Advertisement
০৩ মে ২০২৪

স্কুইড-এর ‘পার্টি অল দ্য নাইট’

সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।নৈশভোজের পর পার্টি করে স্কুইডরা। সমুদ্রের নীচে তো আর দিন-রাতের ফারাক বোঝা যায় না! তাই ধরে নেওয়া ভাল সেখানে সবসময়েই রাত। আর গভীরতা যদি হয় প্রায় ৫০ ফুটের (১৫ মিটার) কাছাকাছি তাহলে তো কথাই নেই! ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরা পরিবেশ। আর এই পরিবেশেই পার্টি করতে পছন্দ করে স্কুইড, অক্টোপাস জাতীয় প্রাণীরা! এ রকম চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে সংবাদের হাওয়াবদল।

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার

চিনে ২১০০ বছরের পুরনো সমাধির খোঁজ

এ যেন এক হারানো গুপ্তধন। চিনে ২১০০ বছরের পুরনো এক সম্রাটের সমাধি থেকে মিলল সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ ও সবুজ মূল্যবান পাথরের তৈরি বিপুল প্রত্নসামগ্রীর। ২০০৯-’১১-র মধ্যে আবিষ্কৃত বিশালাকায় ওই সমাধির ভিতর বিপুল পরিমাণ সম্পদ মেলায় স্বভাবতই বিস্মিত প্রত্নতাত্ত্বিকেরা! বিস্ময়ের প্রধান কারণ চুরি। বিজ্ঞানীদের দাবি, মূল কাঠামোটি আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই চোরাগোপ্তা পথে সমাধিতে ঢুকে বহু মূল্যবান সামগ্রী সরানো হয়েছে। চোরের উপদ্রবে হারিয়ে গিয়েছে স্বয়ং সম্রাটের মমিটিও। সমাধিটি চিনা সম্রাট লিউ ফেই-এর। এখনকার ঝিয়াংসুর ঝুই প্রদেশের শাসক ছিলেন তিনি। খ্রিস্টপূর্ব ১২৮ অব্দে ২৬ বছর শাসনকাল শেষে মৃত্যু হয় ফেই-এর। তবে তাঁর মৃত্যুর আগেই এই বিশাল সমাধিটি তৈরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমাধির মধ্যে সোনা ও রুপোর তৈরি হাজার দশেক প্রত্নসামগ্রীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়াও বড় আকারের বেশ কয়েকটি রথ, ডজনখানেক ছোট রথ এবং প্রচুর অস্ত্রেরও খোঁজ মিলেছে। তিনটি প্রধান কক্ষ, ১১টি অনুসারি কক্ষ, রথ ও ঘোড়া রাখার জন্য দু’টি এবং অস্ত্রাগারের জন্য আরও দু’টি কক্ষ-সহ সমাধিক্ষেত্রটির আকার ছিল বিশাল। বিজ্ঞানীদের দাবি, অক্ষত অবস্থায় সমাধির প্রাচীরগুলি লম্বায় ছিল প্রায় পাঁচশো মিটার। এর মধ্যে ছিল। সমাধির ভিতর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের খোঁজ মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে একটি আস্ত রান্নাঘর এবং প্রচুর মদ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত এই সম্রাটের মৃত্যুর পরও যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্যই এই রাজকীয় ব্যবস্থা। সম্রাটের চুরি হওয়া সমাধির পাশে আরও একটি বড় সমাধির খোঁজ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। পুরো সমাধির মধ্যে একমাত্র এটিই সম্ভবত চোরদের চোখ এড়িয়ে গেছে। প্রায় অবিকৃত এই সমাধিটি সেই সময়ের কোনও বিশিষ্ট মানুষের বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের।

প্রাচীনতম ধাতব বস্তুর খোঁজ

বিশ্বের প্রাচীনতম ধাতব বস্তুর খোঁজ মিলল জর্ডনের তেল স্যাফেতে। জর্ডন নদীর কাছে তেল স্যাফ-এর অবস্থান জর্ডন-ইজরায়েল সীমান্তে। মধ্য প্রাচ্যের এই শহর বহুদিন ধরেই প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে স্বর্ণখনি। ১৯৫০ সালের শেষ দিকে প্রত্নস্থলটি আবিষ্কার করা হয়। কুড়ি বছর পর ১৯৭০ সাল নাগাদ শুরু হয় খননকার্য। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুত প্রত্নসামগ্রীর সন্ধান দিয়ে বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে তেল স্যাফ। বদলে গিয়েছে পুরনো বহু ধারণাও। এর নবতম সংস্করণ তামার তৈরি একটি সূচ। ৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং আধ সেন্টিমিটার চওড়া ধাতব এই সূচটি পাওয়া গিয়েছে এক মহিলার সমাধির ভিতর। ছ’হাজার বছর আগে এই এলাকা রীতিমত সমৃদ্ধ গ্রাম ছিল। পুরো এলাকায় ছিল বড় বড় মাটির বাড়ি এবং বিশালাকায় সাইলো। স্থানীয় লোকেদের অন্যতম মূল জীবিকা ছিল পশুপালন। গবাদি পশুর খাবার রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এই সাইলোগুলি। ইজরায়েলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যানি রোজেনবার্গের মতে, “মহিলা ও সূচ দুই-ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এর মধ্যে প্রাচীন শ্রেণিবিভাগ প্রথা লুকিয়ে আছে।” সূচটি মোটামুটি ৫১০০-৪৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চলে তামার সূচের অস্তিত্ব প্রমাণ করে ছ’হাজার বছর আগেও হাজার হাজার মাইল দূরের কোনও অঞ্চলের সঙ্গে তেল স্যাফ-এর বিভিন্ন ধাতুর আদান প্রদান হত। ধাতুর আদানপ্রদানের এটাই প্রাচীনতম নিদর্শন বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

প্রাচীন বাণিজ্যতরীর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার

সময়টা খ্রিস্টজন্মের সাতশো বছর আগের। অধুনা সিসিলি থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে চলেছে একটি বাণিজ্যতরী। আচমকাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাল্টা দ্বীপপুঞ্জের কাছে ডুবে গেল জাহাজটি। সমুদ্রের প্রায় চরশো ফুট নীচে পুরু বালির স্তরে আটকে যায় পসরা-সহ জাহাজটি। প্রায় দু’হাজার সাতশো বছর পর গোজো দ্বীপপুঞ্জের কাছে সেই জাহাজের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেলেন আন্তর্জাতিক প্রত্নবিজ্ঞানীদের একটি দল। মাল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আবিষ্কারক দলটির অন্যতম সদস্য টিমি গ্যামবিন সমুদ্রের নীচে প্রায় সাতশো বর্গফুট এলাকা জুড়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পান। তাঁর মতে জাহাজটি ‘অসম্ভব ভালো ভাবে সংরক্ষিত’। প্রায় ৫০ ফুট লম্বা জাহাজটির মাস্তুল এখনও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব বলে আশা বিজ্ঞানীদের। জাহাজে উপর বালির পুরু আস্তরণ থাকায় তা কুশনের মতো কাজ করায় জাহাজের সব পসরাই ভালো ভাবে সংরক্ষিত। জাহাজে ছিল খান পঞ্চাশেক মসৃণ পাথর যার প্রতিটির ওজন মোটামুটি ৩৪ কিলোগ্রাম, এবং বিভিন্ন আকৃতির বয়াম। অধুনা লেবানন থেকে ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করত এই জাহাজ। এত বছর পর অক্ষত অবস্থায় এই প্রত্নসামগ্রী খুঁজে পাওয়ায় প্রাচীনকালে ওই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জানতে সুবিধা হবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে সমুদ্রের নীচে ঠিক কোন জায়গায় জাহাজটির সন্ধান মিলেছে গোপনীয়তা ও সুরক্ষার খাতিরে তা বলতে চাননি বিশেষজ্ঞরা।

ঐতিহ্য

অজিণ্ঠায় ক্ষতির আশঙ্কা

ভূমিধসের ফলে বিশ্বখ্যাত অজিণ্ঠায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত জুলাইয়ে ভূমিধসের কবলে পড়ে মুম্বইয়ে ১৫০ জন মারা যান। হড়পা বানের তোড়ে ভেসে যায় একটি গোটা গ্রাম। সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অজিণ্ঠার একটি অংশও। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। ভূমিধসের ফলে অজিণ্ঠায় আরও বড়সড় ক্ষতি হতে পারে বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে।

ইউ‌নেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর তকমা পাওয়া অজিণ্ঠার গুহাচিত্র দেখতে মুম্বইয়ে প্রতি বছর পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি পর্যটক ছুটে আসেন। অজিণ্ঠার গুহাচিত্র এবং স্থাপত্যকর্মগুলি খ্রিস্ট পূর্ব দ্বিতীয় শতকের। এখানে ক্ষতির আশঙ্কা করে ২০১১ সালেই অবশ্য রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। একটানা বৃষ্টি, ক্রমাগত সবুজ ধ্বংসের অজিণ্ঠার পাহাডের এক দিক বসে গিয়েছে। পাহাড়ের যে দিকে অজিণ্ঠার অবস্থান, সেখানে ২৯টি গুহার উপরে ৩০টি দুর্বল স্থান চিহ্নিত করা হয়। আশঙ্কা, সামান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বেশ বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে অজিণ্ঠা।

ফ্লোরা ফাউন্টেন-এর সংস্কার

মুম্বইয়ের বিখ্যাত ফ্লোরা ফাউন্টেন সংরক্ষণে উদ্যোগী হলেন শহর কর্তৃপক্ষ। আগামী অক্টোবর থেকেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে মুম্বই পুরসভা, বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কপোর্রেশনের (বিএমসি) তরফে জানানো হয়েছে।

মুম্বইয়ের ঐতিহ্যময় স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম ফ্লোরা ফাউন্টেন। এটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে। খরচ হয়েছিল ৪৭ হাজার টাকা। রোমান দেবী ফ্লোরার নামে এর নামকরণ করা হয়। কৃত্রিম ঝর্ণা-সহ এই স্থাপত্যকীর্তির একেবারে উপরে রয়েছে বসন্ত ঋতুর দেবী ফ্লোরার মূর্তি। দক্ষিণ মুম্বইয়ের দাদাভাই নওরোজি রোডের হুতাত্মা চকের এই নজরকাড়া স্থাপত্যকীর্তি মুম্বইয়ের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানও বটে।

ফ্লোরা ফাউন্টেন-এর সংরক্ষণের বিষয়ে বছরখানেক আগে মুম্বই হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি (এমএইচসিসি)-র সবুজ সঙ্কেত মিলেছিল। সংস্কার ছাড়াও একে ঘিরে একটি প্লাজা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। ফ্লোরা ফাউন্টেনকে কেন্দ্র করে মানুষ ইতিহাসকে চিনবে-জানবে বা এর স্থাপত্যশিল্পে আগ্রহী হবে— এমনটা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত অগস্টে ফের এ বিষয়ে উদ্যোগী হয় এমএইচসিসি।

ঐহিত্যের রেল সফর

১২ মার্চ, ১৮৬২— ব্রিটিশ মালাবার অঞ্চলে প্রথম ট্রেন ছুটল তিরুর থেকে চালিয়াম।

২ জানুয়ারি, ১৮৮৮ সাল— মালাবারে প্রথম ট্রেনযাত্রার ঠিক ২৬ বছর পরে কোঝিকোড় স্টেশন জুড়ল তত্কালীন ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সির রাজধানী মাদ্রাজের সঙ্গে। একসময় মাদ্রাজ রেলওয়ের পশ্চিমদ্বার হিসেবেও বিখ্যাত ছিল কোঝিকোড় স্টেশন।

রেলওয়ের ইতিহাসে কোঝিকোড়ের নাম এ ভাবেই বহু ঐতিহ্যময় ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে এ বার কেরলের কোঝিকোড় স্টেশনে রেলের একটি সংগ্রহশালা স্থাপন করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

রেলের ইতিহাস নিয়ে উত্সাহীদের এক সংগঠন, কালিকট হেরিটেজ ফোরাম (সিএইচএফ) এ বিষয়ে একটি সবিস্তার পরিকল্পনাও তৈরি করছে। ফোরামের প্রেসিডেন্ট তথা ইতিহাসবিদ এম জি এস নারায়ণনের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন, কোঝিকোড়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র সহ-অধ্যাপক এ কে কস্তুরবা, থালাসেরের গভর্নমেন্ট ব্রেনান কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক শিনয় জেসিন্থ এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র উত্তরাঞ্চলের প্রাক্তন আঞ্চলিক প্রধান কে কে মহম্মদ প্রমুখ। সংগ্রহশালার জন্য কোঝিকোড় স্টেশন সংলগ্ন একশো বছরের পুরনো বাংলো বাড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যরীতির এই বাংলো বাড়িতে বর্তমানে রেলের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ারের (ক্যারিয়েজ এবং ওয়াগন) অফিস রয়েছে। এ ছাড়া, এর চারপাশে জায়গায় বড় বড় ক্রেন, লোকোমোটিভ এবং রেলের পুরনো কামরা প্রদর্শনের কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফোরাম প্রথমে একটি সমীক্ষা করে ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্বলিত রেলের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র চিহ্নিত এবং সংগ্রহের কাজ করবে। এর পরে সেগুলিকে নথিবদ্ধ করে কোঝিকোড়ের সাংসদ এম কে রাঘবন-সহ দক্ষিণাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষ, জাতীয় সংগ্রহশালার ডিরেক্টর জেনেরাল ভি বেনু এবং কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হবে।

সিএইচএফ-এর আহ্বায়ক সি কে রামচন্দ্রন বলেন, রেলের এ রকম গৌরবময় ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে জায়গা করে নিতে পারেনি কোঝিকোড়। ফোরাম এ বার আগামী দিনের জন্য সেই ঐতিহ্যকেই সংরক্ষণের জন্য নেমেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ

ডিস্কো স্কুইড

নৈশভোজের পর পার্টি করে স্কুইডরা। সমুদ্রের নীচে তো আর দিন-রাতের ফারাক বোঝা যায় না! তাই ধরে নেওয়া ভাল সেখানে সবসময়েই রাত। আর গভীরতা যদি হয় প্রায় ৫০ ফুটের (১৫ মিটার) কাছাকাছি তাহলে তো কথাই নেই! ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরা পরিবেশ। আর এই পরিবেশেই পার্টি করতে পছন্দ করে স্কুইড, অক্টোপাস জাতীয় প্রাণীরা!

স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় এই রকমই একটি পার্টিতে গিয়ে পড়েছিলেন এক মার্কিন চিত্রগ্রাহক। বিনা আমন্ত্রণে গেলেও অবশ্য স্কুইডরা তেমন কিছু মনে করেনি। পার্টি হচ্ছিল দক্ষিণপূর্ব আমেরিকার উপকূলবর্তী ‘ফ্লোরিডা কি’-র কাছে। আর যারা এই পার্টিতে নাচ-গানে মত্ত ছিল তারা হল ক্যারিবিয়ান রিফ স্কুইড। ফ্লোরিডার উপকূলে এই স্কুইডরা প্রবাল প্রাচীরের কাছাকাছি বসতি গড়ে তোলে। রংবেরঙের প্রবালের সঙ্গে মানানসই ভবে সেজে ওঠে এরা। আটটি পা ও এক জোড়া শুঁড়ের এই কেফালোপডেরা প্রবালের আনাচে কানাচে ঘুড়ে শিকার ধরে। যখনই কোনও পছন্দসই শিকার মেলে উত্তেজনায় এদের গায়ের রঙ রামধনুর সাতটি রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। শুধু তাই নয় রঙের সঙ্গে দেহের আকার ও ভঙ্গিমারও পরিবর্তন হয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঠিক যেন নাচ করছে তারা। তাই এদের নামকরণ হয়েছে ডিস্কো স্কুইড।

আদপে সেপিওটিউথিস সেপিওইডিয়া বা রিফ স্কুইডদের রঙ সবুজ ও খয়েরির মিশেলে হয়। পেটের দিকটা আবার হাল্কা রঙের। তবে শিকারি প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে ছদ্মবেশ ধরে। সারা দেহে ছোট বড় নানা আকৃতির কোষ ও ক্রোমাটোফোর নামক রঞ্জক কোষের সাহায্যে সময়ে সময়ে দেহের রঙ পরিবর্তন করে অন্যান্য বৃহত্ জলজ প্রাণীদের ধোকা দেয়। কখনও তিমি বা হাঙর জাতীয় প্রাণীরা কাছাকাছি চলে এলে এরা কালো কালির মতো রঙ ছিটিয়ে দেহের চারপাশে মেঘের মতো আস্তরণ তৈরি করে নেয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, সঙ্গী খোঁজা ও কথোপকথন চালানোর জন্যও এরা রঙের আশ্রয় নেয়। দলের সুন্দরী স্কুইডের মন পেতে নানা রঙের ছটায় তাকে আকৃষ্ট করে তোলে। আবার কখনও দলবদ্ধভাবে সাঁতার কাটার সময় ঠিক পাশের সঙ্গীকে কোনও বার্তা দিতে হলে দেহের সেই পাশের রং পরিবর্তন করে। বিপদসঙ্কেত দেওয়ার রং আবার ভিন্ন। তখন দেহের উপরের অংশ গাঢ় সোনালী এবং হাত-পা সাদা রং ধারণ করে।

কানে কানে কথা কয় ঘোড়ারা

কান দিয়ে কথা বলে ঘোড়ারা! রীতিমতো কানাকানি করে, বা কানাঘুষোও বলা যেতে পারে। আয়ত চোখের ইশারায় এরা তেমন বিশ্বাসী নয়। তাই কর্ণযুগলের ইশারাতেই পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে বেশি আগ্রহ এদের। কানের নড়াচড়াতেই একে অপরের মনের কথা সহজেই বুঝে যায় ঘোড়ারা। কান ও মনের এই অদ্ভুত যুগলবন্দি নজর কাড়ে বিজ্ঞানীদের। তাই ঘোড়াদের ব্যক্তিগত জীবনে কান পাতলেন তাঁরা।

কি শুনলেন বিজ্ঞানীরা?

নানা রকম তথ্য দিলেন সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী। কেউ বললেন একে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ক্রমাগত কান নাচাতে থাকে ঘোড়ারা। আবার কারও মতে এই কান নাচানোর অর্থ উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ। শেষমেষ বিজ্ঞানীরা ঠিক করলেন ঘোড়াদের কাছাকাছি এনে তাদের মুখ থেকেই থুড়ি কান থেকে সত্যিটা জেনে নেওয়াই ভালো। বেশ কয়েক মাস ঘোড়াদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে বিজ্ঞানীরা একটা তালিকা বানালেন। রাগী ঘোড়াদের কান সবসময় পিছনের দিকে হেলে থাকে। তা ছাড়া কোনও কারণে ভয় পেলে বা ঘুম পেলেও এদের কান পিছনের দিকে হেলে যায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ারা তাদের আরোহীদের নির্দেশ শোনার জন্যও অনেক সময় কান পিছনের দিকে করে রাখে। কৌতুহলী ঘোড়ারা কান সবসময় খাড়া করে রাখে এবং প্রয়োজনে কোনও বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়ার সময় কান নাচাতে থাকে। মনোযোগী ঘোড়াদের কান আবার সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। বিশ্রামের সময় কান তার নড়াচড়া বন্ধ করে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। শান্তশিষ্ট, ভাল ঘোড়াদের কানও একই রকমভাবে নীচের দিকে ঝুলে থাকে।

এ তো গেল কানের গল্প। এ বার পালা নাকের। নাকও সমান তালে পাল্লা দেয় কানের সঙ্গে। ফুলে ওঠা নাক ও শক্ত কান ইঙ্গিত দেয় সামনেই বিপদ। অতএব সাবধান! দুঃখী ঘোড়ারা আবার তাদের চল্লিশ পাটি দাঁত বের করে দেখায়। সোহাগী ঘোড়াদের ব্যাপারটা আবার একটু আলাদা। নাক ঘষে, লেজ নাড়িয়ে এবং আধবোজা চোখে পছন্দের সঙ্গীর কাছে প্রেম নিবেদন করে।

ভাল থাকতে অন্তঃসত্ত্বার অভিনয় জায়ান্ট পান্ডার

ঘটনাটা প্রায় দু’মাস আগের। জুলাইয়ের প্রথম দিকেই হবে। বেশ বৈঠকী ঢঙেই শুরু করলেন চিনের চেংডু সংরক্ষণ কেন্দ্রের একজন আধিকারিক। তাবড় বিজ্ঞানীরা তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত। চেংডু রিসার্চ সেন্টার জায়ান্ট পান্ডা সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত। জায়ান্ট পান্ডারা এমনিতেই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। বর্তমানে চিনে পান্ডার সংখ্যা ১৬০০-র কিছু বেশি। তার মধ্যে মাত্র ৩০০টিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানালেন ওই আধিকারিক। পান্ডারা খুবই আদুরে। বিশেষ যত্নে তাদের প্রতিপালন করতে হয়। চার থেকে আট বছরের মধ্যেই একটি স্ত্রী পান্ডা প্রজননক্ষম হয়। কিন্তু বছরে একবারই মাত্র তারা প্রসব করতে পারে। ৮০-২০০ দিন ধরে চলে এই গর্ভাবস্থা। ৩৫ বছরের জীবনকালে একটি স্ত্রী পান্ডা পাঁচ থেকে আটটি শাবকের জন্ম দিতে পারে। কারণ বেশিরভাগ শাবক জন্মের পরেই মারা যায়। তাই কোনও পান্ডা গর্ভবতী হলে তার প্রতি একটু বেশিই পক্ষপাতিত্ব দেখান সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মীরা। তখন তার জন্য থাকে ‘ভিআইপি ট্রিটমেন্ট’।

এই পর্যন্ত বলে একটু থামলেন চেংডু সংরক্ষণ কেন্দ্রের ওই আধিকারিক। বোঝা গেল এ বার আসল গল্প শুরু হবে। সারা দিনটা ভ্যাপসা গরম ছিল—শুরু করলেন আধিকারিক। অন্যান্য দিনের মতো সে দিনও পান্ডাদের পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন চেংডুর কর্মীরা। হঠাত্ই শোরগোল উঠল আই হিন গর্ভবতী। আই হিন চেংডুর সুন্দরী পান্ডাদের মধ্যে একটি। গর্ভবতী হওয়ার সব লক্ষণই স্পষ্ট আই হিনের। আগের থেকে অনেক ধীরগতিতে চলছে সে। হরমোন ক্ষরণও স্বাভাবিকের থেকে বেশি। বহুদিন পরে এমন সুন্দরী পান্ডার গর্ভবতী হওয়ার খবরে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেল চেংডু থেকে গোটা চিনে। গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব পর্যন্ত পুরো সময়টাই ক্যামেরাবন্দি থাকবে সে। এই প্রথম ‘অন লাইন’ সন্তানের জন্ম দিতে চলেছে কোনও জায়ান্ট পান্ডা। চিন প্রশাসনের তরফ থেকে আই হিনের খাতিরদারির সব রকম ব্যবস্থাই করা হল। পুরো সময়টাই সে থাকবে শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে। প্রথম দিকে খাওয়া সামান্য কমিয়ে দিলেও পরে তাকে বেশি করে কচি বাঁশ, ফল ও মিষ্টি পাঁউরুটি দেওয়া হতে থাকল। চব্বিশ ঘণ্টা তার পরিচর্যার জন্য দু’তিন জন কর্মী মজুত থাকত। এইভাবে কাটল দু’মাস। কিন্তু কোথায় কী? ভুল ভাঙল চিকিত্সকদের পরীক্ষায়। গর্ভবতী হওয়ার কোনও চিহ্নই ধরা পড়ল না আই হিনের শরীরে।

তবে?
এত দিন শুধুই অভিনয় করে গিয়েছে সে! ভাল থাকা ও সুস্বাদু খাবারের লোভে গর্ভবতী হওয়ার অভিনয় করেছে আই হিন। বিজ্ঞানীদের মতে, এত দিন ধরে গর্ভবতী পান্ডাদের বিশেষ পরিচর্যার বিষয়টি খুঁটিয়ে ‘পর্যবেক্ষণ’ করেছিল আই হিন। তাই হয়তো সামান্য লোভের বশেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। পান্ডা বলে কি তার স্বাদ-আহ্লাদ থাকতে নেই! গল্পের শেষ এখানেই। কিন্তু আই হিনের কি হল? কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তরে আধিকারিক জানালেন, ধরা পড়ে যাওয়ার পরে আবার সেই পুরনো জীবনেই ফিরতে হয়েছে তাকে। তাই এখন সে একটু মনমরা।

পর্যটন কেন্দ্র

ইতিহাস আর পার্বত্য সৌন্দর্যের মেলবন্ধন কুম্ভলগড়

রাজস্থানের মানচিত্রে রাণাদের শৌর্য ও বৈভবের স্মৃতির সঙ্গে ‘কেল্লা’ নামটি যেন একই সঙ্গে ভেসে ওঠে। ‘কুম্ভলগড়’ এমনই এক জায়গা। রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক দুর্গ। উদয়পুর থেকে গাড়িতে যাওয়া যায় কুম্ভলগড়। দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

আরাবল্লি পর্বত শ্রেণির ঘেরাটোপে লুকিয়ে থাকা এই দুর্গ পনেরো শতকে তৈরি করেন মহারাণা কুম্ভ। ১১০০ মিটার উচ্চতায় অজেয় দুর্গ রক্ষায় নির্মিত হয়েছিল সাতটি প্রবেশদ্বার সমৃদ্ধ ৩৬ কিলোমিটার দুর্গ প্রাচীর। চিনের প্রাচীরের পর এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় দীর্ঘতম কুম্ভলগড় দুর্গের প্রাচীর। এর কিছু অংশ এতই চওড়া যে এক সঙ্গে সাতটি ঘোড়া দৌড়তে পারে পাশাপাশি।

চিতোরের পর রাজস্থানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই দুর্গে দ্রষ্টব্য স্থান অনেক। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত এই দুর্গের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে দরবার হল, জেনানা ও মর্দানা মহল। আর অসংখ্য মন্দির ও উদ্যান এবং সাত শতাধিক কামান। শোনা যায় দুর্গে ৩৬০টি মন্দির ছিল। বর্তমানে অতীত স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালী মন্দির, নীলকণ্ঠ মন্দির, কুম্ভস্বামী মহাদেব প্রভৃতি মন্দির। মহারাণা প্রতাপের জন্মের সঙ্গেও জড়িত এই দুর্গ। ইতিহাসে ধাত্রী পান্নার যে কাহিনি শোনা যায় তা এই দুর্গেরই ঘটনা।

কুম্ভলগড়ের অনন্য আকর্ষণ এর অভয়ারণ্য। ৫৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জঙ্গলে চিতা, নেকড়ে, হরিণ, ভল্লুক, অ্যান্টিলোপ ও নানা রকমের পাখির দেখা মেলে। ঘোড়া, জিপ বা পায়ে হেঁটে ঘুরে নেওয়া যায় আরাবল্লী পর্বতমালার বিস্তৃত অংশ জুড়ে সবুজ ভরা এই বন্য প্রকৃতি।

মনভলানো মংলাজোড়ি

ওড়িশার বিখ্যাত হ্রদ চিলিকা। দূরে ছোট টিলা। টিলার কোলে আদিবাসী জেলেদের গ্রাম আর বিস্তীর্ণ জলাভূমি-সব মিলিয়ে যেন পটে আঁকা ছবি। আর এই ছবির রেখাচিত্রে আরও রং দিয়েছে কোথাও ঘন নলখাগড়ার বন, কোথাও হোগলার সবুজ বন— এই নিয়েই চিলিকার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পাখিদের স্বর্গরাজ্য মংলাজোড়ি। বালুগাঁও থেকে গাড়ি বা অটোতে যাওয়া যায় মংলাজোড়ি। দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।

হ্রদের কোথাও হাঁটু জল, আবার কোথাও তা গলা পর্যন্ত। ছোট্ট নৌকায় বসে পৌঁছে যাওয়া যায় মংলাজোড়ি। সরু খাঁড়িতে নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়ালে চোখে পড়বে নানা ধরনের পাখির নানা কর্মকাণ্ড। এই অসাধারণ জলভ্রমণে দেখে নেওয়া যায়-হুইসকার্ড টার্ন, ওপেন বিল্ড স্টর্ক, ব্ল্যাক টেইল্ড গডউইট, ব্রোঞ্জ উইঙ্গড জাকানা, শামুকখোল, শোভেলার, ফেজেন্ট, টেইল্ড জাকানা, সোয়ান আর গাল-ইত্যাদি নানা রকমের দেশি বিদেশি পাখি। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখিরা শীতে এখানে এসে বাসা বাঁধে। যারা একই সঙ্গে প্রকৃতি আর পক্ষী প্রেমিক তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা এই মংলাজোড়ি। উপরি পাওনা হিসেবে দেখে নেওয়া যায় কাছাকাছি গ্রামের পতিত পাবন, গুপ্তেশ্বর, মা মঙ্গলা, মা বালি মাঝি প্রভৃতি ঐতিহ্যময় মন্দিরগুলি।

• দূরের নয় কাছের দারুচিনি দ্বীপ

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে বঙ্গোপসাগরের একটি ছোট্ট দ্বীপ দারুচিনি। বাংলাদেশের কক্সবাজার তার বিস্তৃত ও বৃহত্তম সমুদ্র বেলাভূমির জন্য বিখ্যাত। এই জেলার উপজেলা টেকনাফ থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোলে দারুচিনি দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এর নাম দারুচিনি হলেও, ব্রিটিশ আমলে ‘সেন্ট মার্টিন্স’ নামেই পরিচিত ছিল। ইতিহাস বলছে, এক দল আরব ব্যবসায়ী প্রথম এই দ্বীপে পা রেখেছিল। তারা এর নাম দেয় ‘জাজিরা’। তারাই প্রথম এই নোনা জলের দ্বীপে মিষ্টি জলের সন্ধান পান। তার পর ব্রিটিশ শাসকরা এই দ্বীপে তাদের শাসন কায়েম করে। যদিও স্থানীয় লোক এই দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামেই ডাকেন। মাত্র ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত এই দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বে আরাকান পর্বতমালা ঘেরা মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা হলেও বেশ কয়েক বছর আগেও তা ছিল পর্যটকশূন্য। কিন্তু এখন যথেষ্ট পর্যটক সমাগম এখানকার ক্ষুদ্র জনবসতিকেও নানা ভাবে উৎসাহিত করছে দ্বীপটিকে আরও সাজিয়ে তুলতে।

থাইল্যান্ডের এলিফ্যান্ট পোলো

আপনি যদি ক্রীড়াপ্রেমী হন আর যদি ভিন্ন স্বাদের খেলার আনন্দ নিতে চান তাহলে কিংস কাপ এলিফ্যান্ট পোলো আপনাকে অবশ্যই রোমাঞ্চিত করবে। প্রতি বছর অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে তাইল্যান্ডের হুয়া হিন-এ মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় এলিফ্যান্ট পোলো। এলিফ্যান্ট পোলোর আন্তর্জাতিক সংস্থার সদর দফতর নেপালের চিতবন জাতীয় উদ্যানে। ১৯৮২ সালে সংস্থাটি এলিফ্যান্ট পোলোর নিয়মাবলি ঠিক করে। রাজস্থানের জয়পুরেও এলিফ্যান্ট পোলো জাঁকজমকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এই খেলা নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং তাইল্যান্ডে বিশেষ জনপ্রিয়।

পোলো খেলার সঙ্গে এই এলিফ্যান্ট পোলোর খেলার নিয়মে আংশিক তফাত্ রয়েছে। যেমন এখানে প্রত্যেক দলে তিন জন করে খেলোয়াড় থাকেন। খেলা যেহেতু হাতির পিঠে চড়ে, তাই দলপ্রতি তিন জনের বেশি খেলোয়াড় থাকা সম্ভব নয়। খেলার মাঠটি ১০০ মিটার লম্বা এবং ৬০ মিটার চওড়া। এই খেলাতেও ম্যালে(পোলো খেলার হাতুড়ির মতো দেখতে লাঠি বিশেষ)ব্যবহার করা হয়। ম্যালেটি লম্বায় ২ মিটার। খেলোয়াড় যদি মহিলা হন, তবে শট মারার সময় তিনি দু’হাতে ম্যালেটি ধরতে পারেন। পুরুষ খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে ম্যালেটি এক হাতেই ধরার নিয়ম। তবে পোলো বলের মাপ এখানেও অপরিবর্তিত থাকে। এলিফ্যান্ট পোলোতে হাতির পিঠে খেলোয়াড় ছাড়াও হাতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একজন মাহুত থাকে। ফি বছর হুয়া হিন-এর সূর্যথাই সেনা ছাউনির মাঠে রাজকীয় আয়োজনের সঙ্গে আসর বসে এলিফ্যান্ট পোলোর। ভিন্ন ধরনের এই পোলোর আনন্দ উপভোগ করতে এখানে দেশ বিদেশ থাকে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান। অংশগ্রহণ করেন ভিন্ দেশের খেলোয়াড়রাও। ভিন্ন স্বাদের এই পোলোর আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সর্বসাধারণের অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা করেন আয়োজকরা।

ফুকেত নিরামিষ উত্সব

চিনের একটি বর্ণময় উত্সবের নাম ফুকেত নিরামিষ উত্সব। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ৯-১০ দিন ধরে চলে এই উত্সব। চিনের মানুষজনের বিশ্বাস বছরের এই সময় মাছ, মাংস এবং বিভিন্ন উত্তেজক পদার্থ বা আমিষ খাবারের থেকে বিরত থাকতে পারলে ভাল স্বাস্থ্য এবং মনে শান্তি আসে । এই উত্সবের সূচনা সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। কথিত, উনিশ শতকে ফুকেত দ্বীপে চিনের এক নাট্যদল তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে আসে। এখানে এসে ওই দলের সদস্যরা সকলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। নিজেদের আরোগ্য কামনায় তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে সকলে মিলে নিরামিষ খাবার খেয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করবেন। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ঈশ্বরের আরাধনা করে তাঁরা একে একে সকলে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সুস্থ হয়ে আনন্দে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে উত্সবে মেতে ওঠেন তাঁরা। সম্ভবত তার পর থেকেই শুরু এই ফুকেত নিরামিষ উত্সবের।

ফুকেত নিরামিষ উত্সবে চিনের পথে পথে বর্ণময় শোভাযাত্রায় যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। নানা রঙের পোশাক আর নিশানে সেজে ওঠে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া মানুষজন নানা আচার আচরণের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে থাকেন। ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য ভক্তরা নিজেদের শরীরে আঘাত করেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেন নিজেদের। ২০১১ সালে ফুকেত নিরামিষ উত্সবের শোভাযাত্রায় এইভাবে প্রায় ৭৪ জন গুরুতর আহত এবং একজনের মৃত্যু হয়।

তবে সব কষ্ট ভুলে ফি বছর হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন ফুকেত নিরামিষ উত্সবে।

পরিষেবা

কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিদর্শনে সিকিমে কপ্টার পরিষেবা

মাত্র ১৫ মিনিটের সফর। এই অল্প সময়েই উপভোগ করা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহময়ী রূপকে চাক্ষুস করতে। তাও আবার আকাশপথে! সম্প্রতি সেই সুযোগ আনল সিকিম সরকার। পনেরো মিনিটের কপ্টার সফরে দেখে নেওয়া যাবে ২৮,১৬০ ফুট উঁচু বিশ্বের তৃতীয় এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। গ্যাংটক থেকে এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এত দিন পাহাড়প্রেমী পর্যটকরা কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহময়ী দৃশ্য দূর থেকে দেখেই তৃপ্ত হতেন। কিন্তু সিকিম সরকারের এই পরিষেবা তাঁদের কাছে যেন স্বর্গ পাওয়ার মতো! প্রতি বছর ৮ লক্ষেরও বেশি পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসেন। নতুন এই হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হওয়ায় সেই সংখ্যাটা ১৫ লক্ষ পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। সারা বছর ধরেই এই কপ্টার পরিষেবা পাওয়া যাবে বলে রাজ্য পর্যটন দফতর সূত্রে খবর।

মুম্বই থেকে ‘সি-প্লেন’ পরিষেবা

মহারাষ্ট্র পর্যটন উন্নয়ন নিগম (এমটিডিসি) ও মেরিটাইম এনার্জি হেলি এয়ার সার্ভিস যৌথ উদ্যোগে নিয়ে এল ‘সি-প্লেন’ বা সামুদ্রিক বিমান পরিষেবা। সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন যে সব পর্যটন কেন্দ্রে বিমানবন্দর নেই, সেই জায়গায় নির্বিঘ্নে ও কম সময়ে পৌছে দেওয়ার জন্যে শুরু হয়েছে এই পরিষেবা। সেসনা ২০৬ ও ২০৮ বিমানগুলিকে এই পরিষেবায় নিযুক্ত করা হয়েছে। ৪-৯ জন যাত্রী এই বিমানগুলিতে ভ্রমণ করতে পারবেন।

এই সামুদ্রিক বিমান পরিষেবা ভারতে প্রথম। প্রথম দফায় পরিষেবা শুরু হবে রাজ্যের অ্যাম্বে ভ্যালি থেকে। এ ছাড়াও যে সব জায়গায় যাবে তা হল— গঙ্গাপুর বাঁধ (নাসিক), মুলা বাঁধ, পওনা বাঁধ, ভারাসগাঁও বাঁধ, ধুম বাঁধ। দ্বিতীয় দফায় এই পরিষেবা চালু হবে মুম্বইয়ের সঙ্গে কোঙ্কন উপকূলের পর্যটন স্থানগুলিকে জুড়তে। এর মধ্যে রয়েছে— গণপতিফুলে, হরিহেশ্বর, টার্কার্লি, মুরুদ জানজিরা, মারাঠওয়াড়া ও বিদর্ভের মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলি।

সংবাদ সংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE