংড়ির জীবাশ্মটির মধ্যে জেনকার পেশিও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই পেশির মাধ্যমেই স্ত্রী চিংড়ির যৌনাঙ্গে শুক্রাণু পাঠাত পুরুষ চিংড়ি।

ঐতিহ্য

• জামা মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষায় পুরসভা

জামা মসজিদ চক-সহ পুরনো ভোপালের বিভিন্ন এলাকা সংরক্ষণে উদ্যোগী হল স্থানীয় পুরসভা। গত ৩১ মে ভোপাল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন-এর বাজেট অধিবেশনে এ বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করেন মেয়র কৃষ্ণা গৌড়। শহরের ঐতিহ্যময় এলাকাগুলিকে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে অধিবেশনে জানিয়েছেন তিনি। শুধু সংরক্ষণই নয়, বিভিন্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থাপত্যের আশপাশের এলাকাও পুনর্গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্কিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যানবাহন চলাচল-সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া, যে সমস্ত জায়গা পর্যটকপ্রিয় বা ফিল্মের শ্যুটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেই সমস্ত জনপ্রিয় স্থানগুলিরও সংস্কার করা হবে। তবে এ সব কিছুর মধ্যে যাতে সরোবর-শহর ভোপালের মূল চরিত্র অক্ষুণ্ণ থাকে, সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে ভোপালের পুর কর্তৃপক্ষ ব্রিটেনের সংস্থা ‘ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’-এর সাহায্য নেবে। কৃষ্ণাদেবীর আশা, গোটা পরিকল্পনাটি এমন ভাবে রূপায়িত হবে, যাতে অন্যদের কাছে এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।

• হেরিটেজ তালিকায় কি রানি-কি-ভাও

ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তালিকায় জায়গা পেতে পারে গুজরাতের বিখ্যাত শিল্পকর্ম রানি-কি-ভাও। গভীর এই কুয়োটি পাটান জেলায় অবস্থিত। দৈর্ঘ্যে ৬৪ ও প্রস্থে ২০ মিটার এই কুয়োর গভীরতা প্রায় ২৭ মিটার। সিঁড়ির সাহায্যে ‌কুয়োর নীচ পর্যন্ত যাওয়া যায়। বিরাট স্তম্ভ দিয়ে ঘেরা এই কুয়োর সাতটি প্রদর্শশালায় ৮০০টিরও বেশি মূর্তি রয়েছে। ১০৬৩ সালে রানি উদয়মতী তাঁর স্বামী রাজা প্রথম ভীমদেবের স্মৃতিতে এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ইউনেস্কোর পরামর্শকারী সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্ট অ্যান্ড সাইটস’ (আইসিওএমওএস)-এর এক বিশেষজ্ঞ দল এখানে সমীক্ষা চালায়। সংস্থার তরফে শিখা জৈন জানিয়েছেন, গত মে মাসে রানি-কি-ভাওকে হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে ইউনেস্কোর কাছে সুপারিশ করে আইসিওএমওএস। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রককেও জানানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত রানি-কি-ভাও হেরিটেজ তালিকাভুক্ত হবে কি না, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৫ জুন পর্যন্ত। চলতি মাসের ১৫-২৫ তারিখ কাতারের দোহায় বসবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৩৮তম সম্মেলন।

রানি-কি-ভাওকে তালিকায় রাখার কারণ কী? আইসিওএমওএস-এর তরফে জানানো হয়েছে, শিল্পকীর্তির এই অনন্য নমুনা মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে নির্মিত বলেই এই সিদ্ধান্ত।

• উগান্ডায় সমাধিসৌধের পুনর্নির্মাণ

উগান্ডায় বুগান্ডা রাজাদের সমাধিসৌধের পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হল। গত ১৩ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কাজের উদ্বোধন হয়। জাপানের আর্থিক আনুকূল্যে ইউনেস্কোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুনর্নির্মাণের কাজ করল উগান্ডার সরকার। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উগান্ডার প্রধানমন্ত্রী-সহ সে দেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোর আধিকারিকরা।

২০১২ সালের ৬ মার্চ এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সমাধিসৌধ। ২০০১ সালে এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটস-এর তালিকায় জায়গা পায়। এর পর ইউনেস্কোর বিপন্ন সৌধের তালিকায় নাম উঠে যায় উগান্ডার কাসুবির এই সৌধের। তেরোশো শতকে নির্মিত এই সমাধিসৌধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে সে সময়কার চার জন রাজার সমাধি রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার পর্যটকের ভিড় হয় এখানে। সমাধিসৌধের নির্মাণে গান্ডা স্থাপত্যশৈলী ও প্যালেস ডিজাইনের ছাপ আছে। শুধুমাত্র ঐতিহাসিক গুরুত্বই নয়, বুগান্ডাদের কাছে এর আধ্যাত্মিক মূল্যও কম নয়। এটি উগান্ডা তথা পূর্ব আফ্রিকার অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক স্থান বলে পরিচিত।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

২০০ নিউরনের কেরামতিতে মাছির গন্ধবিচার

সদ্য কাটা মিষ্টি ফলগুলো প্লেটে রাখার মিনিট খানেকের মধ্যেই এক এক করে এদের আগমন ঘটে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সার বেঁধে বা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে। কখন, কোথা থেকে বা কত দূর থেকে যে এরা গন্ধ পেয়ে মাতালের মতো ছুটে আসে তা এক প্রকার রহস্যই। রোজকারের এই চেনা ছবি যাদের ঘিরে সেই ড্রসোফিলা মেলানোগাস্টার বা সাধারণ ফ্রুট ফ্লাই-রা ভীষণই পরিচিত। কিন্তু চেনা ছবির আড়ালে যে অনেক অচেনা গল্প লুকিয়ে আছে তা কে জানত! অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জেরো মিসেনবক এবং তাঁর সতীর্থরা সম্প্রতি সেই রহস্যেরই পর্দা উন্মোচন করলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, মাছিদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ভিতর হাজার হাজার নিউরনের মধ্যে মাত্র ২০০টি এই গন্ধের মাহাত্ম্য টের পায়। শুধু তাই নয়, ভাল গন্ধ ও খারাপ গন্ধের মধ্যে তফাত্ও করতে পারে তারা। আর এ সবই সম্ভব হয় নিউরনের মধ্যস্থ ‘ফক্স-পি’ নামক জিনের প্রভাবে। ‘ফক্স-পি’ মস্তিষ্কের একটি বিশেষ জিন যা ভাবতে, বিচার-বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষ ভূমিকা নেয়। মানুষের মস্তিষ্কেও ‘ফক্স-পি’র মতো চারটি বিশেষ জিন আছে, যার মধ্যে ‘ফক্স-পি২’ ভাষার তারতম্য ও বিচার-বুদ্ধি সংক্রান্ত কাজের জন্য দায়ী। প্রফেসর সিমন ফিশার প্রথম মানুষের মস্তিষ্কে এই জিনের সন্ধান পেয়েছিলেন। মিসেনবক জানালেন, মাছিরা বুঝতে পারে কোন গন্ধের পিছনে ছোটা উচিত আর কোনটা তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। পরীক্ষার জন্য তাঁরা কয়েকটা ড্রসোফিলাকে দু’টি ভিন্ন গন্ধের সঙ্গে পরিচয় করান। এর পর গন্ধ দু’টিকে একটি বিশেষ চেম্বারে পাশাপাশি রেখে দেখেন মাছিরা সহজেই এদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে। এ বার এদের মধ্যে একটিকে অ্যসিডিক বা বিষাক্ত করে দিয়ে ফের পরীক্ষা চালান। দেখা যায় মাছিরা বিপজ্জনক গন্ধটাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের জন্য গন্ধের মাত্রা বাড়িয়ে ও কমিয়ে পরীক্ষা করেন। দেখা যায়, যখন গন্ধ দু’টির মধ্যে তারতম্য খুব বেশি, মাছিরা সহজেই জোরালো গন্ধটিকে এড়িয়ে অন্য গন্ধের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু যখন তারতম্য খুবই সামান্য তখন তারা কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করে তার পর পরিচিত গন্ধটিকে বেছে নিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই কিছু ক্ষণের বিরতি চিন্তা-ভাবনার জন্য। এই সময়ের মধ্যেই তারা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে। মিসেনবকের মতে, এ সবই সম্ভব হচ্ছে ‘ফক্স-পি’ জিনের রাসায়নির পরিবর্তনের কারণে। জটিল পরিস্থিতিতে জিনের বিশেষ রাসায়নিক পরিবর্তন নিউরনের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে মস্তিষ্কের বিশেষ প্রকোষ্ঠে। তারই প্রভাবে গন্ধবিচার করার বিশেষ ক্ষমতা জন্মাচ্ছে মাছিদের মধ্যে। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বাঙালি বিজ্ঞানী শমিক দাশগুপ্ত জানালেন, মস্তিষ্কের কোষগুলি নিউরন মারফত আসা এই বিশেষ তথ্যগুলিকে সংগ্রহ করতে থাকে। যখন এই তথ্যের ভাণ্ডার পূর্ণ হয়, তখন আপনা থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা জন্মায়। কিন্তু যদি ‘ফক্স-পি’ কোনও কারণে তার কার্যক্ষমতা হারায়, তা হলে মস্তিষ্কের কোষ তথ্যগুলিকে ধরে রাখতে পারে না। ফলে তথ্যগুলি মাঝপথেই হারিয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও বিলুপ্ত হয়।

‘গে পেঙ্গুইন’-এর সন্তান পালন

পরম যত্নে মায়ের আদরে অনাথ বাচ্চাকে বড় করে তুলছে এক ‘গে’ দম্পতি। বাচ্চার মা আইসোবেল জন্মের পরেই তাকে ত্যাগ করেছে। বাবা হারিকেন ছেড়ে গিয়েছে আগেই। সেই সময় তাকে বুকে তুলে নেয় জাম্বস ও কারমিত। ২০১২-তেই গাঁটছড়া বেঁধেছে তারা। নিজের নিজের বান্ধবীদের ছেড়ে এক সঙ্গে পথ চলা শুরু করেছে। কিন্তু সন্তান ধারণের ক্ষমতা না থাকায় বেশ কিছু মাস ধরেই একাকীত্বের ছায়া পড়েছিল ওই দম্পতির জীবনে। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলের পর থেকেই তাদের সংসারের ভরভরন্ত অবস্থা। কারণ এই এপ্রিলেই তাদের কোলে এসেছে এই সন্তান। না হয় সত্ বাবা, তাতে ক্ষতি কি! সন্তানের নাওয়া-খাওয়া থেকে যাবতীয় খুঁটিনাটির তত্ত্বাবধান করতে করতেই তাদের দিন কেটে যায়। বর্তমানে এই দম্পতির ঠিকানা ব্রিটেনের উইংহাম ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক। জাতিতে বা প্রজাতিতে পেঙ্গুইন। পার্কের কর্ণধার টোনি বিনস্কিন খুব গর্বের সঙ্গেই জানালেন এই পেঙ্গুইন দম্পতির কথা। তাঁর মতে প্রাণিজগতে জাম্বস ও কারমিত এক বিরল দৃষ্টান্ত। তারা আদর্শ পিতা-মাতা বা বলা ভাল জোড়া পিতার ভূমিকা পালন করেছে। বেনস্কিন জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিলুপ্তপ্রায় হামবোল্ট প্রজাতির পেঙ্গুইন হল জাম্বস ও কারমিত। এই প্রজাতির সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন পার্কের কর্মকর্তারা। তার মধ্যে সমলিঙ্গের এই দুই প্রজাতির মেলবন্ধনে সাময়িক অস্বস্তিতে পড়লেও এখন তাদের কৃতিত্বে খুবই খুশি তাঁরা। তবে বাচ্চার নাম এখনও ঠিক করা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।

হোমোসেক্সুয়াল বা সমকাম প্রাণিজগতে নতুন নয়। এর আগেও ২০১২-তে মাদ্রিদের পাউনিয়া পার্কে সমলিঙ্গের জেনটু প্রজাতির ইনকা ও রায়াস নামের দু’টি পেঙ্গুইনের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। শুধু পেঙ্গুইন নয়, ডলফিন, অস্ট্রেলিয়ার ব্ল্যাক সোয়ান নামক হাঁসেদের মধ্যেও এই প্রবৃত্তি দেখা যায়। ব্ল্যাক সোয়ানেরা আবার তিন জনের জোট তৈরি করে। দু’টি পুরুষ হাঁস ও একটি মহিলা। মহিলারা যখন বাচ্চা সামলাতে ব্যস্ত থাকে, পুরুষেরা তখন বাসা পাহারা দেয়। গৃহপালিত ভেড়াদের কমপক্ষে আট শতাংশই সমকামী, জিরাফদের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৫ শতাংশেরও বেশি। আমাজন ডলফিনেরা আবার দলবদ্ধ ভাবে যৌনক্রিয়া করতেই বেশি পছন্দ করে। বোনোবো প্রজাতির শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে ৬০ শতাংশই সমকামী বা উভকামী। এই প্রবৃত্তি খুব বেশি মাত্রায় দেখা যায় হায়নাদের মধ্যে। সমলিঙ্গে যৌনক্রিয়া করতেই বেশি পছন্দ করে হায়নারা। ১৯৯৯ সালে একটি সমীক্ষায় ১৫০০ প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যে এই প্রবৃত্তি ধরা পড়ে। স্তন্যপায়ী থেকে শুরু করে সরীসৃপ, ড্রগনফ্লাই থেকে ছারপোকা সমকামিতার উদাহরণ ভুরি ভুরি।

জোরে সাঁতার কাটে ‘মাতাল’ মাছ

ভাগ্যিস মাছেরা গাড়ি চালাতে পারে না! না হলে ঝাপসা চোখে ও টলোমলো হাতে থুড়ি পাখনায় ভর করে তাদের ‘সলিলসমাধি’ হত অবধারিত। তবে সামান্য একটু নেশা তো করা যেতেই পারে। আর এই নেশার কারণেই জেব্রা ফিশেরা যে সব কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলেছে তা দেখে অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে সামান্য গাঢ়ত্বের অ্যালকোহলের মিশ্রণ জেব্রা ফিশেদের চলার গতি প্রায় দ্বিগুণ করে দেয়। পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা নানা ঘনত্বের অ্যালকোহলের মিশ্রণ তৈরি করে তার মাত্রা কমিয়ে বা বাড়িয়ে মাছেদের উপর তার প্রভাব লক্ষ করেন। গবেষণাটি প্রথম শুরু করেন নিউ ইয়র্কের পলিটেকনিক স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক দল বিজ্ঞানী। গবেষণায় নেতৃত্ব দেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহ-অধ্যাপক মাওরিজিও পরফাইরি। গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, অ্যালকোহল সেবন করিয়ে মাছেদের আচারআচরণ ও গতিবিধির উপর নজর রাখা এবং পরবর্তী কালে এই গবেষণার ফলকে কাজে লাগিয়ে মানব সমাজে অ্যালকোহলের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব কমানো। তবে পরীক্ষা করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় বিজ্ঞানী পরফাইরিকে তা কোনও অংশেই একটি রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের থেকে কম যায় না!

পরফাইরি জানালেন, পরীক্ষার জন্য একটি ট্যাঙ্কের মধ্যে চার থেকে পাঁচটি জেব্রা ফিশকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একটিকে ধরে বেঁধে মাঝারি মাত্রার অ্যালকোহল খাইয়ে দেওয়া হয়। পরফাইরি দেখেন, মদ্যপ মাছ তার অপেক্ষাকৃত ‘সংযমী’ সহকর্মীদের সঙ্গে বেশ ভাল ভাবেই মিলেমিশে গিয়েছে। টলোমলো লেজ ও পাখনা দিয়ে জল কেটে আরও দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটছে। আগের থেকে সে এখন অনেক বেপরোয়া, এমনকী সামনে আসা বাধা বা শিকারি মাছকেও ডরায় না। সে এখন তার সহকর্মীদের কাছে এক কথায় হিরো। ট্যাঙ্কের বাকি মাছেরাও আশ্চর্যজনক ভাবে তাদের এই মাতাল বন্ধুটির পদাঙ্ক অনুসরণ করছে। পাল্লা দিয়ে সাঁতার কাটছে, এমনকী তাদের আচরণেও অনেক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তবে এই পরিবর্তন খুবই অল্প সময়ের জন্য। এর পরেই বিজ্ঞানীরা অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়িয়ে ফের পরীক্ষা করলেন। দেখা গেল, বেশি মাত্রার অ্যালকোহল মাছেদের চলার গতি অনেক কমিয়ে দিয়েছে। সেই বেপরোয়া ভাবটা আর নেই, বরং আগের থেকে অনেক ঝিমিয়ে পড়ছে জেব্রা ফিশেরা। ট্যাঙ্কের অন্যান্য মাছও আর মান্যি করছে না তাদের। এর পর পরফাইরি এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, অ্যালকোহলের প্রভাব তা সে বেশিই হোক বা কম, মানুষের মতো মীন সমাজেও তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। মাছেদের উপর অ্যালকোহলের সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ করতে হয়তো পরফাইরিকে আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। মানুষের জীবনে এই পরীক্ষা কি পরিবর্তন আনবে জানা নেই, তবে পরফাইরির ধারণা মাছেরা তত দিনে হয়তো অনেক বেশি কৌশলী হয়ে যাবে।

পর্যটন কেন্দ্র

ওড়িশার ‘কাশ্মীর’ দারিংবাড়ি

ওড়িশার কন্ধমাল জেলার সুন্দর জায়গা দারিংবাড়ি। পূর্বঘাট পর্বতমালার তিন হাজার ফুট উচ্চতায় দারিংবাড়ি ‘ওড়িশার কাশ্মীর’ নামে পরিচিত। পাহাড়ের কোলে প্রকৃতি যেন নিখুঁত ভাবে গড়ে তুলেছে গ্রামটিকে। বাণিজ্যিক ভাবে পর্যটনের ছোঁয়া না লাগলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কাড়ার পক্ষে যথেষ্ট এর সৌন্দর্য। পাহাড়ের ঢালে পাইন ও কফির বাগান। ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ি এই জায়গাটি গরম কালে ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ জায়গা। এটি ওড়িশার একমাত্র জায়গা যেখানে শীতকালে কখনও কখনও তুষারপাত হয়। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডোলুরি নদী, ফুলবনি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পুটুডি জলপ্রপাতের দৃশ্য অপূর্ব! এ ছাড়াও বেড়িয়ে আসা যায় বেলঘর অভয়ারণ্য থেকে। বন্য হাতির জন্য খ্যাতি এই অরণ্যের। শুধু যে প্রাকৃতিক সম্ভারে জায়গাটি সমৃদ্ধ তা নয়। আরও একটা কারণে দারিংবাড়ি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, তা হল এখানকার আদিম উপজাতি। কন্ধমালের ‘কুটিয়া’ উপজাতি এবং ডোগরিয়া খোন্ড উপজাতিদের আজও আধুনিক সভ্যতার থাবা গ্রাস করতে পারেনি।

বেরহামপুর থেকে বালিগুদা হয়ে সাড়ে চার ঘণ্টার পথ দারিংবাড়ি। বেরহামপুর থেকে দারিংবাড়ি গিয়ে আবারও ফিরে আসা যায় বেরহামপুরে।

সিকিম সুন্দরী রিনচেনপং

এক দশক আগেও মানুষ তেমন ভাবে জানতেন না এই সিকিম সুন্দরী রিনচেনপঙের নাম। কিন্তু পাহাড়প্রেমী মানুষের কাছে আজ পশ্চিম সিকিমের এই জায়গাটি খুবই পরিচিত। হিমালয়ের কোলে কাঞ্চনজঙ্ঘার সান্নিধ্যে সব ব্যস্ততা ভুলে কয়েক দিন কাটিয়ে আসার সেরা ঠিকানা রিনচেনপং।

রিনচেনপঙের মূল আকর্ষণ অবশ্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর তাঁকে ঘিরে আছে আরও অনেকগুলি পর্বতশৃঙ্গ— মাউন্ট পান্ডিম, মাউন্ট নরসিং, মাউন্ট সিনিয়লচু, মাউন্ট রাথোং, মাউন্ট কাব্রু। আর এক দ্রষ্টব্য রিনচেনপং মনাস্ট্রি।সপ্তদশ দশকে তৈরি প্রাচীন এই মনাস্ট্রির গঠনশৈলী অভিনব। এখানকার বুদ্ধমূর্তিটিও ব্যতিক্রমী। ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তিকে জড়িয়ে আছে এক নারীমূর্তি। সচরাচর এমন বুদ্ধমূর্তি দেখা যায় না। এর পর আছে পয়জন লেক। হ্রদের জলে লেখা লেপচাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের কাহিনি। কথিত আছে, ১৮৬০ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে লেপচাদের যুদ্ধ বাধলে হ্রদের জলে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়। এই বিষ মেশানো জল পান করে অনেক ব্রিটিশ সৈন্য মারা যান। সেই থেকে পাহাড় ঘেরা নীল জলের এই হ্রদ পয়জন লেক নামে খ্যাত। রিনচেনপঙে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এখানকার মায়াবী সৌন্দর্যের হাতছানিতে বেশ কিছু দিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আছে তাঁরই স্মৃতিধন্য রবীন্দ্রভবন। বেড়িয়ে আসা যায় হেরিটেজ হাউজ থেকে, যা লেপচাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে বহন করছে প্রায় ২০০ বছর।

দেবভূমি অসলো

তিন দিক সমুদ্রে ঘেরা উত্তর পশ্চিম ইউরোপের দেশ নরওয়ে। যার অপর নাম ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’। রাজধানী অসলো। যার অর্থ ‘একখণ্ড দেবভূমি’। ‘অস’ কথাটি এসেছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রাচীন দেবতার নাম থেকে, আর ‘লো’ শব্দের অর্থ ভূমি। সবমিলিয়ে ‘দেবভূমি’। অসলো শহরটি সমুদ্র তীরবর্তী, তাই সমুদ্রকেন্দ্রিক নানা শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য সমৃদ্ধ শহরটির মান ইউরোপের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। অসলো ফিয়র্ডের উত্তর প্রান্তে গড়ে ওঠা সবুজ পাহাড় বনাঞ্চল নীল হ্রদ দিয়ে ঘেরা অসলো শহরটি যেন প্রকৃতির বিশাল ক্যানভাসে আঁকা একটি শহর। শহর সীমার মধ্যে আছে সমুদ্র আর জলাশয় নিয়ে ৪০টি দ্বীপ। এখানে ৩৪৩টি লেক আছে।

অসংখ্য সাজানো পার্ক, ঝকঝকে বাড়িঘর, পরিচ্ছন্ন রাস্তা যেমন আছে, তেমনই আছে চতুর্দশ শতকে তৈরি দূর্গ। আছে ষোড়শো শতকের তৈরি সিটি হল, পার্লামেন্ট বিল্ডিং, রাজপ্রাসাদ, আর রাজাদের গ্রীষ্মাবাস এবং ভাইকিং শিপ মিউজিয়াম। সেখানে নরওয়ের ভাইকিং জলদস্যুদের অষ্টম শতক থেকে অতলান্তিকের বুকে দুঃসাহসিক অভিযানে ব্যবহৃত কাঠের নৌকা, জাহাজ, শ্লেজ, ঘোড়ার গাড়ি সব সুন্দর ভাবে রক্ষিত আছে। এ ছাড়া আছে কনটিকি মিউজিয়াম। এখানে নরওয়ের বিখ্যাত অভিযাত্রী থর হেয়ারডাল প্রশান্ত মহাসাগর পার হয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় যে রোমাঞ্চকর অভিযানে গিয়েছিলেন তার সমস্ত উপকরণ সংরক্ষিত আছে।

শিক্ষা-সংস্কৃতি-শিল্প-সঙ্গীত-চিত্রকলা— সব দিক থেকেই অসলো পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শহর। এখানে যেমন আছে অসংখ্য মিউজিয়াম, তেমন আছে আর্ট গ্যালারিও। এর মধ্যে ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আর্কিটেকচার, মিউজিয়াম অফ ডেকরেটিভ আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন, ভিগল্যান্ড মিউজিয়াম, ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ কন্টেম্পরারি আর্ট উল্লেখযোগ্য।

• জামাই বরণ মেলা

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রবিবার বাংলাদেশের বগুড়ার শেরপুরে জাঁকজমকের সঙ্গে জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হয় শ্বশুরবাড়িতে। সেই উপলক্ষে এলাকায় বসে এক বিরাট বড় মেলা। নাম তার ‘জামাই বরণ মেলা’। এক সময় এর জাঁকজমক, আনন্দ-উত্সব শুধুমাত্র শেরপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকাতেও।

কথিত আছে, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শেরপুর এলাকায় এই মেলা বসছে। আগে এই মেলা ছিল এক দিনের। ব্যাপ্তি এবং জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় এ বছর থেকে মেলা সাত দিন ধরে বসবে। মেলার আয়োজন শুরু হয় বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে। গ্রামে গ্রামে মাদার (বাঁশের লাঠি) খেলার মাধ্যমে তার সূত্রপাত। মেলা শুরুর আগে, জ্যৈষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার মেলা প্রাঙ্গণে মাজারের সামনে এসে শেষ হয় এই মাদার খেলা। সাত দিনের মেলায় যাত্রা, সার্কাস, নাগোরদোলা, পুতুলনাচ— মনোরঞ্জনের নানা আয়োজন থাকে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কেনাকাটা। মেলা উপলক্ষে এলাকার মানুষ বাড়ির মেয়ে-জামাইকে শুধু নয়, আমন্ত্রণ জানান পরিবারের সকল আত্মীয়স্বজনদেরও। শ্বশুরবাড়িতে জামাইকে আদর-আপ্যায়ন করাটা যেমন এই উত্সবের রীতি, তেমনই আত্মীয়স্বজন, শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে জামাইয়ের মেলায় ঘুরতে যাওয়া, তাদের উপহার কিনে দেওয়া, মেলা থেকে মাংস-মাছ-মিষ্টি কেনাটাও রেওয়াজ। বিভিন্ন খাবারের দোকানের পাশাপাশি মেলা জুড়ে বসে কাঠ এবং ঝিনুকের তৈরি খেলনা ও গয়নার দোকান, নানা রকম মশলার দোকান, শাড়ি-জামাকাপড়ের দোকান। ব্যবসায়ীদের কথা অনুযায়ী এই মেলায় কোটিখানেক টাকার বিক্রিবাটা হয়।

• গণবিবাহের আসর সৌরথ সভা

মধুবনি জেলার অরণ্যঘেরা এক গ্রাম সৌরথ। উত্তর বিহারের এই ছোট্ট গ্রামের সবুজ বনানি জুন-জুলাই মাসে এক বিশেষ উত্সবকে কেন্দ্র করে দুলে ওঠে। উত্সবের নাম সৌরথ সভা— কয়েক হাজার মানুষের সমাগমে এক গণবিবাহের অনুষ্ঠান। এক কথায় ‘বিবাহ বাজার’। অরণ্যের ছায়ায় বসে এই আসর। প্রতি বছর কয়েকশো যুবক-যুবতী, তাঁদের অভিভাবক এবং বিবাহের দায়িত্বে থাকা মৈথিলি ব্রাহ্মণ— সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। এ ছাড়া সভার কারণে এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ছোট বড় অসংখ্য দোকান। পাত্র ও পক্ষের মধ্যে চলে দেনাপাওনা নিয়ে দর কষাকষি। সভায় কোনও পাত্র পছন্দ হলেই কন্যাপক্ষ সেখানে গিয়ে নগদ দেনাপাওনা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করে দেন। দেনাপাওনা বুঝে নিয়ে উপহার ও নগদের অঙ্ক চূড়ান্ত হওয়ার পর শুরু হয় ধর্মীয় নিয়ম মেনে বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। ১০-১৫ দিন চলে বিয়ের এই বাজার।

গণবিবাহের এই আসরের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। কথিত আছে, প্রায় ২২০ বছর আগে দারভাঙার মহারাজা লক্ষ্মীশ্বর সিংহ সৌরথ গ্রামে প্রথম এই সভার আয়োজন করেন। স্থানীয় মতে সৌরথ সভা আসলে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন মৈথিলী সংস্কৃতিরই অঙ্গ। ফি বছর পঞ্জিকা মিলিয়ে, মৈথিলি ব্রাহ্মণ এবং সভার আয়োজকেরা মিলে সভার দিন ক্ষণ ঠিক করেন। এই সভায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি গ্রামের জন্য, এমনকী পাত্রপাত্রীদের বসার জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারিত থাকে। তবে পাত্রী ছাড়া অন্য কোনও মহিলার এই সভায় থাকার অনুমতি নেই।

পরিষেবা

মেট্রোতে বিনামূল্যে ‘ওয়াইফাই’

সিসটেমা শ্যাম টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড (এসএসটিএল) এবং রাপিড মেট্রোরেল গুড়গাঁও লিমিটেড (আরএমজিএএল)-এর যৌথ উদ্যোগে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা শুরু করল গুরগাঁও মেট্রো। মেট্রো যাত্রীরা এ বার থেকে চলন্ত ট্রেনের ভিতর থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। বিনামূল্যে এই পরিষেবা দিচ্ছে এসএসটিএল। এমটিএস-এর সাহায্যে গুড়গাঁও-এ মেট্রোরেলের ৫.১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এই সুবিধা। গুড়গাঁও-এ মেট্রোরেল ছাড়াও সিকন্দরপুর, ইন্দাসল্যান্ড ব্যাঙ্ক সাইবার সিটি, ফেস-টু ও মাইক্রোম্যাক্স মোলসারি অ্যাভিনিউতে মিলবে ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধা। সারা দিন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মেট্রো ব্যবহার করেন। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে অন্তত ৯৫ শতাংশ মানুষ মেট্রোর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।

স্মার্ট কার্ডে শুল্ক বাড়াল দিল্লি মেট্রো

গত ২১ মে থেকে স্মার্ট কার্ডে রিচার্জের মূল্য বাড়াল দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি)। আগে যাঁরা ১০০ টাকা দিয়ে রিচার্জ করতেন তাঁদের এখন ২০০ টাকা দিয়ে রিচার্জ করতে হবে। নতুন স্মার্ট কার্ড আগে ১০০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যেত, এখন দিতে হবে ১৫০ টাকা, যার মধ্যে ৫০ টাকা ফেরতযোগ্য। ডিএমআরসি-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন যাত্রীদের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যত বেশি স্মার্ট কার্ড ব্যবহার বাড়বে মেট্রোর টিকিট কাউন্টারে তত কম লাইন পড়বে এবং তাতে যাত্রীরাই উপকৃত হবেন বলে তাঁর মত। শুল্ক বাড়লেও এখনই ভাড়া বাড়ছেন না বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE